আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আকাশ এবং তৌহিদ।

আকাশ: শুভ চীনা নববর্ষ! 

তৌহিদ: শুভ চীনা নববর্ষ! 

আকাশ: প্রিয় বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানেও আমরা আগের মতোই চীনের বসন্ত উৎসবের কথা বলবো। সান সি এবং ছু ই, মানে চীনা নববর্ষের আগের দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন। এ দুই দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারপর হচ্ছে ফো উ, মানে নববর্ষের পঞ্চম দিন।

তৌহিদ: ফো উ, এ দিন কী কী করেন?

আকাশ: এই দিনের পর উৎসব ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যায়। সবকিছু সান সি’র আগের দিনের মতো আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। এদিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমরা সান সি, ছু ই’র মতো আবার এদিন চিয়াও য্যি তৈরি করে খাই এবং আতশবাজি ফোটাই।

তৌহিদ: আবার চিয়াও য্যি? তাহলে আমরা ‘মাছে ভাতে বাঙালি’র মতো বলতে পারি- চিয়াও য্যি আর চিয়াও য্যি মানে- চীনা মানুষ। 

আকাশ: হাহা! আমি ভাবছি, এ কথা অন্তত চীনের উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য ঠিক। 

তৌহিদ: আচ্ছা, তাহলে ফো উ’র পর বসন্ত উৎসব শেষ হয়ে যায়?

আকাশ: ফো উ’র পর বসন্ত উৎসব প্রায় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু নববর্ষের ১৫তম দিন আবারও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস আসে। বলা যায়, সেই দিনের পর বসন্ত উৎসব শেষ হয়। দিবসটির নাম হচ্ছে ইয়ুয়ান শিয়াও চিয়ে, অর্থাত্ লণ্ঠন উৎসব।

তৌহিদ: লণ্ঠন উৎসব? এই নাম আমার পরিচিত।

আকাশ: হ্যাঁ। এ দিবসের দু’টি রীতিনীতি আছে। একটি হচ্ছে ইয়ান সিয়াও খাওয়া। 

তৌহিদ: ইয়ান সিয়াও, মানে ইয়ান সিয়াও চিয়ের সেই ইয়ান সিয়াও। তাইনা?

আকাশ: হ্যাঁ। আপনি ঠিকই বলেছেন। চিয়ে মানে দিবস, ইয়ান সিয়াও চিয়ে মানে ইয়ান সিয়াও দিবস। ইয়ান সিয়াও হচ্ছে একটি খাবার। এ খাবারটি গোলাকার হয়ে থাকে। এটি চালের গুড়া দিয়ে তৈরি করা হয়। এর ভেতরে মিষ্টি জাতীয় খাবার দেওয়া থাকে। এটা সিদ্ধ করে খেতে হয়। অনেক মজার। আপনি এটা খেয়েছেন? 

তৌহিদ: না। আমি খাইনি। তবে সুপার শপে বিক্রি করতে দেখেছি।

আকাশ: বন্ধুরা, আমি তাহলে আপনাদেরকে ইয়ান সিয়াও সম্পর্কে বলছি।.... এদিন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে খেতে হয়। ইয়ান সিয়াও গোলাকার, মানে পরিবারের সবাই একসাথে, অর্থাত একত্র হত্তয়া। যদি পরিবারের সবাই একসাথে হয়, তাহলে জীবন সুখী ও সমৃদ্ধ হয়, তাইনা?

তৌহিদ: হ্যাঁ, এখন আমি বুঝতে পেরেছি। তাহলে ওই দিন আমিও ইয়ান সিয়াও খাবো।

আকাশ: ভাই, বাংলাদেশে ইয়ান সিও’র মত খাবার  আছে কি?

তৌহিদ:.... ইয়ান  সিয়াও খাওয়া ছাড়া লণ্ঠন দিবসে আর কী কী করা হয়?

আকাশ: ভাই, এদিন আমরা লণ্ঠনের দৃশ্য উপভোগ করি। আমার জন্মস্থান হান তানের সবচেয়ে প্রধান রাস্তা হচ্ছে চোং হুয়া স্ট্রিট। এদিন হান তানের সব প্রতিষ্ঠান বড় বড় লণ্ঠন বা দলীয় লণ্ঠন তৈরি করা হয় এবং চোং হুয়া স্ট্রিটের দু’পাশে একের পর এক বিভিন্ন ধরনের লণ্ঠন ঝুলিয়ে রাখা হয়। ইয়ান সিয়াও দিবসে সন্ধ্যার সময় আমি এবং মা একসাথে এ লণ্ঠন প্রদর্শনী দেখতাম। প্রচুর মানুষ এ লণ্ঠন প্রদর্শনী দেখত। দেখে মনে হয়, হয়তো হান তান শহরের সব মানুষ এদিন সন্ধ্যায় একসাথে চোং হুয়া স্ট্রিটে গিয়ে একটি পার্টিতে অংশ নিচ্ছেন। আমি এবং মা অনেক দূর হাঁটাহাঁটি করে এ প্রদর্শনী দেখি। এটা অনেক ক্লান্তির হলেও সেই স্মৃতি কখনোই ভোলা যায় না। ভাই, বাংলাদেশের লণ্ঠন উপভোগ সম্পর্কে কোন দিবস বা বিশেষ রীতিনীতি আছে কি?

তৌহিদ:...

তৌহিদ: পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হলো মা-বাবা। আমার দৃষ্টিতে বসন্ত উৎসবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থ হচ্ছে মা-বাবা ও পরিবার। …..

আকাশ: বন্ধুরা, আমরা এ কয়েক সপ্তাহ ধারাবাহিকভাবে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব অর্থাত্ বসন্ত উৎসব নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলেছি। তৌহিদ ভাই ঠিক বলেছেন, বসন্ত উৎসবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থ হচ্ছে মা-বাবা এবং পরিবার। আমরা আবারও কামনা করি, নতুন বছরে সবার মা-বাবা,পরিবার, আত্মীয়স্বজন ,বন্ধু,সবাই সুস্থ থাকবেন, আনন্দে থাকবেন, সুখে থাকবেন, এবং শান্তিতে থাকবেন।

তৌহিদ:...

আকাশ: বন্ধুরা, বসন্ত উৎসব বা ঈদের পর, চীনে বা বাংলাদেশে, আমরা সবাই হয়তো জন্মস্থান থেকে কর্মস্থলে ফিরে যাই। কিন্তু, আমাদের মন, আমাদের স্পিরিট, সবসময়ই আমাদের জন্মস্থান, আমাদের মা-বাবা এবং আমাদের পরিবারের সঙ্গে থাকে, তাই না? একটি কথা আমি অনেক পছন্দ করি, বাড়ি থেকে দূর থাকার পর এবং লম্বা সময় বাড়ি ফিরে যেতে না পারার পর, বাড়ির গুরুত্ব বোঝা যায়, তাই না? কিন্তু আমি বলতে চাই, যত পারেন মা-বাবার সঙ্গে থাকুন। তাদেরকে বেশি বেশি সময় দিন। 

তৌহিদ:...

(আকাশ/তৌহিদ)