দারিদ্র্যমুক্ত হতে এবং ধনী জীবন অর্জন করতে উন্নয়ন করতে হয়। আর উন্নয়ন করতে প্রথমে সড়ক যোগাযোগের সমস্যা সমাধান করতে হয়।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সবসময় যোগাযোগ কাজের ওপর গুরুত্বারোপ করেন, জনগণের যাতায়াত সমস্যা সমাধান তাঁর মনের বড় একটি ব্যাপার। তিনি বার বার তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ অবস্থা পরিদর্শন করেন, জনগণের খোঁজ খবর নেন, গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেন।
বিশেষ করে গ্রামের সচ্ছল জীবন বাস্তবায়নে যোগাযোগ অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রামাঞ্চল, বিশেষ করে দূরবর্তী এলাকার সড়ক নির্মাণ অনেক প্রয়োজন।
এই পর্যন্ত চীনে গ্রামের সড়কের দৈর্ঘ্য ৪২ লাখ কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। সব গ্রাম, থানায় সড়ক ও বাস চালু হয়েছে। ৫ লাখেরও বেশি গ্রামে ডাক সেবা চালু হয়েছে।
চীনের হুনান প্রদেশের আই চাই থানা গভীর পাহাড়ে অবস্থিত। সড়ক যোগাযোগ অবস্থা আগে খুব দুর্বল ছিল। অনুন্নত সড়ক যোগাযোগ অবস্থা পরিবর্তন করার জন্য স্থানীয় সরকার ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে হাইওয়ে নির্মাণ করেছে, ২০১২ সালের ৩১ মার্চ আই চাই সেতু চালু হয়। এই সেতু কাছাকাছি প্রদেশের সঙ্গে হাইওয়ে চলাচল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয়েছে। এর ফলে হু নানের পাহাড়ি এলাকার উন্নয়নের বাধা ভেঙে গেছে।
তাহলে এই সেতুর পরিচালনা কেমন? স্থানীয় লোকজনের জীবন কি এ কারণে ভালো হয়েছে? ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিশেষ করে আই চাই সেতু পরিদর্শন করেন। স্থানীয় এলাকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সড়ক যোগাযোগ অবস্থার বিরাট উন্নতির কথা জেনে, বিশেষ করে গ্রামে সড়ক নেট মোটামুটি গঠিত হয়েছে—এমন কথা জেনে তিনি খুব খুশি হন।
তিনি বলেন, দরিদ্র এলাকার দারিদ্র্যমুক্তকরণ এবং ধনী হওয়া বাস্তবায়নে সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নত করা খুব জরুরি। এই ক্ষেত্রে আরো বেশি সমর্থন দিতে হয়।
তিনি ব্যাপক গ্রামীণ জনগণের সচ্ছল জীবন অর্জনে খুব গুরুত্ব দেন।
এখন আই চাই সেতু, আই চাই কাঁচের সেতু, স্থানীয় সংখ্যালঘু মিয়াও জাতির বাসস্থান একসাথে এক দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। আরো বেশি স্থানীয় মানুষ মিয়াও জাতির সূচিকর্ম, হোমস্টেই চালু করার মাধ্যমে ঘরে বসেই টাকা উপার্জন করতে পারছে।
সড়ক চালু হলে সব শিল্প সমৃদ্ধ হতে পারে। হু নানের পাহাড়ি এলাকার মতো অনেক দরিদ্র এলাকায় প্রাকৃতিক সম্পদ বেশি। তবে শুধু সড়ক না থাকায় লোকজন বাইরে যেতে পারে না। জীবন দিন দিন গরিব হয়ে যায়। তাই দারিদ্র্যমুক্ত করতে, ধনী হতে চাইলে সড়ক অবস্থা উন্নত করা প্রয়োজন।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দেশের গ্রামাঞ্চলের সড়ক উন্নয়ন সম্মেলনে বলেন, বিশেষ করে কিছু দরিদ্র এলাকায়, অল্প কিছু সড়ক নির্মাণ করলেই লোকজনের জন্য ধনী হওয়ার দরজা খুলে দেয়া যাবে।
সি ছুয়ান প্রদেশের চাও চুয়েই জেলার সান হ্য গ্রামের বাসিন্দা চি হাও ইয়ে ছিউ কখনই কয়েক বছর আগের কথা ভুলতে পারে না। সেদিন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে অনেক কষ্ট করে তাঁর পরিবারে যান।
তখন ঠিক ২০১৮ সালের বসন্ত উৎসবের আগ-মুহূর্ত। স্থানীয় আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা, বেশ কয়েকদিন ধরে তুষার পড়েছে, সি চিন পিং চি হাও ইয়ে ছিউ-এর বাসায় পৌঁছে যান। তিনি তাঁকে বলেন, সার্বিক সচ্ছল সমাজ গঠনের পথে কোনো জাতি, কোনো পরিবারকে ছেড়ে দেওয়া হবে না।
সান হ্য গ্রাম সমুদ্র পৃষ্ঠ ২৫০০ মিটার উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত। তা চীনের সংখ্যালঘু ই জাতির আবাসিক গ্রাম। সড়ক অবস্থা এবং শিল্প কাঠামোর বাধায় অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন ভালো ছিল না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় সরকার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ করেছে, ব্যাপকভাবে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করেছে, এর ফলে গ্রামের চেহারা একদম নতুন হয়েছে। সড়ক চালু হয়েছে, স্থানীয় শিল্পের উন্নয়নও দ্রুততর হচ্ছে। আলুসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যময় কৃষিজাত দ্রব্য পাহাড় থেকে বের হতে পারে, কৃষকের আয় প্রত্যেক বছরই বাড়ছে।
সি চিন পিং আগে যে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ হেঁটেছিলেন, এখন তা সুন্দর চওড়া পথে পরিণত হয়েছে।
গ্রামের সড়ক নির্মাণকাজ স্থানীয় অবস্থা, মানুষের চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হয়। মানুষ-কেন্দ্রিক নীতিতে গ্রামের ব্যবস্থা সুসংহত হতে হয়, গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ব্যাপক কৃষকের সুবিধাকে কেন্দ্র করতে হয়।
আবার, ব্যবস্থাগত উদ্ভাবন এবং নীতিকে সুসংহত করতে হয়। যাতে আরো ভালোভাবে গ্রামের সড়ক পরিচালনা করা যায়।
নতুন পরিস্থিতিতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, ব্যাপক গ্রামীণ জনগণের সচ্ছল জীবনের জন্য উপায় খুঁজে পেয়েছেন।
অন্য দিকে, যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে দেশকে শক্তিশালীও করা যায়।
বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর বন্দর নির্মাণ করা, আরো ভালোভাবে দেশের নির্মাণের জন্য সেবা করা হল নতুন যুগে যোগাযোগ খাতের শক্তিশালী দেশ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিভাবে বন্দর জোরদার করা যায়, তা সি চিন পিং-এর গুরুত্ব পাওয়া আরেকটি বিষয়।
২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং থিয়ানচিন বন্দর পরিদর্শন করেন।
বন্দরের ড্রাইভার লি থাও তখনকার কথা স্মরণ করে বলেন, যখন প্রেসিডেন্ট সি আমার হাত ধরেন, তিনি যেন পরিবারের আত্মীয়-এর সঙ্গে কথা বলার মত আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তা তিনি কখনই ভুলতে পারেন না।
বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে সি চিন পিং বলেন, অর্থনীতির উন্নয়ন, দেশের শক্তিশালীকরণ, যোগাযোগ, বিশেষ করে সামুদ্রিক যোগাযোগ প্রথমে শক্তিশালী হতে হয়। তিনি বলেন, বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর বুদ্ধিমত্তা বন্দর, সবুজ উন্নয়নের বন্দর নির্মাণ করতে হয়। যাতে আরো ভালোভাবে আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণে সেবা করা যায়।
এখন সি চিন পিং-এর নেতৃত্বে বন্দরটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বন্দরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বেশ কিছু প্রযুক্তিতে বিশ্বের শীর্ষ স্থানে রয়েছে। বন্দরটি বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলের আট শতাধিক বন্দরের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
সময় ফিরে যায় ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। বেইজিং তা সিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। বিমানবন্দরে একজন বিশেষ অতিথি এসেছেন, তিনি হলেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি বিমানবন্দর আনুষ্ঠনিকভাবে চালু হওয়ার ঘোষণা করেছেন এবং বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন।
তিনি বলেন, তা সিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বিশ্বের শীর্ষ নিরাপদ বিমানবন্দর, সবুজ বিমানবন্দর, বুদ্ধিমত্তা বিমানবন্দর হিসেবে উন্নত করতে হয়, বিমানবন্দরের মাধ্যমে বিশ্বকে চীনা জনগণের বুদ্ধি ও শক্তি দেখানো যাবে, চীনের উন্মুক্ত, সহনশীল, শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক মনোভাব দেখানো যাবে।
এই পর্যন্ত তা সিং বিমানবন্দরের যাত্রীর সংখ্যা ৩ কোটি ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন সৃজনশীল সেবা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই লোহার ফিনিক্স এখন উড়তে যাচ্ছে।
সিপিসি’র অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর থেকে এই পর্যন্ত, চীনের যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণের উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত, বিশ্বের প্রথম দশটি বন্দরের মধ্যে চীনের সাতটি বন্দর স্থান পায়। চীনে হাইওয়ে’র মোট দৈর্ঘ্য ১.৬ লাখ কিলোমিটার; দ্রুতগতির ট্রেন লাইনের দৈর্ঘ্য ৩৮ হাজার কিলোমিটার। এসব পরিসংখ্যানে বিশ্বের প্রথমে রয়েছে চীন। যা ‘চীনের উৎপাদন খাতে শ্রেষ্ঠত্বের’ প্রমাণ।