মুদ্রায় চীনের নির্মাণ: লাওসের ভ্যাং ভিয়েং সিমেন্ট প্ল্যান্ট
2023-01-27 20:13:33

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন অনেক উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে অবকাঠামো, জ্বালানি, জলসেচ ও বিদ্যুতসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করেছে, যা সে স্থানগুলোর জন্য বাস্তব কল্যাণ বয়ে এনেছে। অনেক প্রকল্প- এমন কি ‘দেশের ল্যান্ডমার্কে পরিণত হয়েছে। আজকের এ অনুষ্ঠানে আমরা লাওসের মুদ্রায় চীনের নির্মিত সিমেন্ট প্ল্যান্টের গল্প শুনবো।

লাওসের বৃহত্তম মূল্যের ৫০০০ কিপ নোটে যে ছবি আছে, সেটি হচ্ছে দেশটির ভ্যাং ভিয়েং সিমেন্ট প্ল্যান্ট। এটি চীনের সহায়তায় দেশের তৈরি প্রথম সিমেন্ট কারখানা। এ প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ায় লাওস স্বাধীনভাবে সিমেন্ট উৎপাদন শুরু করেছে। যার তাৎপর্য স্মরণে লাওস সরকার এ প্রকল্পের ছবি দেশটির বৃহত্তম নোটে প্রিন্ট করেছে। ৫০০০ কিপ ২৫ বছর আগে চীনের ৩৩ ইউয়ান সমান ছিল। এটি তখন বৃহত্তম মুদ্রা। ১৯৮৮ সালে লাওস উন্মুক্তকরণ নীতি প্রণয়ন করে। দেশের উন্নয়ন ও নির্মাণের পর্দা উন্মোচিত হয়। তবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সামুগি এবং মালামাল হিসেবে সিমেন্ট সম্পূর্ণভাবে আমদানি করতে হয় লাওস। লাওস সরকার এ দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

 

১৯৯০ সালে লাওস সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, কষ্ট হলেও দেশের প্রথম লক্ষ্য- উচ্চ মূল্য সিমেন্ট আমদানির ওপর লাওসের নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে।

প্রথম সিমেন্ট কারখানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লাওস সরকার চীনের সঙ্গে সহযোগিতা শুরু করেছে। ১৯৯৪ সালের নভেম্বর মাসে দেশটির  ভ্যাং ভিয়েং সিমেন্ট প্ল্যান্ট সম্পন্ন হয় এবং সিমেন্ট উৎপাদন শুরু করে। ফলে লাওসের নিজস্ব প্রথম সিমেন্ট ব্র্যান্ড এবং ভারী শিল্প উন্নয়নের সূচনা হয়। ওই সিমেন্ট কারখানাও লাওস-চীন অর্থনৈতিক সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকে পরিণত হয়।

এরপর তিন বছরে চীনা বিশেষজ্ঞ দল লাওস কর্তৃপক্ষকে উৎপাদনের প্রযুক্তি ও প্রশাসনের দক্ষতা শিক্ষা দেয়।

লাওসের ভ্যাং ভিয়েং সিমেন্ট প্ল্যান্টের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক জানান, চীনের বিশেষজ্ঞরা আন্তরিকভাবে আমাদের নানা প্রযুক্তি শিখিয়েছেন। তারা লাও ভাষা বা ইংরেজি ভাষায় আমাদের প্রযুক্তি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে দেন। আমরা বুঝতে না পারলে তাঁরা বাস্তব কাজের মাধ্যমে করে দেখান এবং আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। সে সময় আমরা নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। কারণ, আমরা প্রথম দলের কর্মী, যারা চীনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছিলাম।

 

ভালো প্রযুক্তি ও গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যের কারণে এ কারখানায় উত্পাদিত সিমেন্ট বাজারে আসার পরপরই ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। একসময় বাজারে যে পরিমাণ চাহিদা ছিল, তা মেটাতে পারছিল না কারখানাটি।

ভ্যাং ভিয়েং সিমেন্ট কারখানার সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান বলেছেন, সে সময় সিমেন্ট উৎপাদনের পরিমাণ যথেষ্ঠ ছিল না। বিশেষ করে লাওসের দ্রুত উন্নতি হচ্ছিল। বাধ ও রাস্তা নির্মাণসহ নানা প্রকল্পে সিমেন্টের চাহিদা অনেক বেড়েছে। সে চাহিদা মেটানো মুশকিল ছিল। একসময় এমন মজার কথা প্রচলিত ছিল- পয়সা থাকলে সোনা কিনতে পারেন, তবে সিমেন্ট কেনা কঠিন!

 

প্রায় ৩০ বছরের উন্নয়নের পর, লাওসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নির্মাণকাজে সে কারখানার সিমেন্ট অপরিহার্য হয়ে ওঠে। সিমেন্ট কারখানাটি লাওসে অর্থনীতি গঠনে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে। স্মরণে ১৯৯৭ সালে একে ৫০০০ কিপ নোটে প্রিন্ট করা হয়।

ভ্যাং ভিয়েং সিমেন্ট কারখানার সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান বলেছেন, ৫০০০ কিপ নোট সবসময় বৃহত্তম নোট। আমি সে প্ল্যান্টের কর্মী হিসেবে খুব গৌরব বোধ করি।

একটি নোটে চীন ও লাওসের নির্মাতাদের পরিশ্রমী ও মেধাবীদের গল্প প্রতিফলিত হয়েছে। চীন ও লাওসের মধ্যে এমন ঘনিষ্ঠ সহযোগিতামূলক গল্প আরও অনেক রয়েছে।

 

প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এ পর্যন্তই। আমাদের অনুষ্ঠান কেমন লাগলো? আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের ফেসবুকের মেসেঞ্জার ব্যবহার করতে বা আমাদের ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করতে ভুলবেন না। আমাদের ইমেইল ঠিকানা হলো: । আপনাদের চীনের বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ করছি আজকের অনুষ্ঠান। সবাই ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন।

(রুবি/তৌহিদ)