জানুয়ারি ২৩: তিন বছর পর বিশ্বের বৃহত্তম যাত্রী পরিবহন বা মানব-প্রবাহ ‘চীনের বসন্ত উৎসবের পরিবহন’ পুনরায় শুরু হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ৭ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বসন্ত উৎসবের আগের ১২ দিন চীনে রেলপথ, সড়ক, নৌপরিবহন ও বেসামরিক বিমানে যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা ৪৮কোটি পার্সনটাইমস হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৭.১ শতাংশ বেশি। এ অবস্থা চীনের মহামারী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সমন্বয় করার পর প্রথম বসন্ত উৎসব। চীনের সমাজে অতুলনীয় প্রাণশক্তি দেখা যাচ্ছে।
চীনের সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত দৃশ্যের সামনে, কিছু পশ্চিমা মিডিয়া সব সময় চাঞ্চল্যকর ভবিষ্যদ্বাণী করে আসছিল। তাদের খবরে বলা হয়, চীন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সমন্বয় করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেয় নি, বসন্ত উৎসব হবে চীনের মহামারীর ‘অন্ধকার ঘন্টা’। তবে আসল অবস্থা কি? চীনা নাগরিকরা আনন্দময় বসন্ত উৎসব কাটাচ্ছেন।
একটি সহজ যুক্তি, চীন ভালভাবে প্রস্তুতি না নিলে, কিভাবে কোভিড-১৯ মহামারী সংক্রমণে ‘ক্লাস বি ও বি নিয়ন্ত্রণ’ বাস্তবায়নের ১১ দিনের মধ্যে জ্বর ক্লিনিক, জরুরি বিভাগ ও সারা দেশে সব হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের শীর্ষ অবস্থান ছাড়িয়ে গেছে! আমরা জানি, চীনের লোকসংখ্যা ১৪০ কোটি। যদি চীন ভালভাবে প্রস্তুতি না নেয়, তাহলে বিভিন্ন রেস্তরাঁয় কিভাবে ভীর দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন পুনরুদ্ধার হয় এবং বিদেশে ভ্রমণের অর্ডার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়?
পশ্চিমা দেশগুলোর গণমাধ্যমগুলো মিথ্যাচার করছে কেন? তাদের লক্ষ্য কি? এর উত্তর সবাই জানে।
গত বছরের শেষ দিকে চীন মহামারী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সমন্বয় করার পর চীন সরকারের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ফোকাস রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ থেকে চিকিৎসায় স্থানান্তরিত হয়। চীন দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত করেছে। মৌলিক পর্যায়ের চিকিৎসা সংস্থাগুলোর সামর্থ্য বাড়ানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা বিছানা ও চিকিৎসা সামগ্রী বৃদ্ধি করা হয়েছে, দ্রুত অ্যান্টিজেন সনাক্তকরণ ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট ওষুধ সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। চীন দ্রুত মহামারী প্রতিরোধ ও অভিযোজনের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করার জন্য সক্রিয় ও কার্যকর চেষ্টা করছে। চীনা অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, ‘স্বাস্থ্য রক্ষা ও গুরুতর অসুস্থতা প্রতিরোধের’ সামগ্রিক প্রয়োজনীয়তা অনুসারে মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।
এদিকে গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎসা সম্পদ তুলনামূলকভাবে কম। বসন্ত উৎসবের সময় গ্রামগুলোতে ফিরে যাওয়ার লোকসংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সেজন্য গ্রামীণ এলাকাগুলো বর্তমান চীনের মহামারী প্রতিরোধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। বর্তমান চীন সরকার চীনের ৯৮.৮ শতাংশ গ্রামের চিকিৎসা ক্লিনিক ও আবাসিক ক্লিনিকে ‘জ্বর ক্লিনিক’ স্থাপন করেছে। পাশাপাশি, সব গ্রামের চিকিৎসা ক্লিনিকে অক্সিজেন তৈরির যন্ত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি থানায় কমপক্ষে একটি অ্যাম্বুলেন্স কনফিগার করা হয়েছে। চীনা জনগণ ও জীবন প্রথমে- এই নীতিতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে মহামারী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চীন। চীন সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে এবং সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন ব্যবস্থা সমন্বয় করার সামর্থ্য অর্জন করেছে। তবে, পশ্চিমা দেশের গণমাধ্যমগুলো শুধুমাত্র নিজের সিদ্ধান্তের আলোকে মনগড়া কথা বলছে ও বিচ্ছিন্ন তথ্য উপস্থাপন করছে। চীনের মহামারী প্রতিবেদনের সামগ্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের ব্যাপক কুসংস্কার ও ভুল ধারণা রয়েছে।(ছাই/তৌহিদ)