চীনের ঐতিহ্যবাহী চান্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ ২০২৩ সালের খরগোশ বর্ষের তৃতীয় দিন। অনেক চীনা লোকের কাছে, এই বসন্ত উৎসব হল তিন বছর পর প্রথম বসন্ত উৎসব, যা বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উদযাপন করছেন। চীন জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। চীনের বিভিন্ন জায়গায় লোকেরা কিভাবে চান্দ্র নববর্ষ উদযাপন করেন?
চীনের উত্তরাঞ্চলের লোকদের জন্য লণ্ঠন মেলায় ঘুরে বেড়ানো এবং লণ্ঠন ধাঁধা সমাধান করা হল বসন্ত উৎসবের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। সেই সঙ্গে পরিবারের সবাই উদযাপন করার একটি উপায়।
উত্তর-পূর্ব চীনের শেনইয়াং শহরে বড় আকারের লণ্ঠন মেলা বসন্ত উত্সব উদযাপনের অংশ হিসাবে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
লিওনিং প্রদেশের রাজধানী শেনইয়াংতে ২০ হাজার বর্গ মিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে একটি চোখ ধাঁধানো লণ্ঠন মেলা শহরবাসীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ৭০টিরও বেশি সেট বড় আলোর স্থাপনা শহুরে রাতের আকাশ আলোয় উদ্ভাসিত করেছে।
এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং এ বছর ১৪ মিটার উচ্চতা থেকে ২৮ মিটার উচ্চতার লম্বা লণ্ঠন দিয়ে তৈরি ‘স্কাই সিটি’ দর্শকরা পছন্দ করেছেন। দূর থেকে দৃশ্যমান শুভ মেঘের নকশা, জেড খরগোশ, উড়ন্ত পাখিসহ নানা চিত্র—চীনা সংস্কৃতিতে শুভ প্রতীক।
তিন বছরের মধ্যে এই বছর প্রথমবারের মতো চীনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। মেলায় কর্মীরা বলেছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রতিদিন মেলায় আসা পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।
উত্সব এবং আনন্দময় পুনর্মিলনের সঙ্গে সবসময়ই সুস্বাদু খাবার ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সুস্বাদু খাবার উপভোগ করা হলো উত্সব উদযাপনের আরেকটি ঐতিহ্য।
উত্তর-পশ্চিম চীনের কানসু প্রদেশের তাচোং স্ট্রিট নামে একটি বিখ্যাত স্ন্যাক রাস্তায় প্রচুর পণ্য ও স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে অসংখ্য মানুষ ছুটে এসেছেন। বিশেষ স্ন্যাকস,যেমন গরম নাশপাতি স্যুপ, মশলাযুক্ত ভেড়ার খুর ও মাটন স্থানীয়রা দারুণ পছন্দ করেন।
পূর্ব চীনের চ্যচিয়াং প্রদেশের হুচৌ শহরে লোকজন বাম্পার ফলন এবং বসন্ত উত্সব উদযাপনের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী মাছের খাবার উপভোগ করতে জড়ো হচ্ছে। একজন পর্যটক বলেন,
‘আজকের খাবার আমাদের পছন্দের, এবং জায়গাটি একটি উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রত্যেকেই চান্দ্র নববর্ষের আনন্দ অনুভব করতে পারেন।’
মাছ ছাড়া, ঐতিহ্যবাহী চীনা নববর্ষের সুস্বাদু খাবার যেমন আঠালো চালের মিটবল এবং স্পঞ্জ কেক তৈরি করা হয়। স্থানীয় অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক হেরিটেজ অথবা উইলো শাখার বুনন দক্ষতা- পর্যটকদের দেখানো হচ্ছে।
বসন্ত উত্সব উদযাপন করতে উত্তর-পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশের হাইতোং শহরেও ধারাবাহিক লোক-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন লণ্ঠনের প্রদর্শন, ড্রাগন নাচ ও সিংহ নাচ স্থানীয় জনগণ ও পর্যটকদের জন্য একটি চমৎকার সময় উপহার দিয়েছে।
মধ্য চীনের হ্যনান প্রদেশের হুওচিয়া জেলায় লোকশিল্পীরা ইউ অপেরাসহ ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা মঞ্চস্থ করেছেন; যা পর্যটকদের জন্য উৎসবমুখর পরিবেশ বয়ে এনেছে। একজন পর্যটক বলেন,
‘আমি এই প্রত্যন্ত জেলায় এত বেশি স্থানীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দেখার কথা আগে ভাবি নি। আমি সন্তানসহ আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছি। আমি মনে করি, শিশুদের জন্য ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতির আরও জানাশোনা খুবই অর্থবহ।’
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের ইবিন শহরের মিয়াও জাতির অধ্যুষিত এলাকায় পর্যটকরা সিংহ নাচ, ঐতিহ্যবাহী চীনা পারফরম্যান্স, মিয়াও জাতির নাচ এবং অ্যাক্রোব্যাটিক্সে মগ্ন হয়েছেন।
পরিবারের সবাই একসঙ্গে প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র দেখা হলো চীনাদের উত্সব উদযাপনের আরেকটি ঐতিহ্য।
এই বসন্ত উত্সবের ছুটিতে ‘The Wandering Earth II’ এবং ‘Full River Red’-সহ বেশকয়েকটি দারুণ চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। বলা যায়, বসন্ত উৎসব চলাকালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মুভির তালিকায়’ বিভিন্ন গোয়েন্দা চলচ্চিত্র, অ্যানিমেশন, কমেডিসহ নানা চলচ্চিত্র রয়েছে।
আচ্ছা, প্রিয় দর্শক চীনাদের স্প্রিং ফেস্টিভাল উদযাপনের নানা ঐতিহ্য দেখার পর কেমন লাগলো? আশা করি, আপনারা এই ভিডিওয়ের মাধ্যমে চীনের ঐতিহ্যবাহী স্প্রিং ফেস্টিভালের আনন্দ অনুভব করতে পারেন, সবাইকে বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা।
লিলি/তৌহিদ