হাজার কিলোমিটার দূর থেকে স্ট্রবেরির চারা আনার গল্প
2023-01-13 13:59:20

২০২৩ সালের শুরুতে চীনের তা লিয়ান শহরের তা চাও গ্রামের স্ট্রবেরি খামারে গ্রামবাসী চু কুই সিয়ান ভালো ফলনের আনন্দ উপভোগ করছেন। চোখের দৃষ্টি প্রসারিত করলে দেখা যায়  একটির পর একটি লাল ও তাজা স্ট্রবেরি। চু কুই সিয়ান বলেন, ‘আমার পরিবারের এ অল্প জমিতে আজ সকালে ৭০ কেজি স্ট্রবেরি তোলা হয়েছে। প্রতি কেজির দাম ৫২ ইউয়ান। উপার্জন করেছি ৩৬০০ ইউয়ানেরও বেশি।

গ্রীনহাউসের স্ট্রবেরির দাম ও বিক্রির পরিমাণ সময়ের ব্যবধানের ওপর নির্ভর করে। আগে স্থানীয় স্ট্রবেরি জানুয়ারির মাঝামাঝিতে বাজারে হাজির হতো। তবে, চু কুই সিয়ানের চাষ করা স্ট্রবেরি গত নভেম্বরের প্রথম দিকে প্রথম চালান ফল ধরেছে, যা ২ মাস আগে বাজারে হাজির হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে চু কুই সিয়ান জানান, আগের চেয়ে তাড়াতাড়ি বাজারে আসার কারণ হচ্ছে সঠিক চারা চাষ হয়েছে।  তিন বছর আগে তিনি রেডিও’র মাধ্যমে এক ধরণের মালভূমির স্ট্রবেরি চারা প্রচার করলে। চাষের ব্যবস্থার অপরিবর্তনে সে চারা চাষ হলে তাড়াতাড়ি স্ট্রবেরি হয়। পনেরো বছর ধরে চাষ করার অভিজ্ঞ চু কুই সিয়ান পরীক্ষামূলকভাবে সে চারা চাষ শুরু করেছেন। 

চু কুই সিয়ানের উল্লেখিত চারা তা লিয়ান শহর থেকে ৩ হাজার কিলোমিটার দূরে কুই চৌ প্রদেশের লিউ পান শুই থেকে আসে।

তা লিয়ানের চুয়াং হ্য শহরের স্ট্রবেরি কমিটির চেয়ারম্যান চিয়াং হোং পো বলেন, “২০১৯ সালে লিউ পান শু শহরকে সহযোগিতার সময় আমরা লক্ষ্য করেছি  স্থানীয় গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া খুব শীতল। গড় তাপমাত্রা ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সুর্যালোকের পরিমাণ বেশি নয়। প্রতিদিন ১০ ঘন্টার মধ্যে থাকে। এখানকার চারার তাড়াতাড়ি ফল ফোটা হয় এবং রোগ প্রতিরোধক সক্ষমতা রয়েছে।

এ সুযোগের মুখে চিয়াং হোং পো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।২০১৯ সালে লিয়াও নিং প্রদেশের কৃষি একাডেমীর তা লিয়ান শাখার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে লিউ পান শুই শহরে মালভূমি স্ট্রবেরির চারা লালনের কাজ শুরু করেছেন চিয়াং হোং পো। সে বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে, তিনি যানবাহনে ২দিন ২ রাত ধরে তা লিয়ান থেকে একটির পর একটি স্ট্রবেরি চারা লিউ পান শুইতে নিয়ে আসেন। তা লিয়ানের স্ট্রবেরির চারা লিউ পান শু’র জমিতে চাষ হয়েছে। 

মালভূমি স্ট্রবেরি লালন করা সহজ নয়। চিয়াং হোং পো বলেন, মার্চ থেকে মে মাসে লিউ পান শুই শহরে খরার মৌসুম। প্রথম বছরে এ মৌসুমে প্রায় বৃষ্টিপাত হয় নি। আমরা মানুষ্য পানি দিয়েছি। তাছাড়া লিউ পান শু পাহাড়ী অঞ্চল। এখানকার জমি মোটা নয়। সে সব উপাদন এবং অভিজ্ঞতার অভাবে প্রথম বছরে ২০ লাখ ইউয়ান বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 সে আঘাতে চিয়াং হোং পো ছেড়েন নি। তিনি অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন মোটা জমিতে পা দিলেন। তাছাড়া চারাকে পানি দেওয়া, রাসায়ন দেওয়া এবং ঘাস নির্মুল করাসহ প্রত্যকে প্রক্রিয়ায় বলিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন চিয়া হোং পো। এ প্রকল্প দারিদ্র্যমুক্তকরণের আশার আলো দেখেছে স্থানীয় সরকার। তাই সরকার পুলসহ নানা জলসেচ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা স্ট্রবেরির চারা পানি দেওয়ার দুর্যোগ দূর করেছে। 

 দ্বিতীয় বছরে চিয়াং হোং পো’র স্ট্রবেরি ক্ষেতে সুখবর পাওয়া গেল। সে বছরের আগস্ট মাসের শেষ দিকে লিউ পান শুই থেকে এক চালান চারা তা লিয়ানে পাঠিয়ে চাষ করা হয়েছে। সে চারা বেচে যাওয়ার হার ৯৫ শতাংশ বেশি। সে বছরের নভেম্বর মাসে প্রথম চালান স্টবেরি তা লিয়ানের বাজারে হাজির হয়েছে। প্রতি কেজির দাম ছিল ২০০ ইউয়ান।

 চু কুই সিয়ান বলেন, ‘আমার এ গ্রীনহাউসে এক বছরে উপার্জনের পরিমাণ ১.২ লাখ ইউয়ান, যা অন্য চাষীদের চেয়ে দ্বিগুণ।“

এ দিকে লিউ পাও শু’র ডেং হেং গ্রামের গ্রামবাসী লুও মিং সুয়েও এ সুযোগ-ভোগী। তিনি ২০২২ সালে চিয়াং হোং পো’র সঙ্গে স্টবেরির চারা লালন শুরু করেছে। স্ট্রবেরির চারা লালন করা ভূট্টা ও আলু চাষের চেয়ে অনেক বেশি উপার্জন করেছেন তিনি । নতুন বছরেও চিয়াং হোং পো’র সঙ্গে এ কাজ করে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন লুও মিং সুয়ে।

একটার পরএকটা স্ট্রবেরির চারা ৩০০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য অতিক্রম করে দু’স্থানের জনগণকে দারিদ্র্যমুক্ত ও সমৃদ্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে তা লিয়ানে ৪০০টি পরিবেরের কৃষক মালভূমি স্ট্রবেরির চারা চাষ করছে। লিউ পান শুই অঞ্চলে চারা লালন ক্ষেতের কারণে স্থানীয় ৩০০টিরও বেশি পরিবারের কৃষক দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে।

(রুবি/এনাম)