চীনা ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা কোনো মিথ্যা দিয়ে মুছে ফেলা যাবে না: সিএমজি সম্পাদকীয়
2023-01-17 14:11:17

‘যুক্তরাষ্ট্র চীনা ভ্যাকসিন সম্পর্কে অনেক ভুল তথ্য ছড়িয়েছে।’ আমেরিকান পাবলিক রেডিও (এনপিআর) সম্প্রতি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথের সহযোগী অধ্যাপক চেন শি’র কথার উদ্ধৃতি দিয়ে এক নিবন্ধে উপরোক্ত কথা উল্লেখ করেছে। আমেরিকান মিডিয়া ওই গুজব ছড়ানোর জন্য দায়ী বলে এ নিবন্ধে ধারণা করা হয়।

চীনের মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের নীতি সামঞ্জস্য করা হয়েছে এবং সারা বিশ্ব একে স্বাগত জানিয়েছে। তবে কিছু মার্কিন রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যম এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চীনের নভেল করোনাভাইরাসের টিকার বিরুদ্ধে নতুন দফার কালিমা লেপন করা এবং চীনের প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি নিজেদের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির স্বার্থ লাভের জন্য প্রচার করছে।

চাইনিজ ভ্যাকসিন ভালো কি না, তা নির্ভর করে বিজ্ঞান-ভিত্তিক তথ্যের ওপর। বর্তমানে চীন বিশ্বের একমাত্র দেশ, যা নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের একাধিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এখন মোট ১৩টি ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়া গেছে। তার মধ্যে চীনা ভ্যাকসিনের গৃহীত নিষ্ক্রিয়করণ প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি পরিপক্ব ও স্থিতিশীল প্রযুক্তি। বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং অনুশীলন উভয়ই প্রমাণ করেছে যে, চীনা ভ্যাকসিনগুলো নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাবলিউএইচও’র নির্ধারিত মানদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যা রোগ, গুরুতর রোগ এবং মৃত্যু প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারীবিদ্যা-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বেন কাউলিং এবং তার দল ২০২২ সালের শুরুর দিকে হংকংয়ের প্রায় ২০ হাজার রোগের নমুনা বিশ্লেষণের পর দেখেন যে, চীনের উৎপাদিত ভ্যাকসিন ৬০ বছরের কম বয়সীদের গুরুতর রোগ প্রতিরোধের দক্ষতা যুক্তরাষ্ট্রর ফাইজার ও মডার্নার তৈরি আরএনএ ভ্যাকসিনের মতো সমান কার্যকর। অধ্যাপক বেন কাউলিংয়ের গবেষণার ফলাফল ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ‘ল্যানসেট সংক্রামক রোগ জার্নালে’ প্রকাশিত হয়।

মানুষ মনে করে যে, কেন অনেক উন্নত দেশ প্রথমে কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরি করেনি? কারণ ভাইরাস নিষ্ক্রিয়করণ প্রযুক্তিটি পরিচালনা করা সহজ কাজ নয় এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে বড় আকারে নভেল করোনাভাইরাসের রোগীর উপযোগী উচ্চ-স্তরের জৈব নিরাপদ উৎপাদন কর্মশালা তৈরি করা প্রয়োজন। এটি ব্যয়বহুল ও দীর্ঘ সময়-সাপেক্ষ। এর ফলাফলও নির্ধারণ করাও কঠিন। চীনের ব্যবস্থাগত সুবিধার উপর নির্ভর করে মহামারী মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সমাজের জন্য একটি কার্যকর পথ তৈরি করেছে চীন। বিশেষ করে চীনে ভ্যাকসিনের দাম ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত, শুধুমাত্র ২ থেকে ৮ সেলসিয়াসের তাপমাত্রায় তা সংরক্ষণ করা যায় এবং পরিবহন সুবিধাজনক। উন্নয়নশীল দেশগুলো এজন্য সহজে ভ্যাকসিন পেতে পারে।

নিরাপত্তার দিক থেকে বিবেচনা করে দেখা যায়, চীনা ভ্যাকসিন বহুবার পরীক্ষা করা হয়েছে। বর্তমানে চীনে সম্পূর্ণ ডোজ টিকা দেওয়ার হার ৯২.৯ শতাংশ। ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের টিকা দেওয়ার হার ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। চীন ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বাস্তবায়ন পরিকল্পনায়’ যোগ দিয়েছে এবং ১২০টিরও বেশি দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ২২০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে। বর্তমান বিশ্বে যেসব দেশ চীনা ভ্যাকসিন ব্যবহার করে, সেসব দেশে কোনো ভ্যাকসিন নিরাপত্তা সমস্যা পাওয়া যায়নি।

যাই হোক, যুক্তরাষ্ট্রে কিছু লোক মার্কিন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার পক্ষে কথা বলেছেন। তবে কেন এখন এক্সবিবি১.৫ ভাইরাসের বংশ সেদেশে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা এত শক্তিশালী?মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে এক্সবিবি১.৫ যুক্তরাষ্ট্রে ৪৩ শতাংশ সংক্রমণ ঘটিয়েছে।

ভ্যাকসিন ভাইরাস মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী অস্ত্র; যুক্তরাষ্ট্রের কিছু লোকের রাজনৈতিক হাতিয়ার নয়। ভ্যাকসিন ভালো কি-না, তা কারো ব্যাকগ্রাউন্ডের উপর নির্ভর করে না। বরং নিরাময়কারী প্রভাবের উপর নির্ভর করে। বিজ্ঞানকে লঙ্ঘন করে, সত্যকে উপেক্ষা করে এমন মিথ্যার পুনরাবৃত্তি করার পরিবর্তে, যুক্তরাষ্ট্রের সেসব লোকের উচিত্: তাদের নিজস্ব মহামারী প্রতিরোধের সমস্যা মোকাবিলা করা,দ্রুত তাদের ভ্যাকসিন দানের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা এবং তাদের জনগণ ও বিশ্বের জন্য কিছু বাস্তবসম্মত কাজ করা।

লিলি/তৌহিদ/রুবি