‘ঘুরে বেড়াই’-২য় পর্ব
2023-01-24 17:21:47

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে

১। চীনের প্রাচীন শহর কাশগর

২। চীন ঘুরে বেড়ানো চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এ বি সিদ্দিকের সাক্ষাৎকার

৩। দৃষ্টিনন্দন পোতালা প্রাসাদ   

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম। 

১। চীনের প্রাচীন শহর কাশগর

চীনের উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের থারিম বেসিন অঞ্চলের মরুদ্যান শহর কাশগর। এটি আফগানিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান এবং পাকিস্তানের সীমান্তের কাছে চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরগু্লোর মধ্যে একটি। দু’হাজার বছরের বেশি পুরনো এই শহরটির সংস্কৃতি যেমন সমৃদ্ধ তেমনি বর্তমানে উন্নত এর অর্থনীতি।

 

 

 

চীনের উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের ১২ লাখ ৬৮ হাজার বাসিন্দাসহ ৪.২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত প্রাচীন শহর কাশগর। প্রাচীন এই শহরের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ প্রায় ২ কিলোমিটার।

 

কাশগর ২ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে চীন, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের বানিজ্যকেন্দ্র হিসেবে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসাবে কাজ করেছে। কাশগর এমন একটি শহর যেখানে প্রাচীনকাল থেকে সব সময়েই লোক বসবাস করে আসছে। 

এক সময় কাশগর চীনা, তুর্কি, মঙ্গল এবং তিব্বতি সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। ২০১০ সালে শহরটি একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

 

 

সুপ্রাচীন সিল্ক রোডের গুরুত্বপূর্ণ শহর কাশগরের পর্যটন শিল্পও সমৃদ্ধ। এখানকার লোকজ সংস্কৃতির আকর্ষণে প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক আসেন দেশ বিদেশ থেকে।

উইগুর ভেষজ কফিরও রয়েছে বিপুল জনপ্রিয়তা। পাশাপাশি খাদ্যসংস্কৃতিও খুব সমৃদ্ধ। উইগুর ও হুই মুসলিমদের পরিচালিত রেস্টুরেন্ট, কফিখানা, সরাইখানাগুলো কাবাব, নানসহ নানা রকম সুস্বাদু খাবার তৈরি করে।

 

পুরানো এ শহরের বেশিরভাগ ভবন সংস্কার করা হলেও স্থানীয় বৈশিষ্ট্যগুলো বজায় রাখা হয়েছে। রঙিন দেয়াল, বৃত্তাকার খিলান, সুন্দর ডিজাইন করা দরজা- জানালায় এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। 

 

 

স্থাপত্যের পাশাপাশি, এ শহরের রাস্তার দোকানগুলো দেখার মতো। পুরানো এ শহরের প্রায় প্রতিটি রাস্তার নিজস্ব থিম রয়েছে, যাকে বলা হয় বাজার । হাজার বছরের প্রাচীন হাট বাজার যেখানে বিক্রি হয় ঐতিহ্যবাহী শিল্প সামগ্রী। কানতুমান নামে একটা বাজার আছে যেখানে ঐতিহ্যবাহী লোহার শিল্প সামগ্রী তৈরি করেন কামাররা। কাশগরের লোহার জালিকাজ বিখ্যাত।

 

 

উইগুর, হান, কাজাখ, তিব্বতী এবং হুই জাতির ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের দোকানগুলোও বিখ্যাত। এখানে চিকিৎসার জন্য মধ্যএশিয়ার নানা প্রান্ত থেকে আসেন ক্রেতারা।  এ শহরে পাওয়া যায় ছাগলের দুধের আইসক্রিম। যা স্থানীয়দের মাঝে খুবই জনপ্রিয়।  এছাড়া এ শহরের রাস্তায় হাটলে প্রায়শই চোখে পড়বে বয়স্ক লোকেরা রোদ পোহাচ্ছে এবং শিশুরা চারপাশে খেলছে।

 

 

 

 

২। সাক্ষাৎকার

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানের সাক্ষাৎকার পর্বে এবার কথা হয় বাংলাদেশী এ বি সিদ্দিকের সাথে । যিনি  নানচিং ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।

এ বি সিদ্দিক

সম্প্রতি তিনি ঘুরেছেন চীনের সাংহাই মিউনিসিপালটিতে। সেখানকার মানুষের জীবনযাপন ,খাবার-দাবাড় তাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি জানায়, “ আমি যখন সাংহাইয়ে গিয়েছি তখন শহরটা অনেক নিশ্চুপ ছিল। বেশিরভাগ মানুষ বসন্ত উৎসব উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহরটা আমার ভীষণ ভালোলেগেছে”।

এ বি সিদ্দিক

এছাড়া , সাংহাই টাওয়ার, নদীর পাড় ,বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে ঘুরেছেন তিনি।

যারা চীন ঘুরতে যেতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চীন সব সময় পর্‍্যটককে আপন করে নেয়। যে একবার চীন ভ্রমণ করবেন, চীনের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হবেন তখন তিনি একে সেকন্ড হোম ভাবতে শুরু করবেন”।

 

৩। দৃষ্টিনন্দন পোতালা প্রাসাদ

 

বিশ্বের সুন্দরতম প্রাসাদগুলোর একটি পোতালা প্রাসাদ । চীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল তিব্বতের রাজধানী লাসায় অবস্থিত এই প্রাসাদ। পোতালাকা পর্বতের নামে এই নামকরণ করা হয় এই প্রাসাদের।

৬৩৭ সালে রাজা সংস্থেন গম্পো কর্তৃক প্রথম প্রাসাদটি নির্মিত হয়। তবে পঞ্চম দালাই লামা ১৬৪৫ সালে এখানে কিছু ভবন নির্মাণে হাত দেন এবং ১৬৯৪ সালে এ প্রাসাদের নির্মাণকাজ শেষ হয়। চতুর্দশ দালাই লামা পর্যন্ত ওটাই ছিল দালাই লামাদের প্রধান বাসভবন। 

১৯৫৯ সাল থেকে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই প্রাসাদ। প্রাসাদটি প্রায় দুই লাখ ভাস্কর্য দিয়ে এ প্রাসাদ সাজানো হয়েছে। ভুমিকম্প প্রতিরোধে এই প্রাসাদের ভিত্তিতে ব্যবহার করা হয়েছে তামা। প্রাসদটির পূর্ব-পশ্চিমে ৪০০ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিনে ৩৫০ মিটার লম্বা। পাথর নির্মিত এই প্রাসাদের দেয়াল ৩ মিটার পুরু এবং এর ভিত্তি ৫ মিটার পুরু।

প্রাসাদটি উত্তর-দক্ষিণে ৪০০ মিটার ও পূর্ব-পশ্চিমে ৩৫০ মিটার। প্রাসাদের দেয়ালগুলো তিন মিটার পুরু। ১৩ তলার সে প্রাসাদটিতে রয়েছে হাজারেরও বেশি কক্ষ। এছাড়া সাজানো হয়েছে  প্রায় দুই লাখ ভাস্কর্য দিয়ে । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার ৭০০ মিটার ও মাটি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার উঁচুতে পর্বতের চূড়ায় প্রাসাদটি নির্মিত।

১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে। বহু পর্যটক প্রাসাদটিকে দেখতে সেখানে যান, তবে এক দিনে সেখানে এক হাজার ৬০০ পর্যটকের বেশি প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

 

আজ এ পর্যন্তই। আগামী পর্বে আবারো কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সুস্থ থাকুন, শুভকামনা সবাইকে।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী