চীনা জনগণের বাসস্থান সমস্যা কিভাবে সমাধান হয়
2023-01-27 10:20:32

আজকের চীনে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আকারের এবং সবচেয়ে দ্রুত গতির শহরায়ন প্রক্রিয়া ঘটছে। মানুষের বাসস্থান ও জীবনের বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে। ঐতিহ্য ও আধুনিকায়নের মধ্যে কিভাবে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়? আজ আমরা বেইজিংয়ের একজন সাধারণ বাসিন্দার গল্প থেকে চীনা জনগণের বাসস্থানের অবস্থার পরিবর্তন জানবো। তাঁর নাম ছুং পাও ছাই, বেইজিংয়ের তুংছেং ডিসট্রিক্টের ফু সিয়াং কমিউনিটির ইয়ু আর হু থুং-এর বাসিন্দা।

 

ছুং পাও ছাই সাংবাদিককে তাঁর গল্প বলেন। ২০০৮ সালে আমার ছেলে অসুস্থ হয়। এক দিনের মধ্যে ডাক্তার আমাকে তিন বার মারা যাবার বিজ্ঞপ্তি দেয়। আমার কিডনির ক্যান্সার তখন অনেক বেড়ে যায়।

আমার ছেলের কিডনির অবস্থা আরও খারাপ। ডাক্তারের চেষ্টায় বেঁচে রয়েছে। তবে আমার শারীরিক অবস্থাও খারাপ হতে থাকে। শুরুর দিকে আমার ডায়াবেটিস মনে হত, আসলে না। আসলে ক্যান্সার! অস্ত্রোপচারের পর ওষুধ খাওয়ার কারণে প্রতিদিন ১৪ বার মূত্রত্যাগ করতে হয়। তবে হুথুং-এর পুরানো বাড়িঘরে টয়লেট নেই বলে ঘরে পাত্রে তা রাখতে হত। তারপর পাবলিক টয়েলেটে গিয়ে ফেলতে হত। কিভাবে অসুস্থ অবস্থায় বার বার পাবলিট টয়লেটে যাওয়া যায়! আপনি মনে করেন টয়লেটে যাওয়া ছোট ব্যাপার, আসলে তা মানুষের জীবনের বড় একটি ব্যাপার। কে জীবনের অবস্থাকে উন্নত করতে চায় না, আমিও চাই।

 

ছুং পাও ছাই হুথুংয়ে থাকেন, হুথুং বেইজিংয়ের ঐতিহ্যবাহী এক ধরনের আবাসিক এলাকা। ছোট ছোট রাস্তার দুই পাশে থাকে বৈশিষ্ট্যময় বর্গক্ষেত্র আকারের বাসস্থান। এতে বেশ কিছু পরিবার থাকতে পারে। তবে এমন বাড়িঘর অনেক পুরানো, ঘর ছোট। থাকার মানুষ বেশি, টয়লেটে যাওয়া, হিটিং ব্যবস্থা, রান্না, সবই সমস্যা হত। যদিও তা বেইজিংয়ের বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতির প্রতীক; তবুও সেখানে বসবাস করা মানুষের জীবনের জন্য কষ্টকর ছিল।

 

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সি চিন পিং বেইজিংয়ের হুথুং পরিদর্শন করেন।

তিনি সবাইকে বলেন, হুথুং এলাকা তাঁর কাছে খুব পরিচিত। আজ তিনি এখানে পুরানো প্রতিবেশীদের দেখতে এসেছেন, পুরানো এলাকার পুনর্নির্মাণ কাজে সবার মতামত শুনতে এসেছেন।

ছুং পাও ছাই বলেন, প্রেসিডেন্ট সি আমাদের জিজ্ঞেস করেন, চাকরি কেমন, আয় ভালো কিনা, কিভাবে রান্না করেন, হিটিং ব্যবস্থা আছে কি, টয়লেট খুব দূরে কিনা।

সি চিন পিং তখন বলেন, পুরানো এলাকার পুনর্নির্মাণ করতে নানা কাজ করতে হয়। কাজের পরিমাণ আসলে বেশি। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এই কাজ ভালোভাবে করতে হয়। আর সবাইকে এতে সমর্থনও দিতে হয়। যৌথভাবে জনগণের কাজ করায়  সরকারকে সমর্থন করতে হয়।

 

২০১৫ সালে তুং ছেং ডিস্ট্রিক্টের স্থানান্তর ব্যবস্থাপনা শুরু হয়। এক্ষেত্রে জনগণ নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী আবেদন করেন, হুথুংয়ে থাকতে চাইলে হুথুংয়ে থাকতে পারেন, থাকতে না চাইলে সরকারের কাছে আবেদন করা যায়। সরকার তাদের নির্দিষ্ট কমিউনিটিতে বিন্যাস করে বা আর্থিক ভর্তুকি দিয়ে জনগণকে নতুন বাড়িতে স্থানান্তর করে।

ছুং পাও ছাই বলেন, এটা একদম ইচ্ছামতো কাজ। চলে যেতে চাইলে যান, থাকতে চাইলে থাকেন। এখানে কমিউনিটি হাসপাতাল আছে, ভালো হাসপাতালও খুব কাছাকাছি, হেঁটে যাওয়া যায়। তাই আমি এখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

পুনর্নির্মাণ কর্মগ্রুপ বাসিন্দা এবং ডিজাইনারের সঙ্গে যথেষ্ঠভাবে যোগাযোগ করার পর বাসিন্দার নিজের মতামত অনুযায়ী তাদের বাড়িঘরকে পুনর্নির্মাণ করেছে। আগের কাঠের দরজা তাপে প্রসারণ ও সংকোচন হয়, চার ঋতুতে বাতাস আসে। এখন নতুন ধরনের দরজা এসেছে। শীতে আর ঠান্ডা লাগে না। ঘরে টয়েলেট আছে, আর রাস্তার পাবলিক টয়লেটে যাওয়ার দরকার নেই। যে বাসিন্দা চলে গেছে, তার জায়গায় জনগণের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো তৈরি হয়েছে। লাইব্রেরিও আছে। এমন অবস্থা দেখলে মনে আনন্দ হয়। আপনি অনুভব করতে পারেন, উষ্ণ আলো পুরো ঘরকে আলোকিত করেছে। বাড়িঘর অনেক চওড়া, অনেক সুন্দর, জীবন আলোকিত হয়ে উঠেছে।

 

বিভিন্ন ব্যবস্থার মাধ্যমে আরো বেশি চীনাদের জীবনযাপনের পরিবেশ উন্নত হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সবসময় জনগণের বাসস্থান ও জীবিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি সবসময় সব মানুষের সুখী জীবনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, এক পরিবার, অথবা একজনের জীবনের মৌলিক সমস্যা সমাধান না হলে, আমরা স্থির থাকতে পারবো না। সুখী জীবনকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা জনগণের সঙ্গে চেষ্টা করতেই থাকবো।

একটি রাস্তা রক্ষা করা, একটি শহরের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা, মানুষের একটি সুন্দর বাড়িতে থাকা উচিত। এসবই সি চিন পিং-এর কাছে বড় ব্যাপার। চীনা জনগণের সুন্দর বাসস্থানের স্বপ্ন এখন পূরণ হচ্ছে।

(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)