জানুয়ারি ২৬: গতকাল (বুধবার) আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্টিয়াগো কাফিয়েরো বুয়েনস আয়ার্সে চায়না মিডিয়া গ্রুপ- সিএমজি’তে সাক্ষাৎকার দেন। সিএমজি সাংবাদিক প্রথমে আর্জেন্টিনাকে চলতি বছরের বিশ্বকাপ ফুটবলে জয়ী হবার জন্য শুভেচ্ছা জানান। এ সম্পর্কে কাফিয়েরো বলেন, ফুটবল হলো আর্জেন্টিনার গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য। বিশ্বকাপ জয়ের পর সারা দেশে আনন্দ ও উত্তেজনা দেখা যায়। আর্জেন্টিনা একটি ফুটবল-প্রধান দেশ। ফুটবল হলো আমাদের প্রধান খেলা। যদিও আর্জেন্টিনা অন্যান্য খেলাতেও উন্নত হয়েছে, তবুও সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল। আর্জেন্টিনায় অনেক ফুটবল তারকা আছেন। সাধারণ নাগরিকরা ফুটবলে আগ্রহী। তাই ফুটবল আর্জেন্টিনার সবচেয়ে আনন্দের খেলা। আসলে ফুটবলসহ বিভিন্ন ক্রীড়া কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে সেতুর ভূমিকা পালন করে।
সম্প্রতি ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি শীর্ষসম্মেলন বুয়েনস আয়ার্সে অনুষ্ঠিত হয়। এবারের শীর্ষসম্মেলনে দু’টি মাইলফলক আছে। প্রথমত, আর্জেন্টিনা অব্যাহতভাবে শীর্ষসম্মেলনের ব্যবস্থা ও সংস্কৃতি উন্নত করেছে। বিশেষ করে, ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চলে অব্যাহতভাবে সংলাপ ও যোগাযোগ বজায় রয়েছে। দ্বিতীয়ত, ব্রাজিল কমিউনিটিতে ফিরে এসেছে। এতে বোঝা যায়, ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ৩৩টি দেশ একই ব্যবস্থা ও প্ল্যাটফর্মে সংলাপ ও যোগাযোগ চালাবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যু সম্পর্কে কাফিয়েরো বলেন, বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তবে, জলবায়ু পরিবর্তন সব দেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে বৈষম্যের কারণে সৃষ্ট বিভাজন আমাদেরকেও প্রভাবিত করেছে। বর্তমান আমাদেরকে প্রাকৃতিক সম্পদ শিল্প ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জ্ঞান-ভিত্তিক উন্নয়ন জোরদার করতে হবে। এটি হলো ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, বিশেষ করে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কাফিয়েরো বলেন, বর্তমান বিশ্বের ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য প্রয়োজন। তাই এ দু’টি অঞ্চল যৌথভাবে নতুন সম্পূর্ণ শিল্প চেইন গড়ে তোলার আলোচনা করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চল অন্যান্য অঞ্চল ও দেশের সঙ্গে আন্তরিক সংলাপ ও যোগাযোগ করতে চায়। সেজন্য এবারের সম্মেলনে আমরা চীনসহ অন্যান্য দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। সম্মেলনের সময় আমি সাবেক চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে চারবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছিলাম। আমরা গভীর আস্থা ও মৈত্রী গড়ে তুলেছি। আমি নতুন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে অনলাইনে এবারের শীর্ষসম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট সি’র শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চীন হলো ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের অধিকাংশ দেশ ও অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। আঞ্চলিক দেশগুলো চীনের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতা বাড়াতে ও আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করতে ইচ্ছুক। গত বছর ছিলো আর্জেন্টিনা চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী। যা দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটি মাইলফলক। আর্জেন্টিনা ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে অংশ নিয়েছে। দু’দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা অনেক উন্নত হয়েছে। এতে অবশ্যই অবকাঠামোর নির্মাণ শিল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর্জেন্টিনা চীনের সঙ্গে একটি রোডম্যাপ গড়ে তুলেছে; যাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা চালানো যায়। এদিকে আর্জেন্টিনা ব্রিক্স ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের আবেদন জানিয়েছে। চীনও আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করে। বস্তুত, দু’দেশের সহযোগিতার সুপ্তশক্তি প্রচুর। আর্জেন্টিনা চীনের সঙ্গে অগ্রণী পরমাণু চিকিৎসা-ব্যবস্থা, মহাকাশ, পরমাণু প্রযুক্তির খাতে সহযোগিতা চালাতে চায়।
সবশেষে তিনি বলেন, মৈত্রীর ভিত্তি হলো সমঝোতা। দু’দেশের উচিত সাংস্কৃতিক যোগাযোগের সেতু গড়ে তোলা। দু’দেশের জনগণের অভিন্ন উন্নয়নের আশা ও ধারণা আছে। দু’দেশের জনগণ একে অপরের সংস্কৃতি বুঝতে চায়। আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
(ছাই/তৌহিদ)