চীনা অর্থনীতির ‘বসন্ত’ আসছে বলে বিশ্বাস করে বিশ্ব
2023-01-11 13:50:49


২০২৩ সালের শুরুতে আমরা দেখেছি যে চীনের সব রাস্তা ও শপিং মল আগের মতো ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। খবরে আমরা সব সময় দেখেছি যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রধান শক্তি চীন থেকে আসে। আন্তর্জাতিক তথ্যমাধ্যম সংবেদনশীলভাবে সিগন্যালটি ধরেছে এবং বিশ্বের সমৃদ্ধির সঙ্গে চীনের অর্থনীতির ভবিষ্যতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। মানুষেরা অপেক্ষা করছে যে চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন চালিকাশক্তি যোগাবে এবং নতুন সুযোগ ও আশা বয়ে আনবে।

 

২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনাকে এক ধাপ নিচে নামিয়ে বি-শ্রেণীর সংক্রামক ভাইরাস হিসেবে করোনা মোকাবিলা শুরু করেছে চীন। পরিস্থিতি ও সময়ের পরিবর্তন অনুযায়ী, মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ম সমন্বয় করেছে চীন এবং মহামারি প্রতিরোধ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন একসাথে করছে।

 

সিএনএনের খবরে বলা হয়, চীনা মহামারি প্রতিরোধ নীতি সমন্বয়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ধারাবাহিক ব্যবস্থা নেবে চীন সরকার। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার অনুমান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে চীনা অর্থনীতি  স্থিতিশীলভাবে প্রবৃদ্ধি পাবে। সিঙ্গাপুরের ‘লিয়ানহে জাওবাও পত্রিকায় বলা হয়, মাহমারি দেখা দেয়ার পর চীন কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াকে ঠেকিয়েছে এবং মানুষের জীবনযাপন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে। বিশ্বাস করা যায়, নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে চীন সরকার বাস্তব ও দৃঢ় মনোভাব নিয়ে প্রাণবন্ত অর্থনীতি ও সমাজ ফিরিয়ে আনতে পারবে। 

 

"ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল" বেশ কয়েকজন পণ্ডিতকে উদ্ধৃত করে বলেছে যে চীনের মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সমন্বয় ভোগের সম্ভাবনাকে মুক্তি দেবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাস্তবায়ন করবে -তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকান "ব্যারনস উইকলি" মন্তব্য করেছে যে নতুন মহামারি প্রতিরোধ নীতি কেবল  চীনের নিজস্ব অর্থনীতিতে আশা যোগ করবে না, বরং বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি নরম অবতরণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলবে।

 

সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থনৈতিক কর্মসম্মেলনে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর দাবি জানানো হয় এবং ভোগ পুনরুদ্ধার ও প্রসারিত করাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তার মানে, চীনা বাজারে দেখা যাবে আরও বেশি সুযোগ। ২০২২ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনে ভোগ্যপণ্যের মোট খুচরা বিক্রয় পরিমাণ ৩২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছিল। তা ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় ০.৭ শতাংশ বেশি। বিশেষ করে তৃতীয় প্রান্তিকে বৃদ্ধির হার ছিল ৩.৫ শতাংশ।

 

চীনা ভোগ্য বাজারের পুনরুদ্ধারের ওপর বেশ গুরুত্ব দেয় আন্তর্জাতিক তথ্যমাধ্যমগুলো। ব্লুমবার্গ বিশ্বাস করে যে অন্যান্য প্রধান অর্থনীতির বৃদ্ধি তীব্রভাবে মন্থর হলেও "চীন একটি আকর্ষণীয় অভ্যন্তরীণ চাহিদা-চালিত পুনরুদ্ধারের গল্প প্রদান করতে পারে।" ইউএস কনজিউমার নিউজ অ্যান্ড বিজনেস চ্যানেল বহুজাতিক কোম্পানির প্রধানের উদ্ধৃত করে বলেছে যে চীন তার মহামারি প্রতিরোধ নীতির সমন্বয় করে চলেছে। চীনা অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন দেখা যাবে। "আমরা চীনে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখব এবং আগামী দশকে চীন একটি আরও শক্তিশালী ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে।"

 

অর্থনীতি বিশ্লেষণ করলে অবশ্যই স্বল্পমেয়াদী ওঠানামা দেখতে হবে এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধির প্রবণতা দেখতে হবে। চীনা অর্থনীতির বৃদ্ধিতে স্থিতিশীলতা রয়েছে এবং তা নতুন সংস্কার ধারণা ও উচ্চ মানের উন্নয়ন থেকে আসে। ২০২২ সালের প্রথম ১০ মাসে চীনা উচ্চ প্রযুক্তিগত নির্মাণ শিল্পের সংযোজিত মূল্য আগে বছরের তুলনায় ৮.৭ শতাংশ বেশি ছিল। এবং উচ্চ প্রযুক্তিগত নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ২০২১ সালের তুলনায় ২৩.৬ শতাংশ বেশি ছিল। বিশেষ করে টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম তৈরি শিল্পে বিনিয়োগ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অর্থনীতি মন্থর ও মহামারির চাপের মুখেও চীন বিদ্যুত-চালিত গাড়ি, এআই, ডিজিটাল অর্থনীতি, মহাকাশযান, গভীর সমুদ্র অনুসন্ধানসহ নানা ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় সফলতা অর্জন করেছে। তা চীনা অর্থনীতির নবায়ন দক্ষতা ও টেকসই উন্নয়নের সম্ভবনা সম্প্রসারণ করেছে। স্পেনের এক তথ্যমাধ্যম বলেছে, স্পেন ও চীনের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার হচ্ছে দু’পক্ষের উন্নয়নে নতুন চালিকা শক্তি। ব্লুমবার্গ বিনিয়োগকারীদের চীনকে ভুলভাবে বিচার না করার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তারা বলেন, চীন আরও ভাল মান ও মূল্যবান পণ্য  তৈরি করবে।

 

বিদেশী তথ্যমাধ্যমের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক আন্তঃসীমান্ত বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার মন্থর রয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানির "নিরাপদ আশ্রয়স্থল" এবং ব্যবসায়িক বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তিতে পরিণত  হয়েছে চীন। চীনের বড় বাজার "অপরিবর্তনীয়"। চীনে বিনিয়োগ মানে ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করা-এটি এখন একটি সাধারণ ধারণায় পরিণত হয়েছে।

 

অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েও চীনা অর্থনীতি স্থিতিশীল ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের প্রবণতা ধরে রেখেছে। উচ্চ মানের উন্নয়নকে সমর্থন দেয়ার নানা উপাদান চীনের আছে এবং চীনা অর্থনীতি দেখিয়েছে শক্তিশালি স্থিতিস্থাপকতা এবং জীবনীশক্তি। নতুন বছরে চীনের বাজার সম্ভাবনা সম্পূর্ণভাবে উদ্দীপ্ত হবে এবং চীন আরও উন্মুক্ত হবে। কোন সন্দেহ নেই, বসন্তের মতো প্রাণবন্ত একটি চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে আস্থা যোগাবে।(শিশির/এনমা/রুবি)