রোববারের আলাপন: ‘সান সি’ উদযাপিত হয় চীনা নববর্ষের আগের দিন
2023-01-15 19:12:20

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু আকাশ ও তৌহিদ।


আকাশ: হ্যাপি চাইনিজ নিউ ইয়ার 

তৌহিদ: হ্যাপি চাইনিজ নিউ ইয়ার


আকাশ: বন্ধুরা, ২১ জানুয়ারি হচ্ছে চীনের ‘সান সি’, মানে চীনের চান্দ্রবর্ষের শেষ দিন। এ দিন চীনারা যত দূরেই থাকুক না কেন, সবাই জন্মস্থানে পরিবারের কাছে ফিরে যান। মনে হচ্ছে বসন্ত উৎসব কিছুটা বাংলাদেশের ঈদের মতো, তাই না? সবাই জম্মস্থানে ফিরে যান। 

তৌহিদ:...


আকাশ: বন্ধুরা, আমি জানি আমাদের অনেকেই বড় শহরে কাজ করে। দেশের বাড়ির আত্মীয় স্বজনদের সাথে বছরে একবারও দেখা করার সুযোগ হয় না। আপনিও বিদেশে চাকরি করছেন, দেশের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। যদি পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত্ করা না যায়, তাহলে বসন্ত উৎসব বা অন্য সব উৎসবই অর্থহীন। অনেক সুস্বাদু খাবার খেলেও, পরিবার সঙ্গে না থাকলে উৎসব একেবারে অর্থহীন। আপনি কি মনে করেন?

তৌহিদ:... চীনারা ‘সান সি’তে কী কী করেন?


আকাশ: আমি তাহলে আমার বসন্ত উৎসবের ব্যক্তিগত গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি। তাহলে ‘সান সি’সহ আপনারা বুঝতে পারবেন চীনারা কিভাবে বসন্ত উৎসব কাটায়, কেমন? 

বন্ধুরা, আমি প্রথম কয়েক বছর চীন আন্তর্জাতিক বেতারে কাজ করার সময় বসন্ত উৎসবের সময় অফিস করেছি। মানে জন্মস্থানে ফিরে যেতে পারি নি। তার পরের বছর বসন্ত উৎসবের সময় ছুটি পেয়েছি। আসলে বসন্ত উৎসবের সময় ট্রেন বা বিমানের টিকেট কেনা অনেক বেশি কঠিন। ভাই, ঈদের সময় বাংলাদেশের অবস্থাও এ রকম হয়, তাই না?

তৌহিদ:...


আকাশ: এজন্য অনেক কষ্ট করে প্রতিদিন সকালে টিকেট কাউন্টারে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরও আমার জন্মস্থান হান তানে ফিরে যাওয়ার টিকেট পাইনি। তখন ট্রেনের টিকেট কেনার কোন মোবাইল অ্যাপ ছিল না। এজন্য ট্রেন স্টেশন বা টিকেট কাউন্টারে গিয়ে টিকেট কিনতে হতো। আমি আশা ছাড়তাম না। অনেক চেষ্টার পর ‘সান সি’ অর্থাত্ বসন্ত উৎসবের আগের দিন বিকেলে হান তানে ফিরে যাওয়ার একটা টিকেট পাই। কিন্তু কোনো সিট নেই। আসলে তখন সিট কোনো ব্যাপার না, টিকেট পাওয়াটাই বড় ব্যাপার। টিকেট পাওয়ার পর, আমি খুশিতে পাগল হয়ে যাই। কারণ সবাই ‘সান সি’র আগে বাসায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এজন্য ‘সান সি’র দিন বিকেলে বা সন্ধ্যায় টিকেট তুলনামূলকভাবে একটু সহজে কিনতে পারা যায়।


তৌহিদ: আপনি তখন কয়টার সময় হান তানে পৌঁছালেন?

আকাশ: বেইজিং থেকে হান তানের দূরত্ব ৪৪০ কিলোমিটার। দ্রুতগতির ট্রেনে বেইজিং থেকে হান তানে প্রায় দু ঘণ্টা সময় লাগে। যাই হোক আমি প্রায় পাঁচটার সময় দাদার বাড়ি পৌঁছাই। তারপর প্রথমে আমি ও আমার বাবা একসাথে দাদীর স্মরণে একটা অনুষ্ঠান করি। এরপর আমরা বাসায় ফিরে যাই। বিকালের চিয়াও জি বা ডাম্পলিং তৈরি করা হয়ে যায়। তৌহিদ ভাই চিয়াও জি আপনার কাছে কেমন লাগে ?

তৌহিদ:


আকাশ: বন্ধুরা, চীনে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে বসন্ত উৎসবের সান সি, চু ই, ফো উ, মানে চীনের চান্দ্র নববর্ষের আগের দিন, প্রথম দিন ও পঞ্চম দিন সবাই চিয়াও জি তৈরি করে খান। এ বিশেষ সময়ে সবাই যত দূরেই থাকুক না কেন, সবাই জন্মস্থানে ফিরে যান এবং একসাথে চিয়াও জি তৈরি করেন। বাংলাদেশে ঈদের বা অন্য বড় বড় উৎসবের সময় চীনের চিয়াও জি’র মতো বিশেষ কোন খাবার আছে?

তৌহিদ:... চীনারা বসন্ত উৎসব ছাড়া অন্য সময়েও কি চিয়াও জি খান? 


আকাশ: হ্যাঁ। অবশ্যই। ইচ্ছামতো খেয়ে থাকেন। যেমন আমার বাবা চিয়াও জি খেতে অনেক পছন্দ করেন। এজন্য মা প্রায় প্রতি সপ্তাহে চিয়াও জি তৈরি করেন। এজন্য ছোটবেলায় চিয়াও জি খেতে আমার অনেক বিরক্ত লাগতো। কিন্তু, জন্মস্থান থেকে বেইজিংয়ে যাওয়ার পর, বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তরায় থাকার সময়, আমি আমার বাবার মতো চিয়াও জি খেতে অনেক পছন্দ করতাম। আসলে চিয়াও জি আমার কাছে শুধু একটি সুস্বাদু খাবারই নয়, এটা মানে বাড়ি, পরিবারের সম্মিলন। 

আমার ধারণা, আমরা যখনই, যেখানেই থাকি না কেন, আমাদের পরিবার সবসময় আমাদের সাথে থাকে। পরিবার সবসময় আমাদের পাশে থাকে, আমাদের মনে থাকে। পরিবার সবসময় আমাদেরকে সমর্থন করে এবং সঙ্গ দেয়। 

তৌহিদ: ভাই, তাহলে আন্টি সব চিয়াও জি তৈরি করার পর সিদ্ধ করতেন, তাই না? 


আকাশ: হ্যাঁ, তবে চিয়াও জি সিদ্ধ করার আগে, চীনে একটি রীতি আছে, পরিবারের বড় ছেলে আতশবাজি ফোটাবেন। আতশবাজি ফোটানোর সাথে সাথে চিয়াও জি সিদ্ধ করা শুরু হবে। 

তৌহিদ: তার মানে, আতশবাজি না ফোটালে চিয়াও জি সিদ্ধ করা হবে না, তাই তো?


আকাশ: হ্যাঁ। আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি তখন অনেক দিন জন্মস্থানে বা দাদার বাড়িতে বসন্ত উৎসব কাটাই নি। এজন্য মন অনেক উদ্দীপিত। চিয়াও জি সিদ্ধ করার পর দাদা, বাবা, মা এবং আমি টেবিলে গোল হয়ে বসে খেতে শুরু করি। তখন সে মুহূর্তে আমার চোখে পানি চলে আসে। আমার পরিবার যেন আমার চোখের পানি না দেখতে পারে সেজন্য আমি আমার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেই।

ভাই, ওই মুহূর্তটি আমি কখনোই ভুলতে পারবো না। ভাই, ঈদে বা অন্য উতসবে আপনার বাড়ি ফিরে যাওয়ার গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন?

তৌহিদ:.... ভাই, সান সি সন্ধ্যায় চিয়াও জি খাওয়ার পর আপনারা আর কী কী করেছেন?

আকাশ: তখন আমরা চিয়াও জি খাওয়ার পর, দাদার সাথে একসাথে সিসিটিভি’র বসন্ত উৎসবের ‘গালা ইভিনিং’ দেখি। তারপর দাদা ঘুমানোর পর, আমি মা বাবার সাথে নিজের বাসায় ফিরে গিয়ে অব্যাহতভাবে বসন্ত উৎসবের ‘গালা ইভিনিং’ দেখতে থাকি। 

তৌহিদ: তারপর কী করেন?


আকাশ: রাত ১২টার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। অর্থাত্ আমরা গালা ইভিনিং দেখতে দেখতে নতুন বছরের শুরুর জন্য অপেক্ষা করি। তারপর নতুন বছর শুরু হবার ঠিক ওই মুহূর্তটিতে সবাই বাইরে গিয়ে আতশবাজি ফোটাই। তখন সারা শহর  আতশবাজির শব্দে ভরে ওঠে।

তৌহিদ: কিন্তু এখন আতশবাজির শব্দ  নেই কেন?


আকাশ: এখন পরিবেশ বা বায়ু দূষণ বন্ধ করতে চীনের অধিকাংশ শহরে আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আতশবাজি ছাড়া বসন্ত উৎসবের আবহ অনেক কমে যায়। আপনি জানেন যে, ছোটবেলায় আমরা অনেক সময় আগে থেকেই বসন্ত উৎসবের অপেক্ষায় থাকতাম। কারণ তখন আতশবাজি ফোটাতে পারতাম। হাহাহা, আর এটা ছিলো ভীষণ মজার এবং আনন্দের। বাংলাদেশে ঈদ বা পয়লা বৈশাখে কী কী বিশেষ রীতি পালন করা হয়?

তৌহিদ:...


আকাশ: বন্ধুরা, আজ এ পর্যন্তই, আগামী অনুষ্ঠানে অব্যাহতভাবে বসন্ত উৎসবের রীতিনীতি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, কেমন? নতুন বছরে আপনারা সুস্থ, সুন্দর ও আনন্দে থাকুন, এই প্রত্যাশা করছি। নতুন বছরে আমরা একসাথে অব্যাহতভাবে সুন্দর জীবনের জন্য সময়ের সঠিক ব্যবহার করবো এবং বেশি বেশি পরিশ্রম করবো।