চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বসন্ত উৎসবের রীতিনীতি উপভোগ করুন
2023-01-20 08:00:05

বসন্ত উৎসব হল চীনাদের বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী উৎসব। তা পুরানো বছরকে বিদায় দেওয়া এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর সময়, যা সবসময় মানুষের জীবনে নতুন আশা বয়ে আনে। এই উৎসবে চীনাদের বিশেষ রীতিনীতি আছে, যেমন উৎসবের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী কেনা, ‘ফু’ অক্ষর অর্থাত্ ‘সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধ’ অর্থের চীনা অক্ষরের পোস্টার লাগানো, ডাম্পলিং তৈরি করা, উৎসবের শুভকামনা জানানো ইত্যাদি। যা চীনের সংস্কৃতি, ইতিহাসের প্রতিফলন ঘটায়। আজ আমরা চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এসব রীতিনীতি জানবো।

 

বসন্ত উৎসব উদযাপনের অনুভূতি বিভিন্ন সামগ্রী কেনার মাধ্যমে শুরু হয়।

২০১৫ সালের বসন্ত উৎসবের আগে, সি চিন পিং নিজের টাকা দিয়ে কেনা উৎসব কাটানোর জিনিস নিয়ে চীনের শায়ানসি প্রদেশের লিয়াং চিয়া হ্যতে ফিরে যান। ফিরে যাওয়ার কথা বলার অর্থ হলো- কারণ তরুণ বয়সে সি চিন পিং সেখানে সাত বছর কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সেখানে তিনি সারা জীবনের জন্য শিক্ষণীয় সময় কাটিয়েছেন। সেখানে তিনি সত্যিকার অর্থে জনগণকে বুঝতে পেরেছেন। তিনি বুঝেছিলেন তিনি এই হলুদ জমির ছেলে।

তিনি ডাম্পলিং ময়দা, চাল, তেল, মাংস... ইত্যাদি নানা জিনিস নিয়ে যান। এটা তাঁর স্মৃতির সেই জায়গা এবং স্থানীয় মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসার প্রতিফলন।

 

তরুণ বয়সে লিয়াং চিয়া হ্যতে থাকার সময়ে সি চিন পিং চীনের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র অবস্থা গভীরভাবে বুঝতে পেরেছেন। তিনি আশা করেন, স্থানীয় লোকজন ভালো করে মাংস খেতে পারবে এবং সবসময় আমিষ খেতে পারবে।

জনগণের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি সি চিন পিং কখনই ভুলেন নি। প্রতি বছর সি চিন পিং যে বসন্ত উৎসব কাটানোর উপহার দিয়েছেন, এতে দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার নির্দেশনা আছে, আরো আছে জনগণের প্রতি তাঁর যত্ন। এখন তাঁর সেই আশা পূরণ হয়েছে, চীনে সার্বিক সচ্ছল সমাজে পা দিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে চরম দারিদ্র্যের সমস্যা কেটে গেছে।

সুখী চীনা বসন্ত উৎসব কাটাতে ‘ফু’ উচ্চারণের চীনা অক্ষরের পোস্টার লাগানো হয়।

প্রতি বছরের বসন্ত উৎসবে চীনা জনগণ বড় ছোট বিভিন্ন আকারের ‘ফু’ অক্ষর লাগায়। যাতে সুখী জীবনের প্রতি লোকজনের সুন্দর আকাঙ্খা এবং শুভকামনা প্রকাশ পায়।

বসন্ত উৎসবের সময় সি চিন পিং সবসময় জনগণের মাঝে যান। আর এ সময় সর্বদা লাল রং-এর ‘ফু’ থাকে।

 

২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সি চিন পিং বেইজিংয়ে জনগণকে বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়ে ছিয়ান মেন এলাকায় যান।

স্থানীয় বাসিন্দা সি চিন পিং-এর জন্য একটি উৎসবের ছন্দ লিখে দেন। যার অর্থ- সুন্দর আবহাওয়ায় স্থানীয় এলাকায় রঙিন ফিনিক্স ওড়ে, সবাই সুন্দর আকাঙ্খা পূরণ করতে পারে, জীবন দিন দিন সুন্দর হতে পারে।

সি চিন পিং তা শুনে অনেক আনন্দিত হন এবং লাল রং-এর ‘ফু’ পোস্টার দরজায় লাগান। যাতে সবাইকে বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা জানানো যায়।

বসন্ত উৎসব কাটাতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি হল আত্মীয়স্বজনকে দেখতে যাওয়া। ‘শুভ বসন্ত উৎসব’, সহজ কথাটি লোকজনের মনে সবচেয়ে উষ্ণ অনুভূতি সৃষ্টি করে।

 

বসন্ত উৎসবের সময় সি চিন পিং সবসময় বিভিন্ন স্থানের জনগণের সঙ্গে দেখা করেন। যেখানে তিনি যান, সেখানের রীতিনীতি অনুযায়ী তিনি জনগণের সঙ্গে উৎসব কাটান। জনসাধারণ বলে, প্রেসিডেন্ট দূরের মানুষ না, বরং আমাদের আত্মীয়ের মতো আপন মনে হয়।

২০১৪ সালে ইনারমঙ্গোলিয়ায় স্থানীয় ‘নাদাম মেলায়’ সি চিন পিং অংশ নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি সারা দেশের বিভিন্ন জাতির জনগণকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সি মঙ্গোলীয় জাতির রীতিনীতি অনুযায়ী, রূপালী বাটি থেকে আঙুলে দুধ নিয়ে তিন বার ঝাড়েন, এতে নতুন বছর সুষ্ঠু হোক, জনগণ সুখী হোক এমন শুভকামনা প্রকাশ করা হয়।

 

২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি সি চিন পিং শানসি প্রদেশের ফেন সি জেলার তুয়ান গ্রামে গিয়ে জনসাধারণকে বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা জানান। সাদা সাদা তুষার, লাল লণ্ঠন, সবখানে উৎসবের আনন্দময় আমেজ উপভোগ করা যায়। প্রেসিডেন্ট সি সবাইকে বলেন, দেশের আধুনিকায়ন বাস্তবায়নে কৃষি ও গ্রামের আধুনিকায়ন করতেই হবে। দারিদ্র্যমুক্তকরণের সুফল এবং গ্রামীণ পুনরুদ্ধার সংযোগ করে গ্রামের জীবনকে আরো সুন্দর করা যাবে।

 

২০১৬ সালের ১ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চিয়াংসি প্রদেশের জনগণের খোঁজখবর নিতে যান। জিং কাং শান শহরের শেন সান গ্রামে প্রেসিডেন্ট সি চুও সিউ ফা নামে এক কৃষকের পরিবারে যান। তার পরিবারে প্রেসিডেন্ট সি কাঠ নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে স্থানীয় খাবার ‘ছি পা’ অর্থাত্ বাষ্প চাল দিয়ে তৈরি করা মিষ্টি বানানো শুরু করেন। চুও পরিবার বাঁশ দিয়ে হস্তশিল্প তৈরি করে এবং মাছ চাষ করে; আর নতুন বাড়িঘরও নির্মাণ করে। তা জেনে প্রেসিডেন্ট সি খুব খুশি হন, তিনি আশা করেন- এই পরিবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নতুন বাড়িতে উঠতে পারবে। এতে তাদের জীবন আরো সুন্দর হবে।

 

২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হ্যপেই প্রদেশের চাংপেই জেলার গ্রামাঞ্চল পরিদর্শন করেন। কৃষক সুই ওয়ানের পরিবারে গিয়ে প্রেসিডেন্ট সি জিজ্ঞেস করেন, পানীয় জল কোথা থেকে এসেছে, টিভি কখন কিনেছে, কয়টি চ্যানেলে অনুষ্ঠান দেখা যায়, বসন্ত উৎসব কীভাবে উদযাপন করে। পারিবারিক জীবনের সুখ দেখে প্রেসিডেন্ট সি আনন্দিত হন।

 

অন্য এক কৃষক সুই সুয়েই হাই-এর পরিবারে গিয়ে, প্রেসিডেন্ট সি জানতে পারেন যে, সুই সুয়েই হাই হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচার করেছেন, তখন ৪০ হাজার ইউয়ান ঋণ নিতে হয়। এরপর তিনি আর ভারি কাজ করতে পারেন না। তিনি তাকে ভালোভাবে বিশ্রাম নেয়ার কথা বলেন, সেই সঙ্গে তিনি স্থানীয় কর্মকর্তাকে বলেন যে, রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণে লোকজনের গরীব হওয়ার সমস্যা সমাধান করতে হবে, সময়মতো তাদের সাহায্য দিতে হবে। সুই সুয়েই ছিং প্রেসিডেন্ট সিকে রাইস কেক ভাজার আমন্ত্রণ জানান, প্রেসিডেন্ট খুব আনন্দের সঙ্গে পরিবারের সাথে সেই খাবার তৈরি করেন।

 

২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি, প্রেসিডেন্ট সি সিছুয়ান প্রদেশের ওয়েন ছুয়ান জেলার ইং সিউ থানা পরিদর্শন করেন। সেখানে ভূমিকম্পের দশ বছর পর উন্নয়ন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। স্থানীয় লোকজনের চায়ের দোকানে গিয়েছেন। তিনি চা শিল্পের উন্নয়ন এবং লোকজনের আয় বৃদ্ধির অবস্থা জানতে পেরেছেন, লোকজনের সঙ্গে মাখন চা তৈরি করেছেন। কৃষকদের রেস্তোরাঁয় গিয়েছেন, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য কেমন, পরিবারের জীবন কেমন তা জিজ্ঞেস করেছেন এবং স্থানীয় খাবার রান্না করার চেষ্টাও করেছেন।

জনগণের খোঁজ খবর নেওয়া, তাদের জীবনের প্রকৃত অবস্থা জানা, প্রত্যেক বসন্ত উৎসবে প্রেসিডেন্ট সি’র নিয়মিত কাজ।

 

আসলে, বসন্ত উৎসবের রীতিনীতিতে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি ও স্বাদ, তা যুগের সঙ্গে এগিয়ে যায়। এতে একটি দেশ ও জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উপভোগ করা যায়। নতুন বছরে, সবার জীবন সুষ্ঠু হোক, সুন্দর হোক, সমৃদ্ধ হোক, এই কামনা করছি।

(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)