বাংলাদেশে ধান-চাল উৎপাদন পর্যাপ্ত; তারপরও বাড়ছে দাম
2023-01-08 17:35:25

বাংলাদেশে সম্প্রতি পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান-চাল উৎপাদন হয়েছে। তারপরও দেশে চালের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে কৃষকরাও তাদের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়েছে। চালের কল বা মিলারদের দাম বাড়ানোর কারণে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

 

কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত। বর্তমানে দেশে জিডিপির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ আসে কৃষি থেকে। সবচেয়ে বড় কথা কৃষি এ দেশের জনমানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা দেয়। দেশের বিপুল জনসংখ্যার কর্মসংস্থান হয় কৃষি খাতে। তাই কৃষি খাত সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ।

 

বাস্তবতা হলো দেশে চালের সরবরাহ ভালো। মৌলিক কোনো সংকট নেই। বিগত দুই দশকে সেবা ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের অবদান ভালো। তাই কৃষির অবদান শতাংশ হারে কমলেও খাদ্য উৎপাদনে ধারাবাহিক অগ্রগতি ও কর্মসংস্থানে কৃষির ভূমিকা অপরিবর্তিত রয়েছে। উল্লেখ্য, কৃষি বলতে কেবল ফসল, সবজিই নয়- বরং পাট, তুলা, আখ, ফুল, ফল, বনজসম্পদ, মাছ, পশুসম্পদ, এমনকি মাটি ব্যবস্থাপনাও বোঝায়।

আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ইফপ্রি) ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, দেশের দারিদ্র্য নিরসনে কৃষি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইফপ্রির বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। এফএও-এর বার্ষিক খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি প্রতিবেদন ২০১৯ অনুযায়ী, গত ৫০ বছরে দেশের প্রধান শস্য উৎপাদন চার থেকে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মূলত চারটি প্রধান কারণে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে গত অর্ধযুগ ধরে। এক, ফসল আবাদের জন্য কৃষকের কাছে বেশি ফসলের বীজ আছে। দুই, অনেক বেশি সংখ্যক জাত উদ্ভিদ প্রজননবিদরা উদ্ভাবন করেছেন। আর তা কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। তিন, সারের মূল্য হ্রাস ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা হয়েছে। চার, বেসরকারি বীজ আমদানি উৎসাহিত করা হয়েছে।

তবে প্রশ্ন হলো উৎপাদন এত ভালো হলেও বাংলাদেশে প্রধান খাদ্য চালের দাম কমছে না কেন। কেন তা শুধু বেড়েই চলেছে?

সাধারণত বাজারে দাম বাড়লে পর্যাপ্ত যোগান নিশ্চিত করার মাধ্যমেই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হয় বা কমাতে হয়। চালের জন্যও একই নিয়ম কার্যকর। যেহেতু বাংলাদেশে ধান-চালের বাম্পার ফলন হয়েছে, সেহেতু দাম বৃদ্ধির পর সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যদি চালের প্রবাহ বৃদ্ধি করে, তাহলেই মিল মালিক থেকে শুরু করে খুচরা দোকানদার পর্যন্ত সব পর্যায়ের বিক্রেতা চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাধ্য হবে। আর এজন্য সরকারকেই আগে কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে ধান চাল কিনতে হবে এবং নিজের মজুদ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট বিভাগ কি সেই কাজ করছে? যদি করেই থাকে তাহলে বাজারে চালের ঘাটতি বা উচ্চ দামের বিপরীতে চালের যোগান বাড়ানো যাচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে।