"আচারের বই"-এ বসন্ত উৎসবসংক্রান্ত প্রাচীন রীতিনীতি
2023-01-21 12:30:57

বসন্ত উত্সব চীনা জনগণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্সবগুলির মধ্যে একটি। বসন্ত উৎসবের সময় অভিবাসী শ্রমিকদের দেশের বাড়িতে ফিরে আসা, নববর্ষের আগের রাতের খাবার এবং নববর্ষের প্রথম দিনে শুভেচ্ছা বিনিময় হল আধুনিককালে এ দিবস সম্পর্কে চীনা মানুষের ধারণা। প্রাচীনকালে বসন্ত উত্সবে কী ধরনের শিষ্টাচার এবং রীতিনীতি ছিল? আজ আমরা উত্তর খুঁজে বের করবো‘আচারের বই’ থেকে।

বসন্ত উত্সব গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হল এটি চীনা জনগণের সময়কাল এবং স্থানের মূলসূত্র চিহ্নিত করে। উত্সব হল একটি জাতির সাংস্কৃতিক চিহ্ন। চীন একটি কৃষিপ্রধান দেশ। ফসলের প্রাকৃতিক চক্র চীনা জাতির সময়চেতনা নির্ধারণ করে। চীনা নববর্ষের ঠিক আগের মুহূর্তটা যেন চীনা জাতির সম্মিলিত সময়চেতনার সূচনাবিন্দু।প্রতিটি চীনার জন্য, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পরিবার। চীনের সামাজিক সংগঠনে পরিবার সবচেয়ে মৌলিক, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, উষ্ণতম এবং সবচেয়ে স্থিতিশীল সামাজিক ভূমিকা পালন করে। অতএব, প্রতিটি বসন্ত উত্সবে পরিবারের সদস্যদের সাথে পুনর্মিলনের জন্য নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যেতে হবে।

"আচারের বই" হল কনফুসিয়ান আচার তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে রচিত একটি সংকলন গ্রন্থ, যা পশ্চিমা হান রাজবংশের ধর্মীয় পন্ডিতদের দ্বারা সংকলিত হয়েছিল বলে জানা যায়। “আচারের বই” হল প্রাচীন চীনের আইন ও প্রবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকলন, যার মোট বিশটি খণ্ড এবং ঊনচল্লিশটি অধ্যায় রয়েছে। বসন্ত উৎসবের সময় প্রাচীনদের রীতিনীতি কেমন ছিল তা বোঝার জন্য "আচারের বই" একটি চমৎকার তথ্যসূত্র। 

“আচারের বই”-এ কনফুসিয়াস ও তার শিষ্যদের একটি গল্প বলা হয়েছে। শীতের একদিন, জিগং “লা মাসের বলির উত্সব” দেখতে গিয়েছিলেন, যা প্রতি বছরের শেষে সমস্ত দেবতার উপাসনা করার জন্য আয়োজিত বলিদানের ক্রিয়াকলাপ। দেখার পর, কনফুসিয়াস জিগংকে জিজ্ঞাসা করলেন: "তুমি কি মানুষের আনন্দ দেখেছো?" জিগং বললেন, “সারা দেশের মানুষ পাগলের মত আনন্দিত। কিন্তু আমি বুঝলাম না, তাদের এতো আনন্দিত হওয়ার কী আছে।“ কনফুসিয়াস জিগংকে বলেন: "মানুষ লা মাসের বলির দিনে আশীর্বাদ পাবার জন্য সারাবছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছে। এই ধরনের আনন্দ তোমার বোধগম্যতার বাইরে।" এখানে বলা “লা মাসের বলির উৎসব”ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সবের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রীতি।

বসন্ত উত্সবে বলিদান এমন একটি কার্যকলাপ, যা সরকার থেকে জনসাধারণ পর্যন্ত সবাই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিতো। চীনের চান্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী বছরের দ্বাদশ মাসকে “লা মাস” বলা হয়। এ মাসের বড় বলিদান অনুষ্ঠানকে “লা মাসের বলির উৎসব”বলা হয়। “আচারের বই”-এ বলা হয়, এ মাসে সম্রাট তার কর্মকর্তাদের সাথে একটি ভোজসভায় মিলিত হন এবং মন্দিরে বলিদান করেন। বলিদানের প্রক্রিয়া এমন: সম্রাট সূর্য, চন্দ্র এবং নক্ষত্রের কাছে আসন্ন বছরে ভাল আবহাওয়া এবং ভাল ফসলের জন্য প্রার্থনা করেন এবং ভূমির দেবতার উদ্দেশ্যে বলি দেওয়ার জন্য লোকদের পশু জবাই করার আদেশ দেন। ক্ষেতের শিকার থেকে প্রাপ্ত পশু দিয়েই পাঁচটি যজ্ঞ করা হয়। একই সময়ে, সরকার কৃষকদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ছুটি দেয়। শিষ্টাচারের মাধ্যমে চালু করা সারা দেশের একটি "কার্নিভাল" এভাবে ধীরে ধীরে শুরু হয়।

বলিদান ছাড়াও, আনন্দদায়ক ভোজ ও বিনোদনও রয়েছে। “আচারের বই”-এ বলা হয়েছে, বলিদানের পরে সবাই নৈবেদ্য উপভোগ করে। লা মাসের বলির উত্সবের নৈবেদ্য পোরিজে সিদ্ধ করা হয়, যা লোকেরা ভাগ করে খায়। লোকেরা তাদের নিজস্ব কৃষিজাত পণ্য এবং শিকারের পশুকে দেবতাদের জন্য বলি হিসাবে ব্যবহার করে। একদিকে তারা ফসল কাটা উদযাপন করে; অন্যদিকে, তারা দেবতাদের আশীর্বাদের জন্য কৃতজ্ঞতা জানায়। তাই বলি একদিকে পবিত্র অনুষ্ঠান এবং মানুষের জন্য উৎসবও বটে।

চুলায় বলি দেওয়াও বসন্ত উৎসবের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রীতি। চুলায় বলির লক্ষ্য হচ্ছে রান্নাঘরের দেবতাকে খুশি করা। “আচারের বই”-এ বলা হয়েছে, চুলায় বলিদান করা মহিলাদের জন্য নির্ধারিত একটি কাজ।

একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য হিসেবে, বসন্ত উৎসব চীনা জাতির মানুষকে আরও গভীরভাবে একত্রিত করে। ঐতিহ্য অতীতে বীজ বপন করে এবং বর্তমানে ফল দেয়। দ্রুতগতির জীবন থেকে খানিকটা বিরতি নেওয়া এবং ব্যস্ততার মধ্যেও পরিবারের উষ্ণতা খোঁজা এখনও প্রতিটি চীনার মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা।  (ইয়াং/আলিম/ছাই)