আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, আশা করি আপনারা ভাল আছেন। সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আকাশ এবং...।

আকাশ: শুভ চীনা নববর্ষ! 

তৌহিদ: শুভ চীনা নববর্ষ! 

আকাশ: বন্ধুরা, ২২ জানুয়ারি হচ্ছে চীনের ‘ছু ই’ বা চীনা চান্দ্র-নববর্ষের প্রথম দিন। এ বিশেষ মুহূর্তে আমি সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি, আনন্দময় জীবন প্রত্যাশা করছি। আশা করি, এই বছর সবার মনের সুন্দর ইচ্ছাগুলো পূরণ হবে।

তৌহিদ:...

তৌহিদ: আকাশ ভাই, আজ তাহলে আপনি আমাদের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতির কথা বলুন। যেমন গত অনুষ্ঠানে আপনি বলেছিলেন ‘সান সি’র রাতে মানে নববর্ষের আগের দিন-শেষে রাতে সবাই আতশবাজি ফোটান ও নানা কাজ করেন, তাইনা? তারপরের দিন আপনারা কী কী করেন?

আকাশ: সান সি’র রাতে আতশবাজি ফোটানোর অবশ্যই ঘুমাই। কিন্তু সাড়া রাত আতশবাজির শব্দ থাকে এবং মন আনন্দে অনেক উত্তেজিত থাকে। এজন্য রাতে বেশি ঘুম হয় না। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠি। 

তৌহিদ: এত সকালে কেন ??

আকাশ: হ্যাঁ। খুশির কারণে আর ঘুমাতে পারিনা, তাছাড়া কিছু দায়িত্বও থাকে। 

তৌহিদ: দায়িত্ব মানে?

আকাশ: হ্যাঁ, কিছু দায়িত্ব আছে। যেমন- চীনা নববর্ষের প্রথম দিনের নাম হচ্ছে ‘ছু ই’। এদিন সবাই খুব আগে ঘুম থেকে উঠে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধুদের বাসায় গিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায়। এজন্য খুব আগে উঠতে হয় এবং দাদার বাড়িতে গিয়ে প্রথমে দাদাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে হয়। নববর্ষের দিন সবাইকে খুব সকালে উঠতে হয়, কারণ প্রতিবেশীরা যদি বাসায় নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে এসে দরজা বন্ধ দেখেন, তাহলে এটা ভালো নয়। তাইনা? তাই অবশ্যই আগে উঠতে হয়।

তৌহিদ: আচ্ছা। নববর্ষের প্রথম দিনের প্রথম খাবার, মানে নাস্তার কি কোনো রীতিনীতি আছে?

আকাশ: অবশ্যই আছে। ‘ছু ই’ মানে নববর্ষের প্রথম দিন সকালে এবং দুপুরে আবারও আগের দিনের তৈরি চিয়াও জি খেতে হয়। 

তৌহিদ: আবার খেতে হবে?

আকাশ: হ্যাঁ। খেতেই হবে। 

তৌহিদ: এখন আমি বুঝতে পারছি চিয়াও জি চীনাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

আকাশ: হা হা হা, এটা ‘মাছে ভাতে বাঙালি’র মতো।

তৌহিদ: হা হা, আপনি ঠিক বলেছেন। 

আকাশ: ভাই, আপনি এখন বুঝতে পারছেন যে চাও জি চীনাদের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। ভাই, তাহলে বাংলাদেশীর জন্য কি কি খাবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বা উতসবের রীতিনীতির সাথে জড়িত? বিরিয়ানি নাকি ভাই?

তৌহিদ:....

তৌহিদ:... আচ্ছা, নাস্তায় চিয়াও জি খাওয়ার পর আপনি আর কী কী করেছেন?

আকাশ: আমি বাবার সাথে প্রতিবেশী ও বন্ধুদের বাসায় গিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। আমরা প্রথমে পরস্পরকে দেখার সময় বলি: ‘কুও নিয়ান হাও’!

তৌহিদ: কুও নিয়ান হাও।

আকাশ:। হ্যাঁ। মানে শুভ চীনা নববর্ষ।  

আকাশ: ভাই, বাংলাদেশে নববর্ষের প্রথম দিনে, আপনাদের রীতিনীতি কী রকম? কী কী করতে হয়? এবং চাউ জি’র মত কোন খাবার কি খেতে হয়? এ রকম রীতিরীতি আছে?

তৌহিদ:.... পান্তা ভাত + ইলিশ + দেশীয় নানা ধরনের ভর্তা

তৌহিদ: আচ্ছা, নববর্ষের প্রথম দিনের পর চীনারা আর কী করেন?

আকাশ: তারপর নববর্ষের দ্বিতীয় দিন অর্থাত ‘ছু আর’, আমরা নানার বাড়িতে গিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই।

তৌহিদ: প্রথম দিন দাদার বাড়ি, দ্বিতীয় দিন নানার বাড়ি, তাইনা?

আকাশ: হ্যাঁ। সবাইকে যেতে হবে। পরিবারের অনেকে হয়তো সারা বছর দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকেন, এ দিন এক টেবিলে সবাই গোল হয়ে বসে চিয়াও জি ও অন্য খাবার খেতে খেতে গল্প করে। অনেক সুন্দর স্মৃতি।  

আকাশ: বন্ধুরা, আসলে চীনের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি বা উদযাপনের পদ্ধতি চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের। আমার জন্মস্থান হান তান হচ্ছে চীনের উত্তরাঞ্চল। আপনারা এতক্ষণ শুনলেন চীনের উত্তরাঞ্চলের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি। কিন্তু চীনের অন্যান্য অঞ্চলে বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি একটু ভিন্ন। তাহলে আমরা এখন শুনবো, চীনের দক্ষিণাঞ্চলের কিছু রীতিনীতি, কেমন?  

চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের একজন স্থানীয় অধিবাসী সাংবাদিকদের বলেন,  আমি ভাবছি আপনাদের উত্তরাঞ্চলের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতির সঙ্গে আমাদের কিছু মিল আছে। অনেক পার্থক্যও আছে। যেমন বসন্ত উত্সবে আপনারা বেশি বেশি চিয়াও জি খান। আমরা ইয়ুন নানে তুলনামূলকভাবে কম চিয়াও জি খাই। আমরা ‘আর খুয়াই’ খেতে পছন্দ করি। ‘আর খুয়াই’ হচ্ছে ভাত থেকে তৈরি এক ধরনের প্রধান খাবার, এই খাবার খুব নরম এবং সুস্বাদু। সান সি মানে নববর্ষের আগের দিন আমরা ভালোভাবে স্নান করে থাকি। তাহলে নতুন বছরে সব জায়গায় খাবার পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বাসার দরজার পিছনে আমাদেরকে দুটি সুগার-ক্যান বা আখ্ রাখতে হয়। এর মানে নতুন বছরে জীবন দিন দিন উন্নত হবে এবং মিষ্টির মতো সুন্দর হবে। বসন্ত উত্সবে আমরা কোন দিন দাদা বা নানার বাসায় যাবো- তার কোনো নির্ধারিত রীতিনীতি নেই। আমরা সুবিধামতো যাই। 

আকাশ: তৌহিদ ভাই, দক্ষিণাঞ্চলের রীতিনীতি কেমন লাগছে?

তৌহিদ: …

আকাশ: ভাই, এবার আমার একটা প্রশ্ন আছে, আমরা সবাই জানি যে, চীনের ইয়ুন নান প্রদেশ বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি দূরে নয়। বিমানে ঢাকা থেকে ইয়ুন নানে আসতে মাত্র দুই ঘন্টা সময় লাগে। তাহলে ইয়ুন নান প্রদেশের নববর্ষের রীতিনীতি ও বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলের রীতিনীতি বা খাবারের কি কোনো মিল আছে?

তৌহিদ:...

আকাশ: ভাই, আপনি চীনে কয়েক বছর ধরে আছেন। আপনি চীনের বসন্ত উতসবের অভিজ্ঞতা দেখেছেন। এর মধ্যে মজার কোনো স্মৃতি আছে কি?

তৌহিদ:..

আকাশ: বাংলাদেশের নববর্ষ উদযাপনের রীতি কেমন?

তৌহিদ:....

আকাশ: বুঝেছি, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার রীতিনীতি ভিন্ন রকমের, কিন্তু পরিবার, বন্ধুদের ভালোবাসা এবং মনের আনন্দ একই রকম। তাইনা? আশা করি নতুন বছর সবার একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বছর হবে। 

তৌহিদ:...