আকাশ ছুঁতে চাই -- ১
2023-01-19 19:06:35

আকাশ ছুঁতে চাই -- ১

কী রয়েছে আমাদের অনুষ্ঠানে

১. বাংলাদেশে চীনাভাষার প্রসারে কাজ করছেন ইয়াং হুই

২. ঐতিহ্যের ধারক মিয়াও নারী আরবাওলাং

৩. চীনা নববর্ষ পালনে লাওসের নারীরা

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারীর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী ও শিশুর অধিকার নিয়ে।

বাংলাদেশে চীনাভাষা প্রসারে কাজ করছেন ইয়াং হুই

আজ আমরা কথা বলবো এমন একজন নারীর কথা যিনি সুদূর চীন থেকে বাংলাদেশে এসে চীনাভাষা শিক্ষা দিচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে স্থাপিত কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর ম্যাডাম ইয়াং হুই।

                                             

তার জন্ম চীনের ইউননান প্রদেশের সিশুয়াংবান্না অঞ্চলে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি করেন তিনি।

এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীনাভাষা ও সংস্কৃতিতে শিক্ষাদানের কাজ করছেন দীর্ঘ অনেক বছর ধরে।

বাংলাদেশে এসেছেন ২০২২ সালে। তিনি বলেন, ‘২০২২ সাল থেকে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করি।’

তখন কোভিড ১৯ মহামারির ধকল কাটিয়ে আবার ক্লাস শুরু করে কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট। এরআগে অনলাইনে ক্লাস চলেছে মহামারির সময়টায়।

নতুন দেশে, নতুন পরিবেশে, নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যান ইয়াং হুই।

বাংলাদেশের সমাজে তাকে অবশ্যই নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। কারণ এখানকার ভাষা তিনি জানেন না। এই দেশের রীতিনীতির সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেন ইয়াং হুই।

পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দূরে রয়েছেন। অবশ্যই তাদের মিস করেন। বিশেষ করে তার ছেলেকে খুবই মিস করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষভাবে আমার ছেলেকে মিস করি।’

কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের কাজ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা নারী ইয়াং হুই। তিনি বর্তমানে বাংলা ভাষা্ও কিছু কিছু শিখছেন। তিনি বাংলায় কিছু কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘হ্যা, আমাকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। বিশেষভাবে ভাষার প্রতিবদ্ধকতা অনেক কঠিন বিষয়। আমি স্থানীয়ভাষা জানি না। সেজন্য আমি বাংলাভাষা শিখছি। যেন আমি স্থানীয় জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি। বিশেষ করে যারা ইংরেজি জানেন না। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যই আমি বাংলাভাষা শিখছি। আমি মনে করি ভাষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি বিষয় হলো সংস্কৃতি। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের জন্য সাংস্কৃতিক আদান প্রদান খুব জরুরি। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপনের জন্য কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের চীনা ভাষা শিক্ষাদান করছে।’

ঢাকা মহানগরীতে নিজের কাজ ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন ইয়াং হুই। তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার গল্প সাহস ও অনুপ্রেরণা দিচ্ছে অন্যদেরও।

সুপ্রিয় শ্রোতা আপনারা শুনছেন, নারী বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই।

ঐতিহ্যের ধারক মিয়াও নারী আরবাওলাং

ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নিজের ভাগ্য উন্নয়নের চাবিকাঠি করে নিয়েছেন এমন একজন নারী হলেন চীনের মিয়াও জাতির আরবাওলাং। চলুন শোনা যাক তার গল্প। বলছেন আফরিন মিম।

চীনের ৫৬ জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম মিয়াও জাতি। মিয়াও জাতির রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। মিয়াও নারীরা অনেক রকম হাতের কাজ জানেন। তারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌছে দেন এইসব কারুশিল্প। এম নি একজন ঐতিহ্যের ধারক নারী ইয়াং আরবাওলাং। তিনি মিয়াও জাতির বিশেষ কারুশিল্প মোমবাটিকের একজন দক্ষ শিল্পী। এই শিল্পের মাধ্যমে তিনি অবস্থার উন্নয়নও ঘটিয়েছেন।

চীনের কুইচোও প্রদেশের মিয়াও স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচার তানচাইতে বাস করেন আরবাওলাং। শৈশবে মা ও দাদী নানীর কাছ থেকে তিনি মোম বাটিকের কাজ শেখেন। সব মিয়াও নারীরাই কমবেশি এই শিল্পকর্মটি জানে।

একসময় আরবাওলাং চিন্তা করেন এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে ব্যবহার করে তিনি ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিবেন। ২০১৪ সালে তিনি নারীদের নিয়ে একটি সমবায় সমিতি গঠন করেন। এই সমিতি থেকে তারা মোবাটিকে রং করা বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি ও বিপণন করতে থাকেন।

স্থানীয় সরকার তাকে এ বিষয়ে সহায়তা দেয়। মিয়াও জাতির মানুষ মোমবাটিকের যেসব ঐতিহ্যবাহী সামগ্রী ব্যবহার করে সেগুলোর পাশাপাশি তিনি আধুনিক শহুরে জীবনে ব্যবহার্য সামগ্রীও তৈরি করতে শুরু করেন এই বাটিক কাপড় দিয়ে। লেডিস ব্যাগ, বেডকভার, কুশনকাভার, ল্যাম্পশেড ইত্যাদি তৈরি করেন মিয়াও নকশার বাটিক কাপড়ে।

বর্তমানে আরবাওলাংয়ের কারখানার আয়তন ৫০০ বর্মিটার। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শুধু তার নিজের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই আসেনি, বরং তার গ্রামের অন্য পরিবারগুলোও স্বচ্ছলতার মুখ দেখেছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে চীনের দারিদ্র্যবিমোচন সাফল্যে এভাবেই নিজের অবদান রেখেছেন মিয়াও জাতির উদ্যমী নারী আরবাওলাং।

চীনা নববর্ষ পালনে লাওসের নারীরা

চীনা নববর্ষকে সামনে রেখে এক মজার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়  লাওসের ভিয়েনতিয়েনে অবস্থিত চায়না কালচারাল সেন্টারে। এখানে অনেক নারী  ডাম্পলিং বানিয়ে উৎসব পালন করেন। বিস্তারিত বলছেন হোসনে মোবারক সৌরভ

আসন্ন চীনা নববর্ষ বা বসন্ত উৎসবকে সামনে রেখে লাওসের ভিয়েন তিয়েনে অবস্থিত চায়না কালচারাল সেন্টারে এক মজার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এখানে লাও উইমেন’স ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ইনলাভান কেওবোনফানসহ অনেক বিশিষ্ট নারী অংশ নেন।

অনুষ্ঠানটি ছিল মূলত সিক্সটি সেভেন স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি পুনর্মিলনী । ষাটের দশকে চীনের সঙ্গে লাওসের মৈত্রীর সূচনা ঘটে। ৬৭ সালে স্থাপিত এই মৈত্রীকে স্মরণীয় করতে ষাটের দশকে দক্ষিণ চীনের  কুয়াংসি চুয়াং প্রদেশের রাজধানী নাননিংয়ে স্থাপন করা হয় ‘সিক্সটি সেভেন’ নামে একটি মৈত্রী স্কুল।  এই স্কুলে চীনা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পাশাপাশি লাওসের এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক অংশ নিয়েছেন যাদের অধিকাংশই নারী।

লাও উইমেন’স ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ইনলাভান কেওবোনফান এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে চীন ও লাওসের মধ্যে মৈত্রীর প্রশংসা করেন এবং চীনা সংস্কৃতির প্রতি তার অনুরাগের কথা জানান।

চীনা ও লাওসের নারীদের মধ্যে যে মৈত্রীর সেতুবন্ধ রয়েছে সে বিষয়টিও উল্লেখ করেন এই নারী নেত্রী।

চীনা নববর্ষ উপলক্ষে ডাম্পলিং বানানোর অনুষ্ঠানে অংশ নেন ইনলাভানসহ বিশিষ্ট নারীরা।

তারা চীনা নারীদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে চমৎকারসব চায়নিজ ডাম্পলিং তৈরি করেন।

অনুষ্ঠানটি নারীদের জন্য এক আনন্দময় মিলনমেলায় পরিণত হয়।

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। এই অনুষ্ঠান আপনারা শুনতে পাবেন প্রতি বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটায় হ্যালো চায়না  অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা সবসময় কথা বলি নারীর সাফল্য, সংকট, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে।

আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল