এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। রহস্যময় দুর্গ প্রাচীন শহর ফুংহুয়াং
২। চীনে ঘুরে আসা একজন ভ্রমণকারীর সাক্ষাৎকার
৩ । চীনের টেরাকোটা আর্মি
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। রহস্যময় দুর্গ প্রাচীন শহর ফুংহুয়াং
মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের সংরক্ষিত প্রাচীন শহর ফংহুয়াং। চীনা ভাষায় "ফিনিক্স" এর অর্থ, ফংহুয়াং। প্রাচীন এ শহরটি মিয়াও ও থুচিয়া জাতিগোষ্ঠীর আবাসস্থল। চীনের হুনান প্রদেশের এই শহর ২০০৮ সালের ২৮ মার্চ অন্তর্ভূক্ত হয় ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়।
পুরানো এই শহরটি গড়ে উঠেছিল ১৭০৪ সালে। ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মৌলিকতা এবং আদিম সরলতা বজায় রেখেছে এ শহরটি।
শহরটিকে 'চীনের সবচেয়ে সুন্দর শহর' বলে প্রশংসা করেছেন নিউজিল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী লেখক রিউই অ্যালি।
এ শহরের প্রাচীন ধারার ঘর-বাড়ি, আড়ম্বরপূর্ণ সেতু ও মন্দির দেখতে ভিড় বয়সের দর্শনার্থীরা। এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে তা হল নদীর তীরে নির্মিত বহুতল আবাসিক ভবনগুলো।
থুচিয়া জাতিগোষ্ঠীর এ সাধারণ ঘরগুলোকে বলা হয় টিয়াওচিয়াওলো। দূর থেকে দেখলে কাঠের বাড়িগুলোকে মনে হয় নদীর বুকে ভেসে আছে।
থুওতচিয়াং নদী কয়েক দশক ধরে স্থানীয় জনগণের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ আধুনিক চীনা সাহিত্যের বহুমুখী লেখক শেন কংওয়েনের পুরানো বাসভবন। এই লেখক তার উপন্যাস বিয়ান চেং-এ তুলে ধরেছে পশ্চিম হুনানের বাসিন্দাদের জীবনচিত্র।
২। সাক্ষাৎকার
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানের সাক্ষাৎকার পর্বে এবার কথা হয় বাংলাদেশের গাজীপুরে অবস্থিত চীনের কৃষি শিল্প প্রতিষ্ঠান নিউ হোপ ফীড মিল বাংলাদেশ লিমিটেডে কর্মরত বাংলাদেশী ইফতেখার আলম অর্পণ। যিনি এই প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ বিভাগের নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন।
ইফতেখার আলম অর্পণ
চীনে প্রায় দুই বছরের মত থেকেছেন ইফতেখার আলম অর্পণ। তিনি ঘুরেছেন চীনের বিভিন্ন জায়গায়। তিনি জানান, আমি চিয়াংসু প্রদেশের থাইচো সিটিতে ছিলাম। সেখানে প্রচুর ঘুরার সুযোগ হয়েছে। বন্ধুদের সাথে প্রতি সপ্তাহেই ঘুরতে যেতাম”।
ইফতেখার আলম অর্পণ ও তার বন্ধুরা
“ থাইচো ওল্ড সিটি ও নানচিং ওল্ড সিটিতে ঘুরেছি। নানচিং ওল্ড সিটির মেলা ঘুরেছি। এসব জায়গায় আমার ভালো লেগেছে। এছাড়া ঘুরেছি চিয়াংসু প্রদেশেরই নানতংয়ের গ্রেট ওয়ালে। চীন এতো বড় যে দুই বছরেরও আমি একটা প্রদেশই দেখে শেষ করতে পারিনি”
ইফতেখার আলম অর্পণ
যারা চীন ঘুরতে যেতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে অর্পণ বলেন, “ চীন খুবই সুন্দর একটি দেশ। যে যাবে তারই খুব ভালো লাগবে। আর চীনে পড়াশোনা করতে যেতে চায় তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো সুযোগ হবে। তাদের শিক্ষাব্যবস্থা অনেক সমৃদ্ধ এবং সেখানকার পরিবেশ পড়াশোনা করার জন্য উত্তম”।
৩ । চীনের টেরাকোটা আর্মি
এ যেন আলাদা একটা সাম্রাজ্য। বিশাল তার সেনাবাহিনী। দুর্গের দরজা আগলে যেন পাহারা দিয়ে যাচ্ছে দিনরাত , বছরের পর বছর। যে বাহিনীর বেশিরভাগটাই মাটির বা ব্রোঞ্জের। বিশ্বকে বিস্ময়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল চীনের এই টেরাকোটা আর্মি।
১৯৭৪ সালে শানসি প্রদেশের সিআন শহরের প্রান্তে সেখানকার কৃষকেরা খনন কাজের মাধ্যমে যে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি উন্মোচন করে তা নিঃসন্দেহে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার- টেরাকোটা আর্মি।
প্রায় ২২০০ বছরের প্রাচীন ভূগর্ভস্থ সমাধি এই টেরাকোটা আর্মি। এটি চীনের প্রথম সম্রাট ছিন শি হুয়াং এর সমাধি। আসলে এই টেরাকোটা আর্মি জীবন্ত কোন সেনাবাহিনী নয়। সম্রাট ছিন শি হুয়াংয়ের মৃত্যুর পর স্থানীয় লিনথং জেলার কৃষকেরা সম্রাটের সম্মানার্থে এসব পোড়ামাটির সেনাবাহিনী তৈরি করেন।
এখানে মানুষের মত দেখতে ৮০০০ সেনার মূর্তি আছে যেগুলো প্রায় মানুষের মতোই লম্বা। এই মূর্তিগুলোর একটির সাথে অন্যটির চেহারার মিল নেই। তাই নির্মাণের দক্ষতা দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। সেনার পাশাপাশি আরও রয়েছে ৫২০টি ঘোড়া, ১০০টির মত রথ এবং বেশকিছু বেসামরিক লোকজন।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী