১০ জানুয়ারি হল চীনের তৃতীয় পুলিশ দিবস। যা চীনের রাষ্ট্রীয় বিশেষ দিন। এ দিবস ঘোষণার মাধ্যমে দেশ ও জনস্বার্থ রক্ষায় পুলিশের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। চীনের পুলিশ কীভাবে দায়িত্ব পালন করে? কি কি কাজে তাদেরকে দেখা যায়? আজ এই বিষয়ে কথা বলবো।
এই দিবস উপলক্ষ্যে আমরা গেল বছরের দিকে তাকাবো। দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় চীনা পুলিশকে দেখা যায়। গেল বছর চীনের গণ-নিরাপত্তা সংস্থা চীনের তিব্বত ও সিনচিয়াং পরিচালনা নীতি মেনে চলেছে, সন্ত্রাসদমন এবং বিচ্ছিন্নতা-বিরোধী কাজ জোরদার করেছে, দেশের রাজনীতি ও ব্যবস্থাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় চীনা পুলিশকে দেখা যায়। জনগণের ভিড়ের শহর হোক, দূরবর্তী পাহাড়ি এলাকা হোক, চীনা পুলিশের ইউনিফর্মের সেই নীল রং জনগণের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ রং।
জনগণের প্রাণ ও স্বার্থ রক্ষায় চীনা পুলিশকে দেখা যায়। আমরা দেখতে পারি, একা থাকা বয়স্করা কেউ অসুস্থ হলে পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আমরা দেখি যে, পথ হারানো বৃদ্ধ ভুল করে হাইওয়েতে ঢুকে গেছে, পুলিশ তাকে নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দেয়। যখন বৃদ্ধ জিজ্ঞেস করেন, পুলিশের গাড়িতে ফিরে যেতে টাকা লাগবে কি? পুলিশ তাকে বলেন, আমরা জনগণের পুলিশ, আপনাদের সেবার জন্য কোনো ফি দিতে হবে না।
আমরা দেখতে পাই, মানবপাচারের বিরুদ্ধে আঘাত হানে চীনা পুলিশ। অসংখ্য পরিবার পুলিশের সাহায্যে তাদের হারানো মানুষকে আবারও ফিরে পায়। মাদকের অপরাধ দমনে চীনা পুলিশ কাজ করছে। চীনা পুলিশরা দিন রাত ধরে সড়কে, পথে, কমিউনিটিতে টহল দেন, যে কোনো সময় কল পেলেই চলে আসেন। বাতাসে, বৃষ্টিতে সড়ক যোগাযোগ-ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করেন, সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে আঘাত করেন—যাতে লোকজনের আর্থিক নিরাপত্তা রক্ষা করা যায়। কমিউনিটি, সড়ক, জনসাধারণের খাবার, থাকা, যাতায়াত, সবখানে চীনা পুলিশ জনগণকে সেবা করার নীতি মেনে চলে।
চীনের গণ-নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে চীনে হত্যা মামলা সবচেয়ে কম, ফৌজদারি অপরাধ সবচেয়ে কম, গোলাগুলির মামলা সবচেয়ে কম। দশ বছরে চীনের ফৌজদারি মামলা, নিরাপত্তা ঘটনাসহ ৫টি সূচক ব্যাপকভাবে কমেছে। ২০২১ সালে জন-নিরাপত্তা খাতে সন্তুষ্টির হার ৯৮.৬ শতাংশ। যা ২০২১ সালের তুলনায় ১১ শতাংশ বেড়েছে।
এই পরিসংখ্যানের পর চীনা পুলিশের অবদান চীনের জনগণকেন্দ্রীক চিন্তাধারার প্রতিফলন।
এমন দিবসে যখন আমরা পুলিশ ও পুলিশী ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন দিচ্ছি, তখন আমরা দেখি সব দেশের পুলিশের অবস্থা এক না। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স’ ওয়েসবাইটের ৩ ডিসেম্বর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে মার্কিন পুলিশ ১০৭৪ জনকে হত্যা করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে বেশি। আফ্রিকান আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েড মার্কিন পুলিশের পায়ের চাপায় শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়। ওহাইও রাজ্যের পুলিশ ২৫ বছর বয়সী অ্যাফ্রো আমেরিকা পুরুষ জয়লান ওয়াকারকে সড়কে চেক করে। পুলিশ বলে, ওয়াকার গাড়ি থেমে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মাত্র দশ সেকেন্ড পর ৮ জন পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করে। মৃতদেহ পরীক্ষা করে জানা যায়, ওয়াকারকে ৪৬টি গুলি করা হয়েছে। তদন্তের পর দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে মানুষ হত্যার ঘটনায় অধিকাংশই সড়কে পরীক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, অ-সহিংস ঘটনা—যেখানে বন্দুক ব্যবহারের দরকার হয় না।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, যখন মার্কিন পুলিশের সহিংস আইন প্রয়োগের কথা বলে, তখন লোকজনের প্রতিক্রিয়া হল ‘এমন ঘটনা কখন আবার ঘটবে? মার্কিন লোকজন দিন রাত পুলিশের ভয়ে থাকে। যখন মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশ জনগণের প্রাণের হুমকি হয়, তখন লোকজন কাকে বিশ্বাস করবে? এ থেকে বোঝো যায়, যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র’ হল সংখ্যালঘু শ্রেণীর বিশেষ অধিকার; তবে সাধারণ লোকজন, দুর্বল গোষ্ঠী ও বহুবর্ণের মানুষজন মার্কিন পুলিশের সহিংস আইন প্রয়োগের শিকার হয়।
প্রত্যেক দেশের অবস্থা ভিন্ন, নিজস্ব পুলিশ রয়েছে। তবে একটি বিষয় অভিন্ন, তা হলো পুলিশের দায়িত্ব হল সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষা করা, জনগণকে রক্ষা করা, দেশ রক্ষা করা। যখন আমরা চীনা পুলিশের ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, যখন আমরা সুষ্ঠু সামাজিক নিরাপত্তা উপভোগ করছি, তখন আমরাও আশা করি বিভিন্ন দেশের লোকজন নিরাপদ পরিবেশে থাকতে পারবে। যাদের উচিত মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া তারা যেন জনগণের জন্য হুমকি হয়ে না দাঁড়ায়।
(শুয়েই/তৌহিদ)