চিরায়ত চীনা সাহিত্য
2023-01-21 19:48:04

 

কবি সুই হু এবং এক বসন্তের দিনে

বসন্ত ঋতু চীনের প্রাচীন ও মধ্যযুগের কবিদের অধিকাংশের কবিতায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছে। থাং রাজবংশের সময়কে বলা হয় চীনা কবিতার স্বর্ণযুগ। এ যুগের একজন বিখ্যাত কবি সুই।

সুই হুর জন্ম ৭৭২ খ্রিস্টাব্দে বোরিংয়ের সুই পরিবারে। তার আরেক নাম হচ্ছে ইন কুং। সুই হুর প্রেম এবং বসন্ত নিয়ে একটি বিখ্যাত কবিতা চীনা সাহিত্যের কিংবদন্তি।

তরুণ বয়সে সুই হু রাজকীয় চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ছাংআন শহরে যান। তবে পরীক্ষায় তিনি ফেল করেন। এ সময় কিছুটা শান্তি পাওয়ার আশায় তিনি ছাংআন শহরের উপকণ্ঠে নানচুয়াং নামের গ্রামে যান। তৃষ্ণার্ত অবস্থায় এ গ্রামের একটি বড় বাড়িতে তিনি প্রবেশকরে পানি চান।

সেখানে সেই পরিবারের একটি মেয়ের সঙ্গে তার দেখা হয়। মেয়েটি সুন্দরী, অভিজাত, ভদ্র। সেই তরুণী সুই হুকে চা পরিবেশন করেন। সুই হু চা খেতে খেতে দেখতে পান বাড়ির ভিতরের বাগানে সেই তরুণী একটি পুষ্পিত পিচ গাছের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সুই হুর চোখে চোখ পড়ার পর তার ঠোঁটে সিন্গ্ধ হাসি ফোটে। সুই হু প্রথম দেখাতেই মেয়েটির প্রেমে পড়েন।

 

এরপর সুই হু পরের বছর শহরে এসে রাজকীয় চাকরির পরীক্ষায় বসেন। কিন্তু আবার ফেল করেন। তিনি আরেকবার নানছুয়াং গ্রামের সেই বাড়িতে যান। এবার দেখেন বাড়ির ফটক বন্ধ। কেউ কোথাও নেই। শুধু পিচ গাছটা দাঁড়িয়ে আছে অনেক ফুল নিয়ে।

সুই হু এত দুঃখ পান যে তিনি একটি কষ্টের কবিতা লিখে কবিতাটি ওই বাড়ির দেয়ালে রেখে আসেন। এর কিছুদিন পরে সুই হু সেই বাড়িতে আবার আসেন। এবার গৃহকর্তার সঙ্গে তার দেখা হয়। তিনি হলেন সেই সুন্দরী কন্যার পিতা। গৃহকর্তা কাঁদতে কাঁদতে বলেন তারা আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে কবিতাটি দেখে সে ভীষণ কষ্ট পায়। সে মনে করে সুই হু আর কখনও ফিরবেন না। তাই তার কন্যা শোকে ও হতাশায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। এইমাত্র মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে।

সুই হু একথা শুনে দ্রুত ঘরে ঢুকে মৃত প্রেয়সীকে জড়িয়ে ধরে তীব্র স্বরে কাঁদতে থাকেন এবং বলেন, চোখ খোলো, দেখো আমি সুই হু, আমি ফিরে এসেছি।

সুই হুর বেদনা স্বর্গেও আলোড়ন তোলে। এরপর একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে। মৃত মেয়েটি জীবন ফিরে পায়। সে চোখ মেলে তাকায় এবং সুই হুকে দেখে তার ঠোঁটে মৃদু হাসি ফোটে।

এ গল্প চীনা সাহিত্যের ইতিহাসে খুব বিখ্যাত। এখানে বলা হয়েছে সত্যিকারের ভালোবাসা সবসময় জয়ী হয়।

চলুন কবিতাটি শোনা যাক

রাজধানীর দক্ষিণে এক গ্রামে

কবি: সুই হু

গেল বছরের এই দিনে এই বাড়িতে এসেছিলাম আমি

এক গোলাপবর্ণ সুন্দরী এবং গোলাপি পিচফুল ফুটেছিল পাশাপাশি

আজ আমি জানি না, হায় সেই সুন্দর মুখ হারালো কোথায়

বসন্ত বাতাসে আজও তো দোলে প্রস্ফুটিত গোলাপি পিচ ফুল।

প্রতিবেদন ও কবিতা অনুবাদ: শান্তা মারিয়া।

 

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ।

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।