বসন্ত উত্সবের ছুটিতে মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকটি চলচ্চিত্র নিয়ে কথা
2023-01-26 10:39:50

চলতি বছরের বসন্ত উত্সবের ছুটির অর্ধেকেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এই বসন্ত উত্সবের ছুটিতে ‘The Wandering Earth II’ এবং ‘Full River Red’-সহ বেশকয়েকটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। বলা যায়, বসন্ত উৎসব চলাকালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মুভির তালিকায়’ বিভিন্ন গোয়েন্দা চলচ্চিত্র, অ্যানিমেশন, কমেডিসহ বিভিন্ন চলচ্চিত্র রয়েছে। অনেকে মজা করে বলেন যে, ‘এই বসন্ত উৎসবের ছুটিতে আমি দিনরাত কেবল প্রেক্ষাগৃহে পরে থাকতে চাই’। আজকের অনুষ্ঠানে সবাই মিলে ২০২৩ সালের বসন্ত উত্সবে মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকটি মুভি’র ওপর দৃষ্টি দেবো।

১৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত বসন্ত উত্সবের ছুটির সময় মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রগুলোর প্রাক-বিক্রয় বক্স অফিস আয় ছিল প্রায় ২০ কোটি ইউয়েন। প্রেক্ষাগৃহ আবার খোলার সাথে সাথে সিনেমা দেখার জন্য দর্শকদের উত্সাহ বাড়তে থাকে এবং চলচ্চিত্রের বাজার পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত হয়।

২০১৯ সালের বসন্ত উত্সবের ছুটিতে মুক্তিপ্রাপ্ত মুভি ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ’ এর অনন্য হার্ডকোর সাই-ফাই শৈলীতে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। চার বছর পর পরিচালক কুওফ্যান আবার ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ-২’ নিয়ে বসন্ত উত্সবের ছুটির সময় এসেছেন। এতে পৃথিবী ‘বিচরণ’ শুরু করার আগের গল্পটি বলা হয়েছে এবং গোটা গল্পটি আগের চেয়ে আরো রহস্যময় মনে হয়েছে।

২০১৯ সালে এ মুভিটি মুক্তি পাওয়ার পর দর্শকদের প্রশংসা কুড়ায় এবং এর বক্স অফিস আয়ও খুব ভালো ছিলো। এখন মুভি’র দ্বিতীয় পর্বও দর্শকদের কাছে সমাদৃত হয়েছে।

‘ Hidden Blade’ নামের মুভিটি গোয়েন্দাধর্মী। এ মুভি’র পরিচালক ছেং আর বলেন, ‘আমরা এ মুভির মাধ্যমে অজানা গুপ্তচরদের সংগ্রাম তুলে ধরতে এবং দর্শকদের অভূতপূর্ব জগতে নিয়ে যেতে চাই।’

চীনের বিখ্যাত অভিনেতা তেং ছাও এবং বিখ্যাত পরিচালক ইউ পাই মেইয়ের যৌথ পরিচালনায় নির্মিত মুভি ‘ Ping-pong of China’ হলো ক্রীড়াবিষয়ক একটি চলচ্চিত্র, যা সত্যি ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকের শুরুতে চীনের পুরুষ পিংপং দল থিয়েনচিনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে। মুভিতে সেই গল্প বলা হয়েছে। পিংপং চেতনা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চীনা মানুষকে উত্সাহ দিয়ে আসছে।

তা ছাড়া, সু লুন পরিচালিত ‘Five Hundred Miles’ কমেডি পরিবারের সবার জন্য উপভোগযোগ্য।

এখন বিশেষ করে ‘Boonie Bears:Guardian Code’ নামের একটি কার্টুন মুভি’র ওপর দৃষ্টি দেবো। আসলে ‘Boonie Bears:Guardian Code’ হলো ‘Boonie Bears’ নামের ধারাবাহিক মুভির মধ্যে নবম। মুভি’র প্রধান চরিত্র হলো দর্শকদের সুপরিচিত সিয়োং তা, সিয়োং আর ও কুয়াং থৌ ছিয়াং, অর্থাত্ বড় ভাই বেয়ার, ছোট ভাই বেয়ার এবং ছিয়াং নামের একজন টাকলাম্বারজ্যাক। গত বছর মুক্তিপ্রাপ্ত ‘Boonie Bears:Back To Earth’ মুভিটি ৩৫তম চীনের গোল্ডেন রুস্টারের শ্রেষ্ঠ শিল্প চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।

‘Boonie Bears:Guardian Code’ নামের মুভি’র নাম থেকে বোঝা যায় যে, মুভিটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত একটি গল্প বলা হয়েছে। গল্পটি চেনশিং নামের এক কাল্পনিক দ্বীপের রোবট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ঘটে। বিজ্ঞানীরা এখানে একটি রোবট জগত তৈরি করার চেষ্টা করেন, যা মানুষের জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তাই বৈচিত্র্যময় ফাংশনসহ জীবন-অ্যাপ্লিকেশন রোবট তৈরি করা হয় এখানে। যেমন, কোনো কোনো রোবট শিশুকে মা’র যত্ন দেয়, কোনো কোনো রোবট পেশীবহুল যোদ্ধার মতো যুদ্ধ করে।

রোবটগুলো ক্রমে জনপ্রিয় হচ্ছে দেখে, বাল্ডছিয়াং এতে হস্তক্ষেপ করতে চায়। সে সিয়োং তা এবং সিয়োং আর-কে রোবটের ভান করতে বলে এবং রোবট গবেষণালয় পরিদর্শন করার জন্য যায়।

‘Boonie Bears:Guardian Code’ নামের সিরিজ মুভি বছরের পর বছর ধরে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশাল অগ্রগতি অর্জন করে আসছে। গল্প বলার ধরনে আরও বৈচিত্র্য এসেছে। এবারের মুভিতে ১০ বছরের গোপন রহস্য উন্মোচিত হয়।

সিয়োং তা এবং সিয়োং আর ছোটবেলায় একবার বনের মধ্যে আগুন দেখলো। তাদের মা ভাল্লুক বনের মধ্যে দৌড়ে গেল। মা-কে আগুনের আলোতে চলে যেতে দেখেছে তারা, কিন্তু তাকে আর কখনও ফিরে আসতে দেখেনি। তারপর সিয়োং তা এবং সিয়োং আর  এক জোড়া পরিত্যক্ত এতিমের মতো বড় হতে থাকে। যতক্ষণ মায়ের কথা ভাবে, ততক্ষণ তাদের মন খারাপ থাকে। মা ভাল্লুক কি এখনও বেঁচে আছে?

দেখা গেল সেবছর বনে আসলে আগুন দুর্ঘটনাক্রমে লাগেনি। পর্দার আড়ালে একজন আছে, সে ইচ্ছাকৃতভাবে বনে আগুন লাগিয়েছে। মানুষকে বাঁচাতে মা ভাল্লুক বিনা দ্বিধায় ছুটে যায় বনের  গভীরে। ফলে আগুনে পুড়ে সে গুরুতরভাবে আহত হয়ে নিখোঁজ হয়। সে কাকে বাঁচিয়েছিল? আগুন লাগানোর অপরাধী কে ছিল? এবং আগুন লাগানোর উদ্দেশ্য কি ছিল? ধারাবাহিক সাসপেন্স এবং প্রশ্ন এই মুভি’র আরেকটি গল্পের দিকে নির্দেশ করে।

এখানে আমি বিশ্বাস করি, দর্শকেরা অবশ্যই বুঝতে পারেন যে,আপাতদৃষ্টিতে ভাল্লুকের সহজ গল্প কেন সরল নয়। বসন্ত উত্সবের ছুটির বাজারে কেন এ মুভিটি জায়গা দখল করতে পারে, তাও বুঝতে পারেন। একদিকে, এতে কমেডির সব উপাদান আছে, অন্যদিকে এটি কার্টুন মুভি’র কাঠামোয় সর্বোচ্চ কারিশমা দেখিয়েছে।

সিয়োং তা, অর্থাত্ বড় ভাল্লুক ভাইয়ের শরীরে দর্শকেরা ‘বড় হয়ে ওঠা’ দেখতে পারেন। মায়ের চলে যাওয়া নিয়ে চিন্তা করছিল সে। এমনকি, সে সন্দেহ প্রকাশ করলো যে, মা তাদের পরিত্যাগ করেছিলো। ‘Boonie Bears:Guardian Code’ নামের এ মুভিতে তাদের মা’র নিখোঁজ হওয়ার গোপন তথ্য উন্মোচিত হয়। পাশাপাশি, সিয়োং তা মা’র চলে যেতে বাধ্য হওয়ার কারণ বুঝতে পারে। সংবেদনশীল সিয়োং তা ততদিনে প্রাপ্তবয়স্ক ভাল্লুকে পরিণত হয়েছে।

সিয়োং আর’র চরিত্রে আমরা সাহস দেখতে পাই। আগের মুভিতে বেশি দুবর্ল ও ভীতু ছিলো। সমস্যার সম্মুখীন হলে সে সবসময়ই বড় ভাল্লুক ভাইয়ের পিছনে লুকাতে পছন্দ করতো। তবে নতুন মুভিতে গুরুত্বপূর্ণ সময়কালে সিয়োং আর বীর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। তার এই সাহস সবাইকে উত্সাহিত করেছে এবং তারা সম্মিলিতভাবে ন্যায়ের পক্ষে লড়েছে। এমন একটি আনন্দময় ও মজাদার কমেডি বিভিন্ন বয়সের দর্শককে পছন্দ করবেন, সেটা বলাই বাহুল্য।