বসন্ত উৎসবে ভোগ নতুন বছরে চীনের অর্থনৈতিক প্রাণশক্তির প্রতিফলন
2023-01-29 19:34:43

২২ থেকে ২৮ জানুয়ারি ছিল চীনের বসন্ত উৎসব ও চান্দ্র নববর্ষের ছুটি।  গোল্ডেন হলিডেতে সামগ্রিকভাবে চীনে ভোগব্যয় বেড়েছে এবং তা দেশের অর্থনীতিতে সার্বিকভাবে প্রাণশক্তি যুগিয়েছে। এর ফলে চীনে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় শক্তি সঞ্চারিত হবে এবং তা বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অর্জনেও বড় ভূমিকা রাখবে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস তাই বলছে।

গোল্ডেন হলিডেতে চীনের অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতির কিছু সূচক সম্পর্কে আমরা চকিত দৃষ্টিপাত করতে পারি। ২৮ জানুয়ারি শেষ হওয়া সপ্তাহব্যাপী ছুটির সময়, চীনের ভোগ-সম্পর্কিত খাতগুলোর বিক্রয় রাজস্ব গত বছরের বসন্ত উৎসবের ছুটির তুলনায় ১২.২ শতাংশ বেড়েছে।

এ বছরের বসন্ত উৎসবের ছুটির জন্য পর্যটন রিজার্ভেশন গত বছরের একই সময়ের থেকে ৪ গুণ বেড়েছে, গত তিন বছরে অভ্যন্তরীণ এবং বহির্মুখী উভয় ভ্রমণের সংখ্যা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

এবারের ছুটির প্রথম ছয় দিনে চীনের রেস্তোরাঁগুলোতে একাধিক ব্যক্তির ডাইনিং প্যাকেজের অর্ডার ২০২২ সালের একই সময়ের থেকে ৫৩ শতাংশ বেড়েছে।

উপরে উল্লেখিত তথ্যউপাত্তে চলতি বছরের বসন্ত উৎসবের ছুটিতে চীনে ভোগপ্রবণতা বৃদ্ধির আভাস স্পষ্ট।

তিন বছর ধরে চলা মহামারিকে পিছনে ফেলে চীন এবার যথাযথ কোভিড প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে প্রক্রিয়াটিকে কিছু শিথিল করে। এর ফলে অনেক মানুষ পারিবারিক পুনর্মিলনের জন্য তাদের নিজ শহরে ফিরতে পারেন। ছুটির দিনে, লোকেরা সিনেমা, রেস্তোরাঁ এবং বিভিন্ন ধরণের পর্যটন আকর্ষণগুলোতেও ভিড় করেন।

বসন্ত উৎসবের ছুটিতে চীনের সিনেমা হলগুলোতে ১২৯ মিলিয়ন টিকিট বিক্রি হয়েছে, যা ২০২২ সালের একই সময়ের থেকে ১১.৮৯ শতাংশ বেশি। আর এ খাতে চীনের বক্স অফিস আয় করেছে ৬.৭৬ বিলিয়ন ইউয়ান বা ৯৯৮.৪৯ মিলিয়ন ডলারের বেশি। এটি এই বসন্তে চীনের সাংস্কৃতিক ও পর্যটন শিল্পের শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের একটি জোরালো সংকেত।

চলচ্চিত্রের মতোই ছুটির সময়কালে ভ্রমণের চাহিদা বহুগুণ বেড়েছে। চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, এ সময়ে প্রায় ৩০৮ মিলিয়ন অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ হয়েছে, যা গত বছরের বসন্ত উৎসবের ছুটির থেকে ২৩.১  শতাংশ বেশি এবং ২০১৯ সালের তুলনায় ৮৮.৬ শতাংশ বেশি।   

চীনের অভ্যন্তরীণ পর্যটনের রাজস্ব এ সময় ৩৭৫.৮ বিলিয়ন ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের থেকে ৩০ শতাংশ বেশি এবং ২০১৯ সালের চেয়ে ৭৩.১ শতাংশ বেশি।  

চীনে ক্যাটারিং ব্যবসাও সপ্তাহব্যাপী ছুটিতে ভালো পুনরুদ্ধার অর্জন করেছে। ইয়েলপের চাইনিজ সংস্করণ ডায়ানপিং অনুসারে বসন্ত উৎসবের প্রাক্কালে রেস্তোরাঁর জন্য অনুসন্ধান গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫৭ শতাংশ বেশি হয়েছে। 

এ সব কিছু চলতি বছর চীনের অর্থনীতিতে সার্বিক গতিশীলতা আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। চেজিং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ইনস্টিটিউটের মতে, চীনে মাথাপিছু ব্যয় ২০২৩ সালে এক বছর আগের তুলনায় ৮ থেকে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে ভোগ্যপণ্যের মোট খুচরা বিক্রয় বছরে ৭ থেকে ১১ শতাংশ বাড়বে।

এর ফলে যে ২০২৩ সালে চীনের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার নিশ্চিত হবে শুধু তা নয়, এটি বিশ্ব অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগের গ্লোবাল ইকোনমিক মনিটরিং ব্রাঞ্চের প্রধান হামিদ রাশিদ সিনহুয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি মনে করেন চীনের অর্থনীতি সঠিক পথে রয়েছে। চীনের মুদ্রানীতিও যথার্থ। দেশটিতে অভন্তরীণ ভোগব্যয় বাড়ছে। বাড়ছে শিল্প বিনিয়োগও।
হামিদ রাশিদ বলেন, যদি চীনের অর্থনীতির এ ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে ২০২৩ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি ৪.৮ শতাংশ, এমনকি তার বেশিও হতে পারে।
অন্যদিকে, চীনের বহিঃ-পর্যটনের আকার বিশাল বলে এটি মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো পর্যটননির্ভর দেশগুলোর জন্য সুবিধা নিয়ে আসবে।
এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো ম্যানুফ্যাকচারিং অর্থনীতির দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভালো। তাই এ সব দেশের অর্থনীতির জন্যও চীন আশীর্বাদ নিয়ে আসবে ২০২৩ সালে।

 
চীন সরকারও অর্থনীতির এ গতিপ্রকৃতির বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াংয়ের সভাপতিত্বে স্টেট কাউন্সিলের নির্বাহী সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে যে চীন তার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ স্থিতিশীল করবে।

বৈঠকে বসন্ত উৎসবের পরে দ্রুত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ও উৎপাদন পুনরায় চালু করার এবং অভিবাসী কর্মীদের তাদের কাজে ফিরে যাওয়ার বা নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য ভাল পরিষেবা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য সক্রিয় প্রচেষ্টা চালানোর কথা বলা হয় সভায়। ব্যবসা ও বিনিয়োগ আকর্ষণে স্থানীয় সরকারগুলোকে সহায়তা করা, পাইলট মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোর ভূমিকা আরও ভালোভাবে নেওয়ার  নির্দেশনা আসে সভা থেকে।

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন চীন আন্তর্জাতিক বেতার।