জানুয়ারি ৩০: ৫৫ বছর আগে টেনেসির মেমফিসে আফ্রিকান-আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যার ঘটনা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। ৫৫ বছর পর একই শহরে ২৯ বছর বয়সী আফ্রিকান-আমেরিকান টাইর নিকোলসকে পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তা পিটিয়ে হত্যা করে। এতে দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
২৭ ও ২৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শহরে বড় বড় প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। মার্কিন গণমাধ্যম উদ্বিগ্ন হয় যে, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনার মতো আবারও দেশজুড়ে দাঙ্গা দেখা দিতে পারে।
এ ঘটনায় হোয়াইট হাউসও বেশ উত্তেজনাপূর্ণ সময় কাটিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ১৬টি শহরের মেয়রের সঙ্গে জরুরি ফোনালাপ করেন। সম্ভাব্য বিক্ষোভ দমনে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য রাজ্য ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়।
আসলে মার্কিন পুলিশ আফ্রিকান-আমেরিকানদের বারবার ‘বর্ণবাদী আচরণ’ করে। যা মার্কিন গণতন্ত্রের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বর্ণবাদের প্রকাশ ঘটায়। মার্কিন ‘ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স’ শীর্ষক ওয়েবসাইটের পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০২২ সালে মার্কিন পুলিশ মোট ১১৮৬জনকে হত্যা করেছে; এর মধ্যে আফ্রিকান-আমেরিকান মানুষ ২৬ শতাংশ। কিন্তু আফ্রিকান আমেরিকানরা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ। পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আফ্রিকান আমেরিকানদের সহিংস আইন প্রয়োগের অভিজ্ঞতা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় ২.৯ গুণ বেড়েছে।
২০২২ সালের নভেম্বরে অলাভজনক সংস্থা ‘পিপল ফর দ্য আমেরিকান ওয়েই’-এর প্রকাশিত ‘আমেরিকায় পুলিশিং ও কালো বর্ণের জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পুলিশের সহিংসতার ইতিহাস অনুধাবন’ শীর্ষক প্রবন্ধে একটি গভীর বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়। দাসপ্রথার যুগ থেকে শুরু করে সাদা আধিপত্যবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং নাগরিক অধিকার যুগে 'হোয়াইট ফিয়ার' আবির্ভূত হয়েছে। এসব শক্তিশালী নেতিবাচক প্রভাব মার্কিন পুলিশের সহিংসতার সংস্কৃতি তৈরি করেছে। এই কারণে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, মূলে বর্ণবাদ থাকা একটি সংস্থার সংস্কার করা অসম্ভব। বর্ণবাদ দীর্ঘদিন ধরে গভীরভাবে আমেরিকান পুলিশ ব্যবস্থার রন্ধ্রে পৌঁছে গেছে।
পাশাপাশি, মার্কিন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মেরুকরণ পুলিশ ব্যবস্থার সংস্কার আরও কঠিন করে তুলেছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ‘জর্জ ফ্লয়েড জাস্টিস ইন পুলিশিং অ্যাক্ট’ গৃহীত হয়। তবে, ২০২২ সালের মে মাসে বাইডেন সরকারের পুলিশ আইন প্রয়োগকারী আচরণ সংশোধন করার জন্য একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এতে আইনের শক্তি ব্যাপকভাবে হ্রাস করা হয় এবং প্রভাবহীন হয়ে পড়ে।
এ ছাড়া, মার্কিন বন্দুক সংস্কৃতি ও পুলিশি সহিংসতা তুলনামূলকভাবে একটি দুষ্ট চক্র গঠন করে। সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত একটি হাল্কা অস্ত্র তদন্তকারী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৯৩ মিলিয়ন ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বন্দুক রয়েছে। যা মার্কিন লোকসংখ্যার চেয়েও বেশি! এটি মার্কিন পুলিশ আইন প্রয়োগের বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি এক ভাষণে স্বীকার করেন যে- মার্টিন লুথার কিংয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় নি। তিনি মার্কিন চেতনার জন্য সবাইকে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু, মার্কিন চেতনা আসলে কোথায়?
(ছাই/তৌহিদ)