জানুয়ারি ১১: "মাদাগাস্কারের হোটেলগুলি চীনা পর্যটকদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে!" চীনা মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করার পর, অনেক দেশ একে স্বাগত জানিয়েছে। তবে, কেউ কেউ আন্তর্জাতিক মূলধারার জনমতের বিরুদ্ধে যেতেই যেন বেশি আগ্রহী।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র একদিকে চীন থেকে আগত পর্যটকদের জন্য মহামারী-প্রতিরোধক কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, আরেকদিকে চীনকে টিকা সরবরাহ করার তাগিদ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের ভণ্ডামি ও দ্বিমুখী আচরণ আমরা আগেও দেখেছি।
যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই নিজেকে "বিশ্বের বৃহত্তম কোভিড-১৯ টিকাদাতা দেশ" হিসাবে প্রচার করে আসছে। তবে, আমেরিকান স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা "কাইজ ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন"-এরগবেষণা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালের আগে ১.১ বিলিয়ন টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে, ৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৬৬৫.১ মিলিয়ন দিয়েছে। মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫.১মিলিয়ন ডোজ টিকা নষ্ট হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশকে টিকা না-দিয়ে সেগুলো মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত রেখে দিয়ে নষ্ট করেছে। আবার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রায় মেয়াদ শেষ হওয়া টিকা আফ্রিকার কোনো কোনো দেশকে দিয়েছে!
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, মার্কিন টিকা সহায়তারবেশিরভাগ পেয়েছে চীনের প্রতিবেশী দেশগুলো। কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, এর লক্ষ্য এসব দেশকে চীনের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, যুক্তরাষ্ট্র কোনো কোনো দেশকে চীনবিরোধী জোটে যোগ দিতে বাধ্য করেছে। এহেন আচরণ, বৈশ্বিক মহামারী-বিরোধী সহযোগিতার পরিবেশকে ব্যাপকভাবে বিষাক্ত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত আন্তর্জাতিক মহামারী-প্রতিরোধক শৃংখলাকে ব্যাহত করে গেছে।২০২০ সালের জুলাইয়ে, তত্কালীন ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং আন্তর্জাতিক মহামারী-বিরোধী লাইনকে দুর্বল করে দেয়। গততিন বছরে করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট যুক্তরাষ্ট্রে দেখা গেছে। পরিসংখ্যানঅনুসারে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ২৩.১৯৯ মিলিয়ন মার্কিননাগরিক বিদেশে যাতায়াত করেছে। একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক নৈতিকতা উপেক্ষাকরে, অবৈধ অভিবাসীদের অবস্থা উপেক্ষা করেছে। যার ফলে, লাতিন আমেরিকারউন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো বহু দেশে মহামারী পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে ওঠে। এই সমস্তঘটেছে তখন যখন কোভিড-১৯ ভাইরাস অনেক শক্তিশালী ছিল, আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হারও ছিল বেশি। বস্তুত, মহামারীর বিশ্বব্যাপী বিস্তারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দায় কম নয়।
২০২০ সালের মার্চ মাসে, যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের পরিচালক রিড ফিল্ডস্বীকার করেন যে, ২০১৯ সালে শুরু হওয়া ফ্লু মৌসুমে অনেক লোক আসলে কোভিড-১৯ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। তখন সংক্রমিত লোকের সংখ্যা আজও যুক্তরাষ্ট্র জানায়নি।বিপরীতে, চীন গত তিন বছরে কেবল ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি লোকের জীবন ও স্বাস্থ্যকেকার্যকরভাবে সুরক্ষিত করেনি, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও মহামারী মোকাবিলায় সাধ্যমতো সহায়তা দিয়েছে। গত তিন বছরে, চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে ৬০টিরও বেশিপ্রযুক্তিগত তথ্য বিনিময় করেছে। চীন বৈশ্বিক ইনফ্লুয়েঞ্জা শেয়ারিং ডাটাবেসের মাধ্যমেভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের জিনসিকোয়েন্সিং ভাগাভাগি করে চলেছে। এখন পর্যন্ত, চীন ১৫৩টি দেশ এবং ১৫টি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে শত শত বিলিয়ন মহামারী-বিরোধী পণ্য সরবরাহ করেছে এবং ১২০টিরও বেশি দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ২.২ বিলিয়নকোভিড-১৯ টিকা সরবরাহ করেছে।
মহামারীকালে কে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, আর কে নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে—তা বিশ্ববাসী ভালোই জানে। বিগত তিন বছরে মার্কিন প্রশাসন মানবতাকে যে কষ্ট দিয়েছে, তা বিশ্ববাসী ভুলবে না। গত তিন বছরে বিশ্ববাসী যুক্তরাষ্ট্রের আসল চেহারা আরেকবার দেখেছে। তারা দেখেছে, যুক্তরাষ্ট্রই আসলে মহামারী মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। (ইয়াং/আলিম/ছাই)