পরবর্তিত কোভিড পরিস্থিতিতে তিন বছর পর মহামারির চোখ রাঙানিকে পিছনে ফেলে ঐতিহ্যিক বসন্ত উৎসব ও চান্দ্র নববর্ষ উদযাপন করছেন চীনের মানুষ। রোববার থেকে শুরু হওয়া এ উৎসবে আবার জেগে উঠেছে যেন গোটা চীন। কয়েক কোটি মানুষ বসন্ত উৎসবের গোল্ডেন হলিডেতে ফিরেছেন নিজ নিজ পরিবারে।
বসন্ত উৎসবের আগেই অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে এসেছে চীন। দোকান-পাট, শপিং মল, গণপরিবহন থেকে শুরু করে জনসম্পৃক্ত প্রায় সব কিছুই খুলে দেওয়া হয়। এতে সর্বত্রই ব্যাপক জনসমাগম ঘটে। চীনের বসন্ত উৎসবের ছুটিকে বলা হয় কোন একটি উৎসবকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণচলাচল বা স্থানান্তরের ঘটনা।
বরাবর কঠোর কোভিড নীতি মেনে চলা চীন তিন বছর পর এক্ষেত্রে দৃশ্যত কিছুটা শিথিলতা এনেছে। এতে প্রশ্ন ওঠে চীনের পরিবর্তিত কোভিড নীতি বিপদ ডেকে আনবে কিনা?
তবে চীনের কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসা পরিষেবাগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সাথে সমস্ত স্তরে এবং সব জায়গায় যথাযথ কোভিড ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি নিরাপদ এবং সুস্থ বসন্ত উৎসব উদযাপন করছেন চীনের মানুষ।
ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের হেলথ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অফিসের পরিচালক কুও ইয়ানহং গত বৃহস্পতিবার স্টেট কাউন্সিলের যৌথ কোভিড নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার এক প্রেস কনফারেন্সে বলেন, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা মসৃণ ও সুশৃঙ্খল, কারণ প্রতিদিনের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা যথাযথভাবে শুরু হয়।
দেশব্যাপী হাসপাতালে গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৫ জানুয়ারি শীর্ষে পৌঁছায় এবং ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত তা ৪৪.৩ শতাংশে নেমে আসে।
তিনি যোগ করেছেন যে জ্বরের ক্লিনিক এবং জরুরি কক্ষে রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ২৩ ডিসেম্বর এবং ২ জানুয়ারি সর্বোচ্চ ছিল এবং মঙ্গলবার পর্যন্ত তা যথাক্রমে ৯৪ শতাংশ ও ৪৪ শতাংশ হয়েছে।
কুও বলেছেন, সারাদেশে ৯৯.৫ শতাংশ বহিরাগত রোগী এবং ৮৫ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে প্রতিদিনের চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্রগুলোতে কোভিড রোগীর সংখ্যা কমছে। এটা খুবই আশার কথা।
করোনা ভাইরাসের সদ্য শনাক্ত এক্সএওয়াই.২ রূপের বিষয়ে, চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষণা ফেলো চ্যাং চাওরুই বলেছেন, এটি এখনও চীনে সনাক্ত হয়নি। চ্যাং সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা এখনও প্রয়োজনীয়, এবং যে সমস্ত অভ্যন্তরীণ ভ্রমণকারীর কোভিড -১৯ উপসর্গ রয়েছে তাদের যথাযথ স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
কমিউনিটি-লেভেল এবং গ্রামীণ ক্লিনিকগুলি তাদের কোভিড প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা তৈরি করছে কারণ বসন্ত উতৎসেবর ভ্রমণের ভিড় পুরোদমে চলছে।
কুও ইয়ানহং বলেন যে সারাদেশে ৯৮.৮ শতাংশ টাউনশিপ-লেভেল ক্লিনিক এবং কমিউনিটি হেলথ সেন্টার জ্বর ক্লিনিক স্থাপন করেছে, ছুটির সময়েও যে গুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু থাকবে।
চীনা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ কমিউনিটি পর্যায়ের চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করেছে। এনএইচসি-এর অধীনে ব্যুরো অফ মেডিক্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান চিয়াও ইয়াহুই জানান ১.১৭ মিলিয়ন ফিঙ্গার-ক্লিপ অক্সিমিটার সারা দেশে গ্রাম ক্লিনিকগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে।
১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত, চীনের সম্প্রদায়-স্তরের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলি প্রায় ২.৪৮ মিলিয়ন ফিঙ্গার-ক্লিপ অক্সিমিটার এবং ১ লাখ ৯১ হাজার অক্সিজেন জেনারেটর দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।
অধিকন্তু, ৩১টি প্রদেশ এবং সিনচিয়াং প্রোডাকশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কর্পস একটি বিশেষ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করেছে যাতে একটি সময়মত মূল গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো এবং তাদের প্রয়োজনগুলো পূরণ করা যায়।
অনুমান করা হয় যে এই বছরের ছুটির মওসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি রোড ট্রিপ হবে। সড়ক ভ্রমণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য হাইওয়ে সার্ভিস স্টপগুলোতে একটি ভাল-স্যানিটাইজড, জীবাণুমুক্ত এবং বায়ুচলাচল পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যমাত্রামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং কোভিড সংক্রমিত ভ্রমণকারীদের চিকিৎসার জন্য যোগ্য স্টপে বিশেষ অঞ্চল স্থাপন করেছে।
সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রকের একজন কর্মকর্তা লি সিয়াওইয়ং বলেছেন, ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য রুটিন প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থাগুলো প্রাসঙ্গিক স্থানে সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এ সব তথ্যের পরিপ্রিক্ষেতে জোর দিয়ে বলা যায়, বসন্ত উৎসবে কোভিড নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে চীন, যা এটি নিরাপদ ও আনন্দময় বসন্ত উৎসব উদযাপন নিশ্চিত করবে।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।