প্রতি বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে যেকাজ করেন সি চিন পিং
2023-01-20 14:15:39

দেখতে দেখতে চীনের ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সব চলে এসেছে। প্রতিবছরের বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একান্ত একটি কাজ করেন। সেটি হলো, তৃণমূল স্তরের নানা মানুষের খোঁজখবর নেওয়া ও তাদের শুভেচ্ছা জানানো। সিপিসি’র অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর থেকে এ পর্যন্ত চীনের প্রেসিডেন্টের বসন্ত উত্সবের যাত্রা ২০ হাজার কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা ফিরে তাকাবো বসন্ত উত্সবের সময় চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কোথায় গিয়েছিলেন এবং কাদের সঙ্গে দেখা করলেন—সেদিকে।

মাত্র কয়েকদিন আগে বা গত ১৮ জানুয়ারি ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, ভিডিও-লিঙ্কের মাধ্যমে, দেশের বিভিন্ন জাতির মানুষকে বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানান। তিনি প্রথমে হেই লুং চিয়াং প্রদেশের হারবিন শহরের হাসপাতালের চিকিত্সক ও রোগীদের সাথে ভিডিও-লিঙ্কের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তিনি এরপর ফুচিয়ান প্রদেশের ফুচৌ শহরের সামাজিক কল্যাণকেন্দ্রের প্রবীণ বাসিন্দা ও কর্মীদের সঙ্গে ভিডিও-লিঙ্কের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।     চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তাকলামাকান মরুভূমিতে অবস্থিত তালিমু তেলক্ষেত্র চীনের ভূস্থলের তৃতীয় বৃহত্তম তেলক্ষেত্র। সি চিন পিং তালিমু তেলক্ষেত্রের কর্মীদের সঙ্গেও ভিডিও-কলের মাধ্যমে কথা বলেন।  সি চিন পিং দেশের রেলপথের কর্মী ও যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি যাত্রীদের আনন্দময় যাত্রা কামনা করেন। বেইজিংয়ের সিনফাতি কাঁচাবাজারের কর্মী ও ক্রেতাদের ভিডিও-কলের মাধ্যমে বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানান সি চিন পিং। তৃণমূল সকলের প্রতি সি চিন পিং আশা করেন যে, আসন্ন খরগোশ বর্ষে চীন আরও সমৃদ্ধ হবে, জনগণের জীবন হবে আরও নিরাপদ ও সুখের।   

 

২০১৭ সালে হ্যপেই প্রদেশের তেশেং গ্রাম পরিদর্শন করেন সি চিন পিং


২০২২ সালের বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে তীব্র শীতে তুষারপাতের মধ্যে সানসি প্রদেশ গিয়ে সেখানকার জনসাধারণকে শুভেচ্ছা জানান সি চিন পিং। ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছরের এ সময় তিনি তৃণমূল পর্যায়ের জনসাধারণকে নিয়ম করে দেখতে যান। এটি তাঁর এ রকমের দশম সফর।

২০২১ সালের অক্টোবরে সানসি প্রদেশে ইতিহাসের বৃহত্তম শরত্কালীন বন্যা দেখা দেয়। প্রদেশটির ১১টি শহর দুর্যোগকবলিত হয়। ফেংনানইউয়ান গ্রামবাসী শিহ্যবিং’র পরিবারের ৪টি বাড়িঘর সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু মাত্র দু’মাস পর তিনি নবনির্মিত বাড়িঘরে উঠতে পারেন। এ বাড়িঘর পুনঃনির্মাণে ব্যয় করা হয় ১ লাখ ইউয়ান। শিহ্যবিং ১২ হাজার ইউয়ান ব্যয় করেছেন।  বাকি অর্থ সরকার ও সামাজিক ত্রাণতহবিল থেকে এসেছে। এ দিন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং শিহ্যবিং’র বাড়ীতে তার পরিবারের সকলের খোঁজখবর নেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

সেসময়ের কথা স্মরণ করে শিহ্যবিং বলেন, “প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আমাদের বসন্ত উত্সবের কেনাকাটা হয়েছে কি না, আমাদের নতুন বাড়িঘরের সাজসজ্জার কাজ কেমন চলছে, ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজখবর নেন। তাঁকে জানানোর পর তিনি খুব সন্তুষ্ট হন। তিনি সবসময় জনসাধারণের কাছে যাওয়া-আসা করেন, তাদের দৈনন্দিন জীবনের খোঁজখবর নেন। জনগণের প্রকৃত ভালো নেতা তিনি।”

২০২০ সালে ইউননান প্রদেশের সিমোলা গ্রাম পরিদর্শন করেন সি চিন পিং

বসন্ত উত্সবের এ বিশেষ সময় দুর্গতদের কথা সবচেয়ে বেশি মনে করেন সি চিন পিং। তিনি সানসি প্রদেশের দুটি গ্রাম পরিদর্শন করেন। ২০১৩ সাল থেকে সি চিন পিং দশ বার এ ধরনের সফরে যান। এর মধ্যে ৬ বারই তাঁর সফর শুরু হয় গ্রাম দিয়ে। ২০১৩ সালে কানসু প্রদেশের ইউয়ানকুতুই গ্রাম, ২০১৫ সালে সায়ানসি প্রদেশের লিয়াং চিয়াহ্য গ্রাম, ২০১৭ সালে হ্যপেই প্রদেশের তেশেং গ্রাম, ২০১৮ সালে সিছুয়ান প্রদেশের সানহ্য গ্রাম, ২০২০ সালে ইউননান প্রদেশের সিমোলা গ্রাম এবং ২০২২ সালে সানসি প্রদেশের ফেংনানইউয়ান গ্রাম পরিদর্শন করেন সি চিন পিং। বিভিন্ন স্থানে জনসাধারণ কেমন জীবন কাটাচ্ছে, প্রতিবারের সফরে তিনি সেসবের খোঁজখবর নেন।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিছুয়ান প্রদেশ পরিদর্শনের সময় তিনি দূরদূরান্তের তালিয়াংশান গিয়ে প্রতিটি দরিদ্র পরিবারের খোঁজখবর নেন। তাদের জীবন কেমন চলছে, উপার্জন কেমন, শিশুদের লেখাপড়ার অবস্থা কী, ইত্যাদি বিষয়ে তিনি জানতে চান।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কুইচৌ প্রদেশ পরিদর্শনের সময় স্থানীয়দের বাসস্থান ঘুরে দেখেন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সানসি প্রদেশ পরিদর্শনের সময় গ্রামবাসী ছাইওয়েনমিং’র বাড়ী ঘুরে দেখেন সি এবং তার আয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান।

ছাইওয়েনমিং’র রান্নাঘর ঘুরে দেখেন সি চিন পিং

ছাইওয়েনমিং’র গ্রাম যেজেলায় অবস্থিত, তার নাম ফেংসি। এ জেলা চীনের ১৪টি চরম দরিদ্র অঞ্চলের অন্যতম। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ফেংসি জেলা সামগ্রিকভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হয়।

কুইচৌ প্রদেশের বিচিয়ে শহর উ মেং পবর্তাঞ্চলের কাছে অবস্থিত। এটি চীনের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলগুলোর অন্যতম। ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর, কুইচৌ প্রদেশের বাকি ৯টি জেলা দারিদ্র্যমুক্ত হয়। সেসময় পর্যন্ত চীনে ৮৩২টি দরিদ্র জেলা সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হয়।

২০২১ সালের বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিচিয়ে শহর পরিদর্শন করেন। তার সেবারকার সফরের অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্য ধরে রাখার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা। সফরকালে তিনি জোর দিয়ে বলেন, দারিদ্র্যবিমোচনের পর সবার উচিত অব্যাহতভাবে গ্রামীণ পুনরুদ্ধার এবং কৃষি ও গ্রামের আধুনিকায়নের কাজ বেগবান করা।

কুইচৌ প্রদেশের দারিদ্র্যবিমোচন কার্যালয়ের তত্কালীন  মহাপরিচালক লিচিয়ান বলেন, দারিদ্র্যমুক্তকরণের শিল্প এবং কর্মসংস্থানে সমর্থন জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে, স্থানান্তরিত হওয়ার পর সমর্থকব্যবস্থা গঠন দ্রুততর ও বৃদ্ধি করতে হবে। দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্য সুসংবদ্ধ করতে এবং সার্বিকভাবে গ্রামীণ নির্মাণে কাজ করে যেতে হবে।

মিয়াও জাতির সেলাই শিল্প

গ্রামীণ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে স্থানীয় বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ও সুবিধাজনক শিল্পের ওপর নজর রাখেন সি চিন পিং। সানসি প্রদেশে তিনি কৃষি ও গ্রামের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া জোরদারের কথা বলেন।  কুইচৌ প্রদেশের হুয়া উ গ্রাম পরিদর্শনের সময় তিনি বিশেষভাবে দারিদ্র্যমুক্তকরণের কারখানায় গিয়ে স্থানীয়

মিয়াও সেলাই শিল্প উন্নয়নের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।  

কুইচৌ প্রদেশের হুয়া উ গ্রামে দারিদ্র্যমুক্তকরণের কারখানায় ৩০ জন সূচীকর্মী রয়েছেন। ২০২০ সালে এ কারখানার বিক্রির পরিমাণ ১০ লাখ ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। সি চিন পিং বলেন, বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মিয়াও জাতির সেলাইশিল্প ঐতিহ্যবাহী ও ফ্যাশন্যাবল। এটি চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সম্প্রসারণের পাশাপাশি গ্রাম পুনরুজ্জীবনে সহায়ক।  

গ্রাম পুনরুজ্জীবনের কাজ বেগবান করা এবং অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জন করার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে গেলে চ্যালেঞ্জ ও দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে হবে। এ পথে লাখ লাখ তৃণমূল স্তরের পরিশ্রমী লোকজনের অবদান অপরিহার্য। তাদের কথা সবসময় মনে করেন সি চিন পিং। ২০১৯ সালের বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিংয়ে এক পরিদর্শনশেষে ফেরার পথে একটি ডেলিভারি সেবাকেন্দ্রে যাত্রাবিরতি করেন। তিনি গাড়ি থেকে নেমে সেখানকার কর্মরত ডেলিভারিম্যানের সঙ্গে কথা বলেন। ডেলিভারিম্যান ছিনাননান বলেন, “প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আমাদেরকে আদর করে ‘ব্যস্ত মৌমাছি’ বলে ডাকেন। যার অর্থ আমরা মৌমাছি’র মতো পরিশ্রমী। তাতে আমি খুব উত্সাহিত বোধ করি। প্রতিটি প্যাকেজ নিরাপদে গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে দিতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব।”

বসন্ত উত্সবের সময় আত্মীয়দের কাছে যাওয়া চীনের রীতি। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিভিন্ন স্থানে স্থানীয়দের সঙ্গে দেখা করেন, তাদের শুভেচ্ছা জানান। তাদের উষ্ণ শুভেচ্ছা ও কামনায় অনেকে আবেগী ও উত্সাহিত হন।

(রুবি/আলিম)