২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতি কেমন হবে? এই মুহূর্তে তা নিশ্চিত নয়। কিন্তু চীনের অর্থনীতি ভালো হবে, এমন সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মাত্র ১.৭ শতাংশ হবে, যা আগের পূর্বাভাস ৩ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। এ ছাড়া, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধি হবে ২ শতাংশের চেয়ে কম। এটা ১৯৬০ সালের পর সবচেয়ে ধীর প্রবৃদ্ধির পাঁচ বছর।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, অভিষ্ট লক্ষ্যের চেয়ে উঁচু মুদ্রাস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতি দমনের জন্য হঠাত্ সুদের হার বাড়ানো, কোভিড মহামারীর আবার ফিরে আসা, অথবা ভূরাজনীতির উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির তীব্রতর হওয়াসহ নতুন অজানা পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
কিন্তু কোন কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্থনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মনে করে, যদিও ২০২২ সালের চেয়ে চলতি বছর বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধীর হবে, তবুও মন্দা এড়ানো যাবে। এর আগে আইএমএফের অনুমান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২.৭ শতাংশ হবে।
কোন কোন চীনা পণ্ডিতের মতে, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে স্পষ্ট মন্দা দেখা না গেলেও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধিও হবে না, বরং মন্দাভাব দেখা যাবে।
চাইনিজ একাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্স (সিএএসএস)-এর বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি গবেষণালয়ের গবেষক তোং ইয়ান বলেন, ভূরাজনৈতিক সংঘর্ষ, মহামারীর অনিশ্চয়তা এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান অর্থনৈতিক স্বত্ত্বাগুলো কর্তৃক উদ্দীপক নীতিমালা আকস্মিকভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়ার নেতিবাচক প্রভাবসহ বেশকিছু বাহ্যিক শক উপাদান এখনও রয়ে গেছে যা অল্প সময়ের মধ্যে নির্মূল হবে না। তাই, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ২০২২ সালের ধীর প্রবণতা অব্যাহত থাকবে ও দেখা যাবে মন্দাভাব।
গবেষণালয়টির অনুমান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে প্রায় ২.৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের পর বিশ্বের অর্থনীতি নিম্নবৃদ্ধির ট্র্যাকে ফিরে আসবে বলেও গবেষণালয় আশা করছে।
যদিও বিশ্ব অর্থনীতির প্রবণতাসংক্রান্ত বিবেচনা নিয়ে বিভিন্ন মতামত আছে, তবুও এক বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মতৈক্য আছে। আর সেটা হলো, চলতি বছর এশিয়ার অর্থনীতি শক্তিশালী হবে, বিশেষ করে চীনের অর্থনীতিতে পুনরায় শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে।
সম্প্রতি চীনের মহামারীসংশ্লিষ্ট প্রতিরোধনীতি সমন্বয় ও সুবিন্যস্ত করা হয়, বিভিন্ন জায়গায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করার জন্য বিভিন্ন নীতি ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এসব নীতি ও ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে কার্যকর বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করা, গাড়ি, বাসভবন ও ঘরে ব্যবহার্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন পণ্যের ভোগ বাড়ানো, ইত্যাদি।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি)-র অনুমান অনুসারে, এশিয়ার প্রধান উদীয়মান বাজার অর্থনীতিগুলো ২০২৩ সালে বিশ্ব জিডিপি’র প্রায় ৭৫ শতাংশ অবদান রাখবে।
আইএমএফ-এর প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলছেন, চীন মহামারী মোকাবিলার নীতি সমন্বয় করার ফলে দেশটির অর্থনীতির শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়িত হবে। এ ছাড়া, চীন পুনরায় বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে।
কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালের প্রথম ১১ মাসে চীনে বিদেশি পুঁজি ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ২০২১ সালের একই সময়ের চেয়ে ৯.৯ শতাংশ বেশি। চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিসিপিআইটি)-র গবেষণালয়ের উপ-প্রধান চাও পিং বলেন, গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দাভাব দেখা দিলেও, চীনের অর্থনীতির ধারাবাহিক পুনরুদ্ধার আরো বেশি বিনিয়োগ-সুযোগ সৃষ্টি করবে, ফলে বিশ্ব বিনিয়োগকারীরা চীনে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে। একই সময়ে চীন বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য নতুন চালিকাশক্তি যোগাবে। (প্রেমা/আলিম)