চীনের কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নতুন পর্যায়ে উপনীত হওয়ার পর জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেছে। খ্রিস্টিয় নববর্ষ উদযাপন এবং চীনের আসন্ন বসন্ত উৎসব তথা চান্দ্র নববর্ষকে সামনে রেখে দারূণভাবে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে গোটা চীন। সবকিছু মিলিয়ে মহামারির আগের পর্যায়ে ফিরে যাবার একটা জোর সম্ভাবনা তৈরি হয়ে চীনের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে।
কিন্তু কিছু কিছু পশ্চিমা গণমাধ্যম চীনের প্রকৃত পরিস্থিতিকে আড়াল করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে এবং চীনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনছে। এতে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে এবং বিশ্বের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।
চীনের কোভিড প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সবশেষ এবং বড় ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য হচ্ছে যে চীনের নতুন কোভিড নীতি বিশৃঙ্খল।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে চীনের নতুন কোভিড নীতি কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেনি। বরং খ্রিস্টিয় নববর্ষে ৫০ মিলিয়ন মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে দেশজুড়ে ভ্রমণ করেছে। নতুন বছরের প্রথম দিনে চীনে ১০ হাজার ৬৪০টি সিনেমা হল চালু হয়- যা ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। আসন্ন বসন্ত উৎসবে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে ভ্রমণ করবেন এবং এ জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েছে চীনের পরিবহন খাত।
চীন ‘পিপল ফার্স্ট’ ও ‘লাইফ ফার্স্ট’ নীতির ভিত্তিতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোভিড প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করেছে। চীন বর্তমানে সংক্রমণ প্রতিরোধের নীতি থেকে গুরুতর রোগীর চিকিৎসার প্রতি নজর দিচ্ছে। টিকা কর্মসূচি জোরালো করা থেকে চীন বর্তমানে উৎপাদন জোরদার করার ওপর জোর দিচ্ছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনের নিরিখেই বর্তমানে চীনের কোভিড প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নীতি পরিচালিত হচ্ছে।
চীনে কোভিড মহামারি সম্পর্কে আরেকটি বড় ভুল প্রচারণা হচ্ছে- চীনের কোভিড প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।
কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে- চীন অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে কোভিড প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। বিগত তিন বছরে চীন ১০০ ক্লাস্টার সংক্রমণ ঠেকিয়েছে এবং ১৪০ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষা করেছে।
ডিসেম্বর ২০২২-এর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চীন জনগণকে ৩.৪৭ বিলিয়ন টিকা দিতে সক্ষম হয়েছে। দেশটির ৯০ ভাগ মানুষকে পুরোপুরি টিকার আওতায় আনতে পেরেছে।
কোভিড ১৯-এ মৃত্যুহারে চীন বিশ্বে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্বের বহু দেশে মৃত্যুহার চীনের চেয়ে অনেক বেশি। চীনের কোভিড নিয়ন্ত্রণ নীতি ব্যর্থ হলে ওই সব পশ্চিমা দেশে মৃত্যুহার কেন চীনের চেয়ে বেশি- এ প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। কোভিড মোকাবিলায় ওইসব দেশের অদক্ষতা, নিষ্ক্রিয়তা ও বিশৃঙ্লার কারণে তাদের জনগণ যে দুর্ভোগে পড়েছে সে বিষয়ে ওইসব পশ্চিমা গণমাধ্যম জোরালোভাবে কিছু বলে না।
চীনের কোভিড রোগীরা পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না- এটি আরেকটি ভ্রান্ত প্রচারণা।
কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, চীনের সকল চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় যথাযথ ও পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিয়েছে। ডিসেম্ব ২৫, ২০২২ পর্যন্ত চীনে দ্বিতীয় শ্রেণির হাসপাতালে ফিভার ক্লিনিকের সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে এমন ফিভার ক্লিনিকের সংখ্যা ৪১ হাজার।
চীনে দ্বিতীয় শ্রেণির চিকিৎসা কেন্দ্রে ৫.৬১৬ মিলিয়ন বেড রয়েছে। এর কমবেশি ৬০ শতাংশ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। চীনে দেড় লাখ আইসিইউ বেড রয়েছে। প্রতি এক লাখ রোগীর জন্য ১০.৬টি আইসিইউ বেড রয়েছে।
কোভিড চিকিৎসায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধের সরবরাহ রয়েছে চীনে। জ্বরের ওষুধ উৎপাদনে চীন বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। চীন দৈনিক ২০২ মিলিয়ন ইবুপ্রোফেন ও ১৯০ মিলিয়ন এচিটামিনোফেন ট্যাবলেট উৎপাদন করছে।
চীনে গ্রামের মানুষজন চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না- এমন একটা ভুল প্রচারণাও রয়েছে।
কিন্তু সত্য হচ্ছে- চীনে গ্রাম পর্যায়ে ২৩ হাজার চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে এবং ৫ লাখ ৯৯ হাজার গ্রামীণ ক্লিনিক রয়েছে। এর ফলে গ্রামের রোগীরা সময়মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকেন। অতি সম্প্রতি চীনের কর্তৃপক্ষ গ্রামীণ পর্যায়ে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় নজর দিয়েছে।
চীনের বিরুদ্ধে আরেকটি ভুল অভিযোগ হচ্ছে তার কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা সম্পর্কিত তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। তবে প্রকৃত তথ্য হচ্ছে- চীন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কোভিড মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করে থাকে। অনেক সময় রোগী কোভিডে আক্রান্ত হয়ে থাকলেও তার মৃত্যু কোভিডে না হয়ে অন্যবিধ রোগ বা উপসর্গে হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ওইসব মৃত্যু কোভিডজনিত নয়।
পরিশেষে বলা যায়, উপরোক্ত তথ্য-উপাত্ত চীনের কোভিড নীতির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারকে ভুল প্রমাণ করে এবং সত্যকে তুলে ধরে। চীনের কোভিড বিরোধী যুদ্ধ চলমান রয়েছে। মিথ্যা এবং অসত্য প্রচারণাকে ব্যর্থ করে চীন এ যুদ্ধে জয়ী হবে।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।