‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ২
2023-01-25 16:32:58

                                     

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণের অগ্রযাত্রা। 

1.

ইয়ুথ পাওয়ারে ‘তরুণদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ’

চীনা গণমাধ্যম চায়না ডেইলি তরুণদের নিয়ে নিয়মিত কিছু অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে। ইয়ুথ পাওয়ার নামে প্রচারিত অনুষ্ঠানের সিজন-টুতে ‘তরুণদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ’ শিরোনামে একটি বিশেষ পর্ব তৈরি করা হয়েছে।

পৃথিবীর অনেক বড় অংশ দখল করে আছে তরুণ প্রজন্ম। বর্তমানে যারা যুবক বা তরুণ তাদেরকে বলা হয় ‘জেড জেনারেশন’। গত শতাব্দির নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিক থেকে চলতি শতাব্দির দ্বিতীয় দশকের গোড়ার দিক পর্যন্ত সময়ে যে প্রজন্মের জন্ম হয়েছে তাদেরকেই মূলত জেড জেনারেশন বলা হয়ে থাকে।  ইয়ুথ পাওয়ারের লক্ষ্য জেড জেনারেশনের আগ্রহ ও ধারণার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে যোগাযোগ ও বিনিময়ের একটি বিশ্বব্যাপী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।

আয়োজকরা জানান, শিক্ষা সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। কিন্তু চীনের বাইরের শিক্ষা সম্পর্কে আসলে কতটা জানে চীনসহ অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা?

বিশ্বের কোন দেশে কোন বিষয় বেশি জনপ্রিয়, কেন লোকেরা নির্দিষ্ট বিষয়গুলো বেছে নেয়? ওইসব বিষয়ে পড়তে কেমন অর্থের প্রয়োজন? কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে অন্য শিক্ষাব্যবস্থায়? বিশ্বব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থা তরুণদের মধ্যে কোনো মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলে কিনা? ভবিষ্যৎ শিক্ষায় জেনারেশন জেড কী ভূমিকা পালন করবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ও র‌্যাঙ্কিং সম্পর্কে মানুষের ধারণা কী? শিক্ষাকে অনেক দেশে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়েছে, কিন্তু এটি কি প্রাপ্য মনোযোগ পাচ্ছে কি না এমন অসংখ্য প্রশ্নের সমাধান নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে ইয়ুথ পাওয়ার নামে এই অনুষ্ঠানের।

আর এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, থাইল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উজবেকিস্তান ও ইয়েমেনের জেড জেনারেশনসহ ভিন্ন বয়সী বিশেষজ্ঞরা যোগ দিচ্ছেন। এ অনুষ্ঠানে মূলত গোটা শিক্ষাব্যবস্থা এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ উঠে আসবে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

2.  যুব উন্নয়নের বেশ ক’টি সূচকে নির্ধারিত সময়ের আগেই লক্ষ্য অর্জন চীনের

 

যুব উন্নয়নে চীন যে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে তার কারণে এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সূচকে দেশটি নির্ধারিত সময়ের আগেই লক্ষ্যে পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সেগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ উপসংহারে উপনীত হয়েছে কর্তৃপক্ষ।

 

২০১৬ থেকে ২০২৫ সালের জন্য নেওয়া ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা মূল্যায়নের জন্য চীনের কমিউনিস্ট যুব লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০২০ সালে তথ্য সংগ্রহ করে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং যুব উন্নয়ন পরিকল্পনার কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তা বিশ্লেষণ করা হয়।

ফলাফল বলছে , পরিকল্পনার ক্রমাগত ও যথাযথ বাস্তবায়নের ফলে কয়েকটি সূচক নির্ধারিত সময়ের আগেই কাঙ্খিত মানে পৌঁছেছে। আরো দেখা যায়, ২০২০ সালে সপ্তম জাতীয় আদমশুমারি অনুসারে, চীনে ১৪ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যুবকের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। যুব জনসংখ্যা ২০০০ সালে ছিল ৪৯ কোটি এবং সেখান থেকে ধীরে ধীরে এ সংখ্যা কমতে থাকে।

বৈশ্বিক জনসংখ্যা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৯০ সাল থেকে মোট জনসংখ্যায় তরুণদের অনুপাত হ্রাস পাচ্ছে এবং কমার হার চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে খুব দ্রুত এবং যুক্তরাজ্যে খুব ধীর। ২০০০ সালের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তরুণদের অনুপাত কমার গতি ধীর হয় এবং ভারতে ধীর হয় ২০১০ সালে।

বিশ্লেষণের ফলাফলে দেখা যায়, নতুন যুগের চীনা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সমাজতন্ত্র, সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আদর্শ ও প্রত্যয়ের উপর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চিন্তাধারার ভিত্তিতে তরুণদের শিক্ষা পরিচালিত হয়েছে চীনে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসের অধ্যয়ন থেকে তরুণরা আদর্শিক জ্ঞান লাভ করছে। তারা জাতীয় বাস্তবতায় মার্কসবাদ ও সমাজতন্ত্রের প্রতি তাদের বিশ্বাসে অটল রয়েছে।

 -ঐশী/রহমান

 

3.

প্রতিবছরই চীনাদের বসন্ত উৎসবে সেরা চমক দেখায় চায়না মিডিয়া গ্রুপ। আর সে চমক থাকে স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল গালা নাইটকে কেন্দ্র করে। কারণ এটি বিশ্বের সর্বাধিক দর্শকের দেখা এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান। তাই বরাবরের মতো এবারের গালা নাইটকে আরো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে আয়োজকদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিলো না। এবারের স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল গালার প্রধান পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন অভিজ্ঞ, সাহসী, উদ্যোমী ও প্রতিভাবান নারী ইউ লেই, যিনি এক ঝাঁক তরুণকে নিয়ে পরিচালনা করেছেন স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল গালা নাইট।

 

তেতাল্লিশ বছর বয়সী পরিচালক ইউ লেই দীর্ঘ দিন ধরেই সিএমজির সঙ্গে যুক্ত আছেন; পরিচালনা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান। তার পরিচালিত প্রোগ্রামগুলো দর্শকদের পছন্দের তালিকায়ও স্থান করে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল গালা অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইউ কে। এবারের আয়োজনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চোখ ধাঁধানো নানা চমকের মধ্য দিয়ে বিশ্বের দরবারে চীনকে তুলে ধরা হয় ভিন্ন আঙ্গিকে; দেওয়া হয় নতুন কিছু বার্তাও। পুরো আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তারুণ্যে উদ্বেলিত পরিচালক ইউ লেই।

‘আসলে এই ধরনের প্রোগ্রামের দায়িত্ব পাওয়া আমার জন্য গর্বের ব্যাপার। তবে এমন চ্যালিঞ্জিং কাজ করতে পেরে আমি খুব খুশি।

 

গালা অনুষ্ঠানটি চীনাদের গৌরবউজ্জ্বল ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার একটি বিশেষ উপলক্ষ্য বা সুযোগ বলে মনে করেন পরিচালক ইউ লেই। 

‘গোটা শোর প্রতিপাদ্য ছিল সুখ ও আত্মবিশ্বাস। সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের গল্প বলা, চীনাদের গত বছরের কঠিন সময় পার করার স্মৃতি ভাগ করে মানুষের হৃদয়ে উষ্ণ অনুভূতি তৈরি করতে পেরেছি আমরা। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার আমার সঙ্গে একঝাঁক মেধাবী তরুণ কাজ করেছেন, যাদের প্রত্যেকের অবদান আছে এই অনুষ্ঠানটি সফল করার পেছনে। কারণ তারা গত কয়েক মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তারা তাদের চিন্তা-ভাবনা, মেধা, মনন, শ্রম এখানে নিবেদন করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, তারা ভবিষ্যতে অনেক ভালো কিছু করবেন।‘ 

 

ইউ লেই আরো মনে করেন, এমন নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে জীবনে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে যাবে এই তরুণ কর্মবীরের দল।

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

4.

নববর্ষ চীনা জনগণের কাছে বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্সব। এ সময় আনন্দ বিনোদন আর প্রিয়জনকে নানা রকম উপহার দেয় তারা। অংশ নেয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে।

নতুন বছরের কেনাকাটায় প্রধান ক্রেতাই তরুণরা। তাদের ব্যয়ের মনোভাব আর পরিমাণ পুরো সমাজের জীবনধারাকে প্রভাবিত করে। ফলে এ সময় জমে ওঠে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কেনাকাটা। ব্যতিক্রম নয় চলতি বছরের বসন্ত উৎসবের এ সময়ের চিত্রও।

উৎসব উপলক্ষে উপহারের মাধ্যমে পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের প্রতি ভালবাসা ও যত্ন দেখানো চীনাদের মধ্যে একটি সাধারণ প্রবণতা। আর এই কাজটি সবচেয়ে বেশি করে তরুণ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা। অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম ছিংতং প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, গেল সপ্তাহে ৭০ শতাংশেরও বেশ তরুণ-তরুণী তাদের বাবা মায়ের জন্য উপহার কিনেছে। 

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছংছিং এর বাসিন্দা সিয়াওছুন বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। বসন্ত উৎসবের উপহার হিসেবে সিয়াওছুন, তার দাদির জন্য একটি স্মার্টফোন কিনেছেন। তিনি তাকে ছুটির সময় মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাট ব্যবহার করতে শেখানোর পরিকল্পনা করেছেন যাতে তারা ভিডিও কলের মাধ্যমে একে অপরকে আরও বেশি দেখতে পারেন। ছুনের মতো এমন অসংখ্য তরুণ প্রিয়জনদের জন্য উপহার কিনছেন।

চীনের একাধিক অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মের তথ্য অনুসারে, বেইজিং, সাংহাই, কুয়াংতং, চিয়াংসু, শানতং, চেচিয়াং এবং ছিংতংসহ বেশ কয়েকটি প্রদেশে সাম্প্রতিক নববর্ষের কেনাকাটা বছরের অন্যসময়ের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ক্রমবর্ধমান অনলাইন অর্ডারের ক্ষেত্রে তরুণ ভোক্তার সংখ্যাই বেশি বলে জানা যায়।

ঐশী/সাজিদ  

 

5.  তরুণদের আইটি ও ভাষা শিক্ষা দিতে দুই প্রতিষ্ঠানের সমঝোতা

 

বেকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তরুণ জনবলকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে নেবুলা আইটি বাংলাদেশ এবং চায়না সেন্টার-ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।  আইটি এবং ভাষা শিক্ষায় দেশের তরুণদের আরও দক্ষ করে তুলতে সম্প্রতি এমন উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠান দুটি। এসময় আইটি খাতে বিভিন্ন সেক্টরে এবং ভাষা শিক্ষায় তরুণদের দক্ষ করার মাধ্যমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রযুক্তি শিক্ষায় এগিয়ে নিতে দুটি প্রতিষ্ঠান একই সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করে। 

 

এর ফলে এখন থেকে দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সময়োপযোগী কার্যকর গবেষণা এবং যথোপযুক্ত পরামর্শসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে পারস্পরিক কাজ করা সহজ হবে বলে জানান আয়োজকরা।  এতে উপস্থিত ছিলেন নেবুলা আইটির সিইও মো. আরিফুর রহমান এবং চায়না সেন্টার-ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার উপদেষ্টা মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহসহ দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। 

ঐশী/রহমান

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। 

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী