"ছু সি"——চীনা রোমান্টিক কবিতার উৎস
2023-01-29 10:59:23

“路漫漫其修远兮,吾将上下而求索”অর্থাৎ সামনের পথ যত দূর বা কঠিন হোক না কেন, আমি সামনে এগুতে থাকবো এবং অনুসন্ধান করব।" "চু সি”-এর “লি সাও"-তে ছুই ইউয়ানের কথাগুলি সত্যকে অবিরলভাবে অনুসন্ধান করার জন্য অনেক লোকের সাহস ও সংকল্পকে অনুপ্রাণিত করেছে।

"ছু সি" মানে “ছু অঞ্চলের গান” বা “ছু জনগণের গান”। ছুই ইউয়ান, সং ইউ এবং অন্যান্যদের কাজ নিয়ে পশ্চিম হান রাজবংশের লিউ শিয়াং "ছু সি" শিরোনামে এটি সংকলন করেন। "ছু সি" চীনা সাহিত্যের ইতিহাসে রোমান্টিক কবিতার প্রথম সংকলন। ছু অঞ্চলের সাহিত্য-শৈলী, উপভাষার শব্দ, স্থানীয় রীতিনীতি কাজগুলোতে ফুটে ওঠায় এসংকলনের নামকরণ করা হয়েছে "ছু অঞ্চলের গান", যা পরবর্তী প্রজন্মের কবিতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

"লি সাও" হল ছুই ইউয়ানের লেখা সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা এবং প্রাচীন চীনের দীর্ঘতম গীতিকবিতা। অধ্যায়ের প্রথমার্ধ বারবার ছু রাজ্যের ভাগ্য এবং মানুষের জীবন নিয়ে কবির উদ্বেগ প্রকাশ করে। “长叹息以掩涕兮,哀民生之多艰”অর্থাৎ, আমি সব সময় দীর্ঘনিশ্বাস ফেলি ও কেঁদে যাই;  জনগণের কষ্ট ও বিপর্যয় আমাকে কষ্ট দেয়। এতে কবির সমবেদনা প্রতিফলিত হয়। প্রবন্ধের দ্বিতীয়ার্ধে কবির স্বর্গে ভ্রমণ, আদর্শের অনুসরণ এবং ব্যর্থতার পর মরতে চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। “亦余心之所善兮,虽九死其犹未悔”অর্থাৎ, আমি আমার হৃদয়ের সর্বোত্তম আদর্শের জন‍্য সাধনা করি, বহুবার জীবন উৎসর্গ করলেও কোনো অনুশোচনা নেই। এটা দেশ ও মানুষের প্রতি কবির অদম্য ভালোবাসার প্রকাশ। পুরো কবিতাটিতে কবি সৌন্দর্য ও ভ্যানিলার রূপক ব্যবহার করেছেন; অনেক পৌরাণিক কাহিনী, কিংবদন্তি ও  সমৃদ্ধ কল্পনা দিয়ে একটি চমত্কার সাহিত্য রচনা করেছেন। এর মধ্যে  একটি ইতিবাচক রোমান্টিক চেতনা দেখা যায়। "সাও শৈলী" কবিতার ফর্ম তৈরি হয়েছে এ থেকে, যা চীনা সাহিত্যের পরবর্তী প্রজন্মের ওপরে গভীর প্রভাব ফেলে।

ছুই ইউয়ান ছু রাজ‍্যে জন্মগ্রহণ করেন এবং ছু রাজ‍্যকে শক্তিশালী করার জন্য তার সমস্ত জীবন ব্যয় করেন। যদিও তিনি অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছেন, তবুও তিনি তার পরিবারও দেশের কথা চিন্তা করেছেন। তিনি দেশের প্রতি তার ভালবাসা এবং তার উচ্চ আদর্শকে "চিয়ু সুং" (অর্থাৎ কমলালেবুর গান)-তে একত্রিত করেছেন। “后皇嘉树,橘徕服兮。受命不迁,生南国兮。深固难徙,更壹志兮。”অর্থাৎ, সম্রাটের সম্রাজ্ঞী মাটি জন্ম দিয়েছে এই সুন্দর কমলা গাছ। এই কমলা গাছ জন্ম থেকেই দক্ষিণের জল ওমাটির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে, নিয়তি মেনে নিয়েছে, জন্মভূমি ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবেনি। চিরকালের জন্য ছু দেশে শিকড় সম্প্রসারণ করবে এ গাছ। কবি এখানে কমলা গাছের কথা লিখেছেন রূপক অর্থে। আসলে তিনি মানুষকে বলতে চেয়েছেন, মাতৃভূমিকে ভালোবাসুন। তিনি আশা করেছিলেন যে, সবাই কমলা গাছের মতো হবে, নিজের দেশকে ভালোবাসবে।

"থিয়ানওয়েন" হল "লি সাও" এর পরে "ছু সি"-র দ্বিতীয় বৃহত্তম কবিতা। “明明暗暗,惟时何为。”অর্থাৎ, দিন উজ্জ্বল, রাত অন্ধকার—এ সব আয়োজন কে করেছে? “圜则九重,孰营度之。”অর্থা, নীল আকাশ কতো উঁচু, কে তা পরিমাপ করতে পারে? "থিয়ানওয়েন" পুরো কবিতাটিতে ৩৭০টিরও বেশি লাইন এবং ১৭০টিরও বেশি প্রশ্ন রয়েছে। আকাশ, পৃথিবী এবং মানুষ সম্পর্কে কবি একের পর এক প্রশ্ন করে গেছেন। এসব প্রশ্ন মূলত আকাশ, পৃথিবীর সমস্ত কিছু এবং মানব সমাজ নিয়ে আবর্তিত হয়েছে। ছুই ইউয়ানের সাহসী জ্ঞান অন্বেষণের চেতনা এই প্রতিটি প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে, যা মহিমান্বিত ও চিন্তা-প্ররোচনামূলক।

"থিয়ানওয়েন"-এ, ছুই ইউয়ানের পৃথিবী ও মহাবিশ্ব অন্বেষণের চেতনা পরবর্তী প্রজন্মের চীনা জনগণকে উত্সাহিত করেছিল। ২০২০ সালে চালু হওয়া চায়না স্কাই আই টেলিস্কোপ হল বিশ্বের বৃহত্তম একক-অ্যাপারচার রেডিও টেলিস্কোপ। এটি মহাবিশ্বের কয়েক বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের দুর্বল সংকেত সনাক্ত করতে পারে। চীনের তৈরি "ওয়েনথিয়ান-১" মার্স রোভারটি ২০২০ সালে উৎক্ষেপিত হয় এবং প্রথমবারের মতো মঙ্গল গ্রহে চীনের ছাপ রাখে। "থিয়ানওয়েন" পরীক্ষামূলক মডিউলটিও ২০২২ সালে উৎক্ষেপিত হয়েছে এবং সফলভাবে থিয়ানহ‍্য কোর মডিউলের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। “路漫漫其修远兮,吾将上下而求索” সামনের পথ যত দূর বা কঠিন হোক না কেন, আমি সামনে এগুতে থাকবো এবং অনুসন্ধান করব।" চীনা জনগণের সামনে এখনও মহাবিশ্ব অন্বেষণের জন্য দীর্ঘ পথ রয়েছে, তবে আমাদের অনুসন্ধানের যাত্রা কখনই থামবে না।

  (ইয়াং/আলিম/ছাই)