চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ব্যবসা-অর্থনীতি-বাণিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক আয়োজন ‘চলতি বাণিজ্য’
2023-01-27 17:15:01

চলতি বাণিজ্যের ২য় পর্বে যা থাকছে:

১. বসন্ত উৎসবে চাঙ্গা চীনের অভ্যন্তরীণ পণ্যের বাজার

২. চীনা পর্যটকদের আগমনে চাঙ্গা আসিয়ান দেশগুলোর পর্যটনখাত

৩. সারা বিশ্বে সহজ ও উন্নত রেলপরিবহন সেবা দিচ্ছে চীনের সিআরআরসি কর্পোরেশন

 

বসন্ত উৎসবে চাঙ্গা চীনের অভ্যন্তরীণ পণ্যের বাজার

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চলতি বসন্ত উৎসবে চাঙ্গা চীনের অভ্যন্তরীণ পণ্যের বাজার। এর অন্যতম কারণ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সরাসরি তত্বাবধান। উৎসব শুরুর আগে বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ ঠিক রাখতে নিজে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিজে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং, জানান নতুন বছরের শুভেচ্ছা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সি চিনপিংয়ের নির্দেশনার পর আরো দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে কাজ করছেন বাণিজ্যখাতের কর্মীরা। ফলে এর প্রভাব পড়েছে বাজারেও।

                                             

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের কাছের একটি পাইকারি বাজার সিনফাতি। নববর্ষের ছুটিতে মানুষের যে অতিরিক্ত পণ্যের প্রয়োজন, তা পূরণে চলছে ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি।

অন্যান্য বছরের মতো এবারো ব্যবসায়ীরা নিয়েছেন একটু বাড়তি প্রস্তুতি। বিশেষ করে উৎসব উদযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে যেন ঘাটতি না হয় সেদিকে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ নজর। মানুষের এই প্রয়োজন পূরণে আরো বেশি জোর প্রস্তুতির কারণ, এবার প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং সরসারি খোঁজ নিয়েছেন সরবরাহ ব্যবস্থার। গুরুত্ব দেন খাদ্যশস্য, ভোজ্য তেল, ডিম, দুধ, ফল ও সবজিসহ পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো এবং ঠিক মতো ব্যবসা পরিচালনা করার ওপর। ( সিনফাতি পাইকারি বাজারের সবজি বিক্রেতা কু চিলং বলছিলেন, প্রেসিডেন্টের ভিডিও কল তাদের অনুপ্রাণিত করেছে। )

কু চিলং, সবজি বিক্রেতা, সিনফাতি পাইকারি বাজার

“সাধারণ সম্পাদক সি’র সঙ্গে ভিডিও কলে কথা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে যে বিষয়টা তা হলো চাল, ফল ও সবজির সরবরাহ নিয়ে তার চিন্তা। খাবারইতো মানুষের সবচে য়ে প্রয়োজনীয় উপাদান। আর এ বিষয়েই প্রেসিডেন্ট সি সবচেয়ে বেশি যত্ন নেন আর আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। কারণ আমি এই সবজির ব্যবসার করি বহু বছর ধরে। এই মার্কেটেই আমার ব্যবসা ২০ বছরের বেশি সময় ধরে। বসন্ত উৎসবের এই সময়টাতে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয় যেন এখানকার মানুষ ছুটির সময়ে কমদামে ভালো সবজিটা নিতে পারে। প্রেসিডেন্ট সি আমাদের সঙ্গে কথা বলার কারণে আমরা আরো জোর প্রস্তুতি নিয়েছি।“

বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের বিশ্বাস সামনের দিনগুলোতে ব্যবসার পরিস্থিতি আরো ভালো হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে আগের চেয়ে নানা বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে মন্তব্য করে তারা বলছে, এসব পদক্ষেপের ফল পাওয়া শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ভিডিও কলে প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বাজারে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থাপনার ব্যাপারেও খোঁজ খবর নিয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের একজন সবজির পাইকারি বিক্রেতা লি ছংকুয়ে। তিনি জানান, মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের খোঁজখবর নেওয়ার রীতি বেশ উৎসাহব্যঞ্জক।

 

লি ছংকুয়ে, সবজি বিক্রেতা, সিনফাতি পাইকারি বাজার

“নতুন বছরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের ভিডিও কল পেয়ে আমাদের মনে হয়েছে, সরকার আমাদের ব্যাপারে অনেক বেশি আন্তরিক। ভিডিও কলের সময়ে তিনি প্রথমেই যেটি বলেছেন তা হলো খাদ্য মানুষের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি তাজা ভুট্টা বিক্রি করি। প্রেসিডেন্ট সি আমাদের খবর নিয়েছেন, আমরা কি উৎপাদন করি তা জানতে চেয়েছেন। আমাদের এখন অনেক ভালো লাগছে।“

স্থানীয়দের যেন পণ্য সংকটে পড়তে না হয় সে জন্য প্রতিদিনই সাধারণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি বাজারে আসছে জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছর কয়েক হাজার পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর কাজ করছে সরকার ও বাজার কর্তৃপক্ষ। 

 

 

ভিনদেশে চীন:

চীনা পর্যটকদের আগমনে চাঙ্গা আসিয়ান দেশগুলোর পর্যটনখাত

চলকি বছরের বসন্ত উৎসবে দেশের বাইরে ঘুরতে যাচ্ছেন চীনা পর্যটকরা। বিশেষ করে চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর চলতি বছর বিশ্বের ২০টি দেশকে পর্যটনের বাছাই করেছে চীন ও চীনের পর্যটকরা। তাদের পছন্দের তালিকায় আছে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো। তাইতো এসব দেশের পর্যটন খাত বেশ চাঙ্গা হয়েছে চীনা পর্যটকদের আনাগোনায়।

চীনা পর্যটকদের গন্তব্য দেশগুলোর মধ্যে ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, লাওস-সহ আছে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপের নামও। বহু মানুষ উৎসবের ছুটিতে বেছে নিয়েছেন এসব দেশ ঘুরে বেড়ানোর কর্মসূচি। ফলে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বহুদিন ধরেই অনেকটা নিষ্ক্রিয় এসব দেশের পর্যটন আবারো জেগে উঠেছে।

 

চীনা পর্যটকদের পছন্দের গন্তব্য হিসেবে আছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, রাশিয়া, সুইজারল্যান্ড, হাঙ্গেরি, নিউজিল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, কিউবা ও ফিজিও। এতোদিন আন্তর্জাতিক যোগা যোগে বিধিনিষেধ থাকায় প্রায়ই বন্ধই ছিলো চীনের বহির্মুখী পর্যটন। এবার সেসব বিধিনিষেধ শিথিল করায় এখাতে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া।

 

পরিসংখ্যা দেখা যায়, ২০১৯ সালে, ফিলিপিন্সে মোট ৮.২৬ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটক বেড়াতে আসে। এদের মধ্যে ১.৭৪ মিলিয়ন ছিল চীনা পর্যটক, যা মোট পর্যটকের ২১.১ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার বসন্ত উৎসবের ছুটিসহ নানা উপলক্ষে চীনা পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে। আর এর ফলে বছরজুড়েই গতি পাবে এ খাতের ব্যবসা ও বিনিয়োগ।

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

সারা বিশ্বে সহজ ও উন্নত রেলপরিবহন সেবা দিচ্ছে চীনের সিআরআরসি কর্পোরেশন

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: কোম্পানি প্রোফাইলে বিশ্বের খ্যাতনামা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও তাদের কর্তাব্যক্তিদের নানা সফলতার গল্প তুলে ধরি। চলতি বাণিজ্যের এবারের পর্বে থাকছে চীনের তৈরি রেলওয়ে পণ্য ও সেবা পৌছে দেওয়া প্রতিষ্ঠান সিআরআরসি কর্পোরেশন লিমিটিডের কার্যক্রমের খবর। সম্প্রতি তুরস্কে চালু হয়েছে এই কোম্পানির তৈরি করা চালকবিহীন ট্রেন।

সারা বিশ্বের মধ্যে রেল যোগাযোগের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান চীনের সিআরআরসি কর্পোরেশন লিমিটিড। কোম্পানিটির প্রধান মালিকানায় আছে সিআরআরসি গ্রুপ ও তিয়ানচিন ট্রাস্ট কোম্পানি লিমিটেড।

বিশ্বময় রেল যোগাযোগের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের কাজ করে মূলত এর অংগ প্রতিষ্ঠান সিআরআরসি ফিনান্সিয়াল লিজিং কোম্পানি লিমিটেড।

গ্রুপের অধীন গঠন করা এসব কোম্পানির মূল লক্ষ্য বিশ্বের দ্রুতগতির রেলসেবা দেওয়া। এক্ষেত্রে ট্রেনের ইঞ্জিন, রেল লাইনের নানা সরঞ্জাম ও রেলপথ নির্মাণে অর্থনৈতিক সহযোগিতা দেওয়ার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করে এই কোম্পানি। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে আধুনিক ও উচ্চ গতির ট্রেন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রেনের ইঞ্জিন, মালবাহী ট্রেন এবং শহরাঞ্চলে যাত্রী পরিবহনের উপযোগী ট্রেন নির্মাণ ও সরবরাহ করাও কোম্পানির প্রধান লক্ষ্য।

এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি তুরস্কে চালু হলো চীনের তৈরি চালকবিহীন ট্রেন। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির এই ট্রেন চালুর মাধ্যমে তুরস্কের মেট্রোরেল প্রকল্পে ঘটলো নতুন সংযোজন। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহর ইস্তাম্বুল থেকে নতুন বিমানবন্দর পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র ২৪ মিনিট। তুরস্কের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায় প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে এই ট্রেন। তুরস্কের স্থানীয় সংস্কৃতি অনুসরণ করে সাজানো হয় ট্রেনটির বাইরের অংশ। প্রতি ৪টি করে সাবওয়ে গাড়ি বহন করতে পারবে প্রায় ১১শ’ যাত্রী।

চীনের বাইরের কোন দেশে চালকবিহীন মেট্রো প্রকল্প এটাই প্রথম সিআরআরসি ছুছৌ লোকোমোটিভ কোম্পানি লিমিটেড বা সিআরআরসি জেল্কের। কোম্পানিটি বলছে, ২০২০ সালে তুরস্কের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্টের সঙ্গে চুক্তি সই করে তারা। চুক্তি অনুযায়ী তুরস্কের মেট্রোরেল প্রকল্পে মোট ১৭৬টি সাবওয়ে গাড়ি সরবরাহ করবে তারা। এরইমধ্যে ৪০টি সাবওয়ে গাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে কোম্পানিটির তুর্কি শাখার ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা হালুক ওগুজ জানান, বাকি ১৩৬টি সাবওয়ে গাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায়

গেল এক দশক ধরে তুরস্কের মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ করছে সিআরআরসি জেল্ক। সংস্থাটি জানায়, এর আগেও তুরস্কে ৪শ’টি মেট্রোরেলের গাড়ি সরবরাহ করেছে তারা। বিশেষ করে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা, ইস্তাম্বুল ও ইজমির শহরের মেট্রো যোগাযোগের অংশ হয়ে কাজ করছে তারা। সিআরআরসি জেল্ক এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান চৌ ছিংহে জানান, আগামীতে তুরস্কের সঙ্গে সহযোগিতা আরো বাড়বে এবং নতুন নতুন বাণিজ্য সম্ভাবনা তৈরি হবে।