বসন্ত উত্সবের কেনাকাটায় ফুটে ওঠে চীনের ঐতিহ্য
2023-01-20 14:22:30


চীনের ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সব ঘনিয়ে আসছে। উত্সবের কেনাকাটায় ব্যস্ত সকল চীনা। দক্ষিণ, উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের পণ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি জমজমাট বাজার এবং উত্সবমুখর চীন।

সম্প্রতি যোগাযোগমাধ্যমে একটি প্রশ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে: চলতি বছরের বসন্ত উত্সবের কেনাকাটায় কী কী কিনতে চাও?  একজন নেটিজেন বলেছেন, “জন্মস্থানের স্বাদ পেতে চাই”। তার কথা অনেক নেটিজেনের মনের কথা।

জন্মস্থানের স্বাদ চায় মন। বিভিন্ন স্থানে বসন্ত উত্সবের স্বাদ টেস্ট করা বর্তমানে চীনে খুব প্রচলিত। বেইজিংয়ের জনৈক নাগরিক অনেক আগে হ্যপেই প্রদেশের চাংচিয়াখৌয়ে যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকিট বুকিং দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বেইজিংয়ের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবার কিনেছি। বাড়িতে ফিরে আত্মীয়দের সঙ্গে শেয়ার করবো।”

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০২৩ সালের চীনব্যাপী বসন্তের পণ্যউত্সব ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবার বিক্রি করছে। চীনের চিংতোং বসন্তের কেনাকাটার তালিকা তৈরি করেছে। তাতে ‘নানা স্থানের বিশেষ খাবার” এবং ‘স্থানীয়দের প্রিয় খাবার’ শীর্ষক দুটি ভাগ রয়েছে।

হ্যমা মার্কেটে শতাধিক নিজস্ব তৈরি বিশেষ পণ্য উঠেছে। এসব পণ্য গোটা চীনের ভোক্তাদের কাছে যাবে। হ্যমা প্রতিষ্ঠানের বেইজিংয়ের  দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কাওছিয়াং বলেন, “বর্তমানে বেইজিংয়ে বসন্ত উত্সবের ইভ ডিনারসেট খুব জনপ্রিয় হয়েছে, বিক্রি বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।”

চিয়াংসু প্রদেশের নানচিন শহরের কাওছুন পুরানো সড়কে ঐতিহ্যবাহী স্ন্যাক্স টেস্ট করা যায়, ড্রাগন নাচ উপভোগ করা যায়। হেইলুংচিয়াং প্রদেশের চিসি শহরের সিংখেই লেকে শীতকালীন মত্স্য শিকারে অংশগ্রহণ করা যায়। বেইজিংয়ের মিইউয়ানের কুপেই ওয়াটার টাউনে বসন্ত উত্সবের মেলা ঘুরে দেখা যায় এবং মহাপ্রাচীরের পাদদেশে নানা সুস্বাদু খাবার খাওয়া যায়। শুধু কেনাকাটার মজা নয়, সকল চীনা মজার খাবার খেতে এবং মজার খেলা খেলতে চায় এসময়। ঘুরে বেড়ানো, খাওয়া-দাওয়া করা, কেনাকাটা করা এবং বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা বসন্ত উত্সবের বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। 

উত্সবের কেনাকাটায় ‘সুখ’ লেখা কাগজ, শ্লোকসমৃদ্ধ কাগজ, চাল, ডাল, তেল, ফলমূলসহ ঐতিহ্যবাহী পণ্য স্থান পায়। তবে ভোগের চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি চীনে উচ্চমানের পণ্যের চাহিদাও অনেক বেড়েছে। চেরিফল, বড় চিড়িং মাছসহ নানা সামুদ্রিক পণ্য, আমেরিকান জিনসেংসহ নানা স্বাস্থ্যকর পণ্য এবং ক্লিনিং রোবটসহ স্মার্ট ইলেক্ট্রনিক পণ্য তরুণ-তরুণীদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে।

স্বাস্থ্যকর উপহার চলতি বছরে গরম উপহারগুলোর অন্যতমে পরিণত হয়েছে। জনাব ওয়াং সানসি প্রদেশের থাইইউয়ানে ফিরে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘অন্য স্থানে কাজ করি আমি। বাবামা’র শারীরিক অবস্থা নিয়ে খুব চিন্তিত থাকি। তারা নিজেদের স্বাস্থ্যের যথার্থ যত্ন নিতে পারেন না। এবার আমি নববর্ষে একটি ছোট উপহার হিসাবে স্ফিগমোম্যানোমিটার কিনেছি। আমি আশা করি, তারা এটি প্রায়শই ব্যবহার করতে পারবেন, যা আমার চিন্তা অনেক দূর করবে।”

নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলানীতি শিথিল করার পর, বসন্ত উত্সবকে সামনে রেখে চীনের মানুষের জীবন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তাদের অনলাইন ও অফলাইন ভোগও ক্রমশ বাড়ছে। বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুচিয়ান বলেন, বসন্ত উত্সবের কেনাকাটা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রাণশক্তি যোগাবে।  

প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এ পর্যন্ত। আমাদের অনুষ্ঠান কেমন লাগলো? আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের ফেসবুকের মেসেঞ্জার ব্যবহার করতে বা আমাদের ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করতে ভুলবেন না। আমাদের ইমেইল ঠিকানা হলো:  । আপনাদের চীনের বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ করছি আজকের অনুষ্ঠান। সবাই ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন। 

(রুবি/আলিম)