চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব
2023-01-23 17:04:35

দ্বিতীয় পর্বে যা থাকছে:

অসাধারণ ডিজাইন নিয়ে বাংলাদেশে চলে এলো ভিভো ওয়াই১৬

পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদনের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বিশ্ব

সাংহাইয়ে ২০২৫ সালের মাঝে রোবটিকসে যুগান্তকারী অগ্রগতির পূর্বাভাস

গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে চীন

 

আধুনিক পৃথিবী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবী আজ হাতের মুঠোয়। জীবনকে আরো সহজ ও সুন্দর করতে প্রতিনিয়ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে বিশ্বের তাবত বিজ্ঞানীরা। জ্ঞান বিজ্ঞানের নিত্য-নতুন নানা খবর নিয়ে আমাদের সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘বিজ্ঞানবিশ্ব’।

 

অসাধারণ ডিজাইন নিয়ে বাংলাদেশে চলে এলো ভিভো ওয়াই১৬

 

সাধ্যের মধ্যে অসাধারণ ডিজাইন নিয়ে বাংলাদেশে চলে এলো চীনা বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থা-ভিভো মোবাইলের ভিভো ওয়াই সিক্সটিন। মিড বাজেট রেঞ্জের মধ্যে বেশ আকর্ষণীয় দেখতে এই ফোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো আজ।

 

 

ভিভোর এন্ট্রি-মিড বাজেটের ফোনগুলো বিক্রি হবার মূলে আছে আকর্ষণীয় ডিজাইন। ভিভো ওয়াই সিক্সটিনের ডিজাইনও বেশ আকর্ষণীয়। ট্রেন্ডি ডিজাইনের ফোনটির ব্যাকে ক্যামেরা স্থান পেয়েছে, ফোনের ফ্রন্টে রয়েছে নচ ডিসপ্লে।

ভিভো ওয়াই সিক্সটিন ফোনটিতে আছে ৪জিবি র‍্যাম ও ৬৪জিবি স্টোরেজ। মিডিয়াটেক এর হেলিও পি৩৫ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে এই ফোনে। আপনি যদি হেভি ইউজার না হয়ে থাকেন তাহলে এই ফোনটি স্বাচ্ছ্যন্দে ব্যবহার করতে পারবেন।

ভিভো ওয়াই সিক্সটিন ফোনটিতে ৬.৫১ইঞ্চি এইচডি+ রেজ্যুলেশনের আইপিএস ডিসপ্লে রয়েছে। ফোনটির আকর্ষণীয় নচ ডিসপ্লে ইতিমধ্যেই নজর কেরেছে ক্রেতাদের।

ভিভো ওয়াই সিক্সটিন ফোনটিতে ১৩মেগাপিক্সেল এর মেইন ক্যামেরার পাশাপাশি ২মেগাপিক্সেল এর একটি হেল্পিং সেন্সর রয়েছে।

ফোনটির সামনে রয়েছে ৫মেগাপিক্সেল সেল্ফি ক্যামেরা। ক্যামেরাতে পাবেন প্যানারোমা, ফেস বিউটি, ফটো, ভিডিও, লাইভ ফটো, টাইম ল্যাপস, প্রো মোড, ডকুমেন্টস স্ক্যানার- এর মত আরো অগণিত ফিচার!

৫০০০মিলিএম্পিয়ার এর ব্যাটারি রয়েছে ভিভো ওয়াই সিক্সটিন ফোনটিতে। ফোনটির সাথে পাবেন ১০ ওয়াটের একটি চার্জার। এই চার্জার দিয়ে ফোনটি ফুল চার্জ করতে অন্তত তিন ঘন্টা সময় লাগবে। ফোনটিতে আরো থাকছে ডুয়াল সিমের সুবিধা ও ফিংগারপ্রিন্ট সেন্সর। 

ভিভো ওয়াই সিক্সটিন বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ১৫,৯৯৯টাকায়।

পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদনের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বিশ্ব

পৃথিবী এখন পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদনের নতুন শিল্প যুগে প্রবেশের ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে আছে। ২০৩০ সালের মাঝে এই শিল্পের কদর তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং লাখো কর্মসংস্থান তৈরি করবে বলে জানিয়েছে ইন্টার্ন্যাশনাল এনার্জী এজেন্সি।

নতুন শিল্প যুগে প্রবেশ করছে বিশ্ব। আধুনিক পৃথিবী হবে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পৃথিবী। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদনের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বিশ্ব।

সৌর বিদ্যুতের প্যানেল, উইন্ড টারবাইন, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, হিট পাম্প এবং হাইড্রোজেন ইলেক্ট্রোলাইজার সহ বহুল উৎপাদিত প্রযুক্তির বিশ্ববাজারের আকার এই যুগের শেষে প্রতি বছরে ৬৫০ বিলিয়ন ডলার হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইইএ।

আইইএ-এর প্রতিবেদনে আরো বলে, সংখ্যাটি বর্তমান সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি, তবে এটি পুরোপুরি নির্ভর করছে দেশের জ্বালানি ও জলবায়ু প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবার উপর।

২০৩০ এর মাঝে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদন খাতে চাকরির পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ মিলিয়নে উন্নীত হবে, জানায় আইইএ।   

আইইএ আরো জানায়, “বিশ্ব এখন পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদনের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে।”

তবে ফ্রান্স-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সম্পদ আহরণ ও উৎপাদন সাপ্লাই  চেইনের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে অশনি সংকেত জানিয়েছে।  

পৃথিবীর ৭০ শতাংশের বেশি কোবাল্ট গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো একাই উৎপাদন করে। আর অষ্ট্রেলিয়া, চিলি এবং চীন- এই তিন রাষ্ট্র পৃথিবীর ৯০ শতাংশের বেশি লিথিয়াম উৎপাদন করে থাকে। লিথিয়াম বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরির মূল উপাদান। সাপ্লাই চেইনে অনিশ্চয়তা জ্বালানি স্থানান্তরকে আরো কঠিন ও ব্যয়বহুল করে তুলছে।

২০২২ এর প্রথম দিকে কোবাল্ট, লিথিয়াম এবং নিকেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির দাম প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিলো।

চীনের বাইরে উইন্ড টারবাইন তৈরি করাও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে, একই দশা সোলার প্যানেলের ক্ষেত্রেও।

আইইএ-এর এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর ফাতিহ বিরোল সকল দেশকে সাপ্লাই চেইনে বৈচিত্র্য আনার আহবান জানান।

তিনি বলেন, “আমরা রাশিয়ার গ্যাসের ওপর ইউরোপের নির্ভরশীলতা দেখেছি। শুধু একটি কোম্পানী, দেশ ও বাণিজ্যপথে বেশি ভরসা করলে কোনো ব্যাঘাত ঘটলেই ভারী মূল্য পরিশোধ করতে হয়।“

পাশাপাশি, বিরোল আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন যেহেতু কোনো দেশই জ্বালানিদ্বীপ না, ফলে একসাথে কাজ না করলে জ্বালানি স্থানান্তর আরো ব্যয়বহুল ও ধীর হয়ে পড়বে।

 

সাংহাইয়ে ২০২৫ সালের মাঝে রোবটিকসে যুগান্তকারী অগ্রগতির পূর্বাভাস

২০২৫ সালের মাঝে রোবটিকসে যুগান্তকারী অগ্রগতি হবে সাংহাইয়ে। অতি দ্রুতই বাড়বে রোবটের সংখ্যা এবং রোবট ডেনসিটি।

প্রতি ১০,০০০ মানবকর্মীর বিপরীতে যে পরিমাণ রোবট থাকে তাকে বলা হয় রোবট ডেনসিটি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ গত মঙ্গলবার বলেছে, সাংহাইয়ে আগামী ৩ বছরের মাঝে ১০০ রোবট ডেনসিটি বৃদ্ধি পাবে।  

রোবট ডেনসিটি আধুনিক উৎপাদনের মান নির্ণয়ের মূল সূচক। ২০২৫ সালের মাঝে, মেট্রোপলিস মোট ২০টি সিটি-লেভেল লিডিং আধুনিক কারখানা ও ২০০

সিটি লেভেলে আধুনিক কারখানা তৈরি করবে, বলেছে সাংহাই মিউনিসিপাল কমিশন অব ইকোনোমি এন্ড ইনফরমেশন।

সাংহাই তার উৎপাদন শিল্পের ডিজিটাল রূপান্তরকে তুলে ধরছে। সাংহাইয়ে ২০২২ এ রোবটশিল্পখাতের বার্ষিক প্রোডাকশন আশা করা হচ্ছে ৭৫ হাজার ইউনিট যা কিনা চীনে সর্বোচ্চ।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী কয়েক বছরে রোবটশিল্প খাতকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ১০টি রোবট ব্র্যান্ড তৈরি করবে সাংহাই এবং প্রায় ১০০ টি রোবট প্রদর্শনীর আয়োজন করবে। রোবটশিল্পখাতকে ১০০ বিলিয়ন ইউয়ানে পৌছানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

কমিশনের একজন কর্মকর্তা, উ চুনপিং বলেন যে সাংহাই-ই চীনের প্রথম শহর যেটি রোবট ডেনসিটি পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত করেছে। সাংহাইয়ের মূল শিল্পকারখানা গুলোতে বর্তমানে রোবট ডেনসিটি ৩৮৩ এবং প্রধান এন্টারপ্রাইজগুলোতে রোবট ডেনসিটি ২৬০- যা বিশ্বব্যাপী গড় হিসাবের দ্বিগুণ।

 

 

গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে চীন

অর্থনৈতিক শক্তির পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতেও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে চীন। আর বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফল এবং ‘উচ্চ তাৎপর্যময় গবেষণার দিক থেকে বিশ্বে একচেটিয়া অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রকেও টপকে গিয়েছে দেশটি। চীন সরকার বরাবরই গবেষণা ও উন্নয়নকে দিয়েছে আলাদা গুরুত্ব। তাই এই খাতে ব্যয়ও করেছে বেশি। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে ২০২২ সালে শুধু গবেষণা ও উন্নয়নে চীন ব্যয় করেছে তিন দশমিক ০৯ ট্রিলিয়ন। অন্যদিকে অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-ও ইসিডি অর্থনীতির মধ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয়ের গড়ের দিক থেকে চীন রয়েছে বিশ্বে ১২তম অবস্থানে।

বিশ্বে গবেষণা ও উন্নয়নে বরাবরই এগিয়ে চীন। দেশটি ২০২২ সালে শুধু গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় করেছে তিন দশমিক ০৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান।  যা বছরে দশ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।  আর এই অগ্রগতি  দেশটির উদ্ভাবনের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রচেষ্টাকে করেছে তরান্বিত।

সম্প্রতি জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।  পরিসংখ্যান বলছে, চীনের গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয় গত বছরের জিডিপির দুই দশমিক ৫৫ শতাংশ, যা আগের বছরের তুলনায় শুন্য দশমিক ১২ শতাংশ  পয়েন্ট বেশি।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-ও ইসিডি অর্থনীতির মধ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয়ের গড়  ২.৬৭ শতাংশের কাছাকাছি। এটি ফ্রান্সের ২.৩৫ শতাংশ এবং নেদারল্যান্ডসের ২.৩২ শতাংশের চেয়ে বেশি এবং বিশ্বে এ ক্ষেত্রে চীন ১২তম স্থানে রয়েছে।

পসিরংখ্যান বলছে , দেশটি মৌলিক গবেষণায় ব্যয় করেছে প্রায় ১৯৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউয়ান । যা বছরে বেড়ে দায়িয়েছে ৭ দশমিক ৪  শতাংশ। চলতি বছরও গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হবে বলে আশাবাদী জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রধান পরিসংখ্যানবিদ লি ইয়িন ।

তিনি আরো বলেন, "অনেক প্রতিকূল  অবস্থা থাকা সত্ত্বেও, চীনের গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশের উদ্ভাবনী উন্নয়নে যোগ করেছে  শক্তিশালী জীবনীশক্তি। উল্লেখযোগ্যভাবে, চীন মৌলিক গবেষণায় বিনিয়োগ করছে সবচেয়ে বেশি।“

জানা যায়, গত বছর প্রথম ত্রৈমাসিকে, চীনের বৃহত্তম বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি প্রস্তুতকারক অ্যাম্পেরেক্স টেকনোলজি কো লিমিটেড, গবেষণা ও উন্নয়নে দশ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ইউয়ান ব্যয় করেছে। 

চীনের ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২৫) অনুসারে, দেশটি আরও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অর্জনে এ সময়ের মধ্যে আর এন্ড ডিতে বার্ষিকন৭ শতাংশের বেশি ব্যয় বাড়াবে।

চীনের  এই ধরনের বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা দেশটিকে গবেষণা ও উন্নয়নে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যয়কারী হওয়ার পথে নিয়ে যাবেন বলেন জানান সংশ্লিষ্টরা।

 

 

প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন , আফরিন মিম

সম্পাদনা: সাজিদ রাজু