চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব
2023-01-30 19:44:15

তৃতীয় পর্বে যা থাকছে:

*মহাকাশেই কাটলো তাদের বসন্ত উৎসব

*৪ ন্যানোমিটার চিপের প্যাকেজিংয়ে চীনা কোম্পানি জেসিইটি’র সাফল্য

*চ্যাটজিপিটিতে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে মাইক্রোসফট

 

 

মহাকাশেই কাটলো তাদের বসন্ত উৎসব

পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ওপরে মহাকাশে থেকেই বসন্ত বরণের আনন্দ নিজের পরিবারের সাথে ভাগ করে নিলেন চীনের শেনচৌ ফিফটিন মহাকাশযানের তিন মহাকাশচারী। তাদের নাম ফেই চুনলং, তেং ছিংমিং ও ছাং লু।

চীন তখন বিভোর বসন্ত উৎসব উদযাপনের আমেজে। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে দেশজুড়ে তখন চলছে নানান আয়োজন। ঠিক সে সময় চীনের থিয়ানকং মহাকাশকেন্দ্রে নিজ পরিবার-পরিজন ছাড়াই বসন্ত উৎসব পালন করলেন তিন মহাকাশচারী।

সেখানে তারাই তাদের পরিবার, একসাথে মিলে তৈরি করেছেন উৎসব উদযাপনে প্রয়োজনীয় সকল অনুষঙ্গ। পৃথিবীর মানুষের উদ্দেশে পাঠিয়েছেন ভিডিও বার্তাও।

পৃথিবীতে থাকলে যেমন নতুন কাপড় পড়ে, ডাম্পলিং খেয়ে ও একে অন্যের জন্য দোয়া করে দিনটি কাটাতেন তারা, মহাশূন্যেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পড়েছেন নতুন কাপড়, খেয়েছেন ডাম্পলিংও। আবার তিনজন মিলেই মহাকাশে স্পেস স্টেশনকে সাজিয়েছেন নিজেদের মতো করে।  

ব্যস্ত সময়ের মাঝেও ৩ দিন ছুটি পেয়েছিলেন তারা। বসন্ত উৎসবের সন্ধ্যাটি কাটিয়েছেন তারা তাদের পরিবারের সাথে ভিডিও কলে কথা বলে। রাত কেটেছে চায়না মিডিয়া গ্রুপের ২০২৩ সালের বসন্ত উৎসবের গালা অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার দেখে। শূন্যে থেকেও চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই অনুষ্ঠান মিস করতে চাননি তারা।

এস্ট্রোনট সেন্টার অব চায়নার কর্মকর্তা ছেন চুনেই বলেন ছুটি শেষে এই তিন মহাকাশচারী মানব শরীরে স্পেস যাত্রার প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা চালাবে। তিনি আরো বলেন, “মহাকাশচারীরা ছুটির প্রথম দুদিন উৎসব পালনে ব্যস্ত ছিলেন। পরিবারের সাথে ভার্চুয়ালী সময় কাটিয়েছেন। এরপর জানুয়ারির ২৪ তারিখ তারা মানব শরীরে স্পেস যাত্রার প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছে। এছাড়াও পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দৈনিক কার্যকলাপও চলছে এখন। পৃথিবীতে আমাদের টীমও সদা প্রস্তুত আছে তাদের যেকোনো প্রকার কাজে সহায়তা করবার জন্য।“

বসন্ত উৎসবের শুরুর দিনের সন্ধ্যায় চীনের ঠিক ওপর দিয়েই উড়ে যাচ্ছিলো চীনা মহাকাশ স্টেশনটি। তখন নিজ জন্মভূমির মানুষদের বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা জানান তিন মহাকাশচারী।

এক ভিডিও বার্তায় দেখা যায় নীল জাম্পস্যুট পরে নিজ হাতে আঁকা ক্যালিগ্রাফি দেখিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তারা। তাদের হাতে ছিলো চাইনিজ ক্যারেক্টার ‘ফু-এর ক্যালিগ্রাফির স্টীকার, যার মানে সৌভাগ্য। ঐ ভিডিওবার্তায় এক মহাকাশচারী তাদের সকলের পক্ষ থেকে পৃথিবীবাসীর জন্য সুখ ও শান্তি কামনা করেন।  তিনি বলেন, “আমরা যখন কথা বলছি তখন আমাদের জন্মভূমির ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে চীনা মহাকাশকেন্দ্রটি। এই মূহূর্তে হয়তো আপনাদের অনেকেই পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছেন বা এখনো বাড়ির পথে আছেন। তবে আমি বিশ্বাস করি আপনাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা জন্মভূমি ও নিজ দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ব থেকে উৎসবের দিনেও নিজ কর্মস্থলেই কাজ করছেন। নতুন বছর আপনাদের সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি এবং আনন্দ।“

শেনচৌ ফিফটিন তাদের মহাকাশকেন্দ্র নির্মাণকাজের শেষ ধাপ সম্পন্ন করে এখন এপ্লিকেশন এবং উন্নয়ন কাজের প্রথম ধাপে আছে। শেনচৌ ফিফটিন ছ’মাসের জন্য এর কক্ষপথে অবস্থান নেয় গতবছরের নভেম্বরের ২৯ তারিখ।

এই ছয় মাসে ৪০টিরও বেশি স্পেস মেডিসিন ও মহাকাশ প্রযুক্তি সম্পর্কিত পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা আছে মহাকাশযানটির।

 

৪ ন্যানোমিটার চিপের প্যাকেজিংয়ে চীনা কোম্পানি জেসিইটি’র সাফল্য

৪ ন্যানোমিটার চিপের প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে চীন। চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান জেসিইটি সম্প্রতি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী চিপ প্যাকেজিং সেবা দিতে যুক্ত করেছে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি। ফলে এ খাতে কমছে বিপুল অংকের খরচ।

পরিসংখ্যান বলছে, আগামী ২ বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মাইক্রোচিপের ট্রান্সিসটর তৈরির সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। কিন্তু কম্পিউটার প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ফাইভ-জি প্রযুক্তি, স্মার্ট অটোমোবাইল, ক্লাউডসহ প্রযুক্তির নানা ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক যে দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়েনি প্যাকেজিংয়ের মতো কার্যক্রম।

চিপ শিল্পে প্যাকেজিংয়ের মতো একটি ব্যাক-এন্ড প্রযুক্তির বড় অভাব পূরণ করতেই এগিয়ে আসে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান জেসিইটি।

চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক উ চিয়াংসিং জানান, সময়ের সঙ্গে চিপ প্যাকেজিংয়ে যে খরচ বাড়ছিলো তা গোটা খাতকেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে যাচ্ছিলো। এমন প্রেক্ষাপটে জেসিইটির পণ্য চেপলেট, কম খরচে উন্নত মানের সেবা দিতে সক্ষম।

জেসিইটি’র পণ্য এরইমধ্যে দেশটির চিপ প্যাকেজিং শিল্পে এক বিরাট পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যে কঠোর পরিশ্রম করছে এটি তারই প্রমাণ বলে মনে করেন এখানের বিশ্লেষকরা।

প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, সেমিকন্ডক্টর প্রস্তুত ও ডিজাইনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এই প্যাকেজিং। প্যাকেজিং প্রক্রিয়া বড় পরিসরে ভূমিকা পালন করে এই শিল্পের সুরক্ষা, আধিপত্য ও কার্যক্রমে।

জেসিইটি বলছে, বিদেশী গ্রাহকদের জন্য ৪ ন্যানোমিটার চিপের প্যাকেজিংও এখন তারা করতে সক্ষম। একইসঙ্গে সর্বোচ্চ ১৫শ’ বর্গ মিলিমিটার আকারের চিপের প্যাকেজিং করা সম্ভব তাদের পক্ষে।

চিপলেট এমন একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ব্লক বা আইসি ব্লককে অন্য আইসিগুলোর সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে একটি জটিল বা কমপ্লেক্স চিপ তৈরি করা যায়।

 

চ্যাটজিপিটিতে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে মাইক্রোসফট

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় চ্যাটজিপিটির নির্মাতার সঙ্গে মাইক্রোসফটের চুক্তি হয়েছে। ক’দিন আগেই মাইক্রোসফট ঘোষণা করে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে গবেষণার জন্য ওপেনএআইয়ের সঙ্গে তাদের কয়েক বিলিয়ন ডলারের দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের চুক্তি হয়েছে।  

ওপেন এআই হলো জনপ্রিয় ইমেজ জেনারেশন টুল ডাল-ই এবং চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির স্রষ্টা। ইলন মাস্ক এবং স্যাম অল্টম্যানের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে ২০১৯ সালে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে মাইক্রোসফ্ট।

গত সপ্তাহে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা জানান, এআই খাতে অগ্রগতির সঙ্গে কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রেও পরবর্তী বড় ঢেউ আসছে।

অংশীদারিত্বের ঘোষণা দিয়ে সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা মনে করে এআই 'ব্যক্তিগত কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ডিভাইস এবং ক্লাউডের মাত্রায় প্রভাব ফেলবে।'

সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওপেন এআই-এর ইন্টারনেটে সাড়া ফেলে দেওয়া চ্যাটবটটির নাম চ্যাটজিপিটি। এখানে জিপিটি-এর পূর্ণ রূপ জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফরমার।

উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির চ্যাটবটটি একজন ভার্চুয়াল বন্ধুর মতোই মানুষের সঙ্গে কথা চালিয়ে যেতে সক্ষম। এর সম্ভাবনা অত্যন্ত ব্যাপক।

যে কেউ চাইলে চ্যাটজিপিটির সাথে সাধারণ কথোপকথন চালিয়ে যেতে পারবে। কোনো সমস্যার সমাধান জানতে চাইলে উত্তর দিবে সে। কঠিন কঠিন বৈজ্ঞানিক বিষয়েও জানা যাবে এখান থেকে।

মজার কোনো কবিতা লিখতে বললে কবিতাও লিখতে পারে চ্যাটজিপিটি। ধারণা দিয়ে দিলে একটি গল্পও রচনা করে দিতে পারবে সে। এ ছাড়া পাইথনের কোনো কোড ঠিক করা থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট কোনো স্টাইলে লেখা, বড় কোনো টেক্সট সংক্ষিপ্ত করা থেকে বিস্তৃত পরিসরের কাজ করতে পারে সে।

ওপেন এআই-এর মতে, পর পর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, এর ভুল স্বীকার করা, ভুল কিছুকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং অনুপযুক্ত বিভিন্ন অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতেও সক্ষম এই চ্যাটবটটি।

ইতোমধ্যেই চ্যাটজিপিটি বিশ্বজুড়ে ব্যাবহারকারীদের চমকে দিয়েছে। চ্যাটবটটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার এক সপ্তাহেরও কম সময়ে এক মিলিয়ন ব্যবহারকারী অতিক্রম করেছে। যা আরও বেশি বিনিয়োগকারীকে জেনারেটিভ এআই-এর দিকে আকৃষ্ট করছে।

 

প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন , সাজিদ রাজু

সম্পাদনা: সাজিদ রাজু