জানুয়ারি ৬: ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় সহযোগিতা, অবকাঠামো, অর্থ, পর্যটনসহ ধারাবাহিক সহযোগিতামূলক দলিলে চীন ও ফিলিপিন্স দুটি দেশের শীর্ষনেতাদের উপস্থিতিতে স্বাক্ষর করা হয়। এতে বেইজিংয়ে নতুন বছরের প্রথম কূটনৈতিক কার্যক্রমের গুরুত্ব প্রমাণিত হয়।
গত ৪ জানুয়ারি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিং সফররত ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট ফার্দিন্যান্দ মার্কোসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দু’নেতা কৌশলগত যোগাযোগ বজায় রাখতে একমত হয়েছেন। পাশাপাশি তারা বাস্তব সহযোগিতা জোরদার ও সুষ্ঠুভাবে দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যু মোকাবিলার খাতে গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্যে পৌঁছেছেন।
ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট ফার্দিন্যান্দ মার্কোস গত বছরের জুন মাসে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর, এ সফর হলো আসিয়ান দেশসমূহ ছাড়া তার প্রথম বিদেশ সফর। তিনি এ বছর চীন সফর করা প্রথম বিদেশি শীর্ষনেতা। এতে দেখা যায়, দু’দেশের সম্পর্ক কত ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রেসিডেন্ট মার্কোস প্রথমবারের মতো থাইল্যান্ডের ব্যাংককে সাক্ষাৎ করেন। যা দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। এক মাস পর দু’নেতা আবারও বেইজিংয়ে দেখা করেন। যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে আরো স্পষ্ট ও বাস্তব পথ দেখিয়েছে।
আসলে দু’দেশের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ ও বিনিময়ের ইতিহাস রয়েছে। আগে দু’দেশের সম্পর্কে কিছুটা সমস্যা ছিল। তবে দু’পক্ষের অভিন্ন প্রচেষ্টায় দু’দেশের সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবার সুষ্ঠু উন্নয়নের পথে ফিরে এসেছে এবং অব্যাহতভাবে সহযোগিতা খাতে সাফল্য এসেছে। এটি সহজ কাজ নয়; তাই দু’পক্ষের উচিত এতে গুরুত্ব দেওয়া।
বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, আশেপাশের দেশ ও অঞ্চল বিষয়ক কূটনীতির খাতে চীন সবসময় ফিলিপিন্সকে গুরুত্ব দেয়। কৌশলগত উচ্চতায় চীন দু’দেশের সম্পর্ক বিবেচনা করে। চীন ফিলিপিন্সের সঙ্গে একযোগে ‘পরস্পরকে সাহায্য দেওয়া ভাল প্রতিবেশী, পরিবারের মতো, সহযোগী ও উভয়ের জয়ের ভালো অংশীদার’ হতে চায়।একযোগে এশিয়ায় শান্তি ও সমৃদ্ধি রক্ষার জন্য চীন ফিলিপিন্স ও অন্যান্য আসিয়ান দেশের সঙ্গে সহযোগিতা ও উন্নয়নকে ফোকাস করতে চায়। এতে দেখা যায় আশেপাশে দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অংশীদারি সম্পর্ক উন্নয়ন- চীনের আন্তরিক ইচ্ছা। প্রেসিডেন্ট মার্কোস জোর দিয়ে বলেছেন, চীন হচ্ছে ফিলিপিন্সের সবচেয়ে শক্তিশালী সহযোগী অংশীদার। কোনো শক্তি দু’দেশের বন্ধুত্ব উন্নয়নে বাধা দিতে পারবে না। এতে দু’পক্ষের ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব জোরদারের ইতিবাচক ইচ্ছা ফুটে উঠেছে।
এবারের বৈঠকে চীন জানায়, ফিলিপিন্সের সঙ্গে একযোগে অব্যাহতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যু মোকাবিলা করা হবে এবং পেট্রোলিয়াম খাতে উন্নয়নের আলোচনা আবারো শুরু করা হবে। ফিলিপিন্স ইতিবাচক জবাব দিয়ে জানায়, ফিলিপিন্স চীনের সঙ্গে পেট্রোলিয়াম খাতে উন্নয়নের আলোচনা আবারো শুরু করতে আগ্রহী।
১৯৭৪ সালে ১৭ বছর বয়সী মার্কোস তাঁর মা একযোগে প্রথম চীন সফর করেছিলেন। ওই সফরে চীনের প্রাচীন প্রজন্মের নেতৃবৃন্দ তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এখন তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবারও চীন সফর করেছেন। এতে দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে সবাই অনেক উৎসাহী। নেতৃবৃন্দের কৌশলগত দিক-নির্দেশনায়, দু’দেশ অবশ্যই বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাকে ফোকাস করবে এবং সুষ্ঠুভাবে মতভেদ সমাধান করবে। যাতে আরো বেশি বাস্তব সহযোগিতামূলক সাফল্য দু’দেশের জনগণের কল্যাণ বৃদ্ধি করে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় অবদান রাখে।
(আকাশ/তৌহিদ/ফেইফেই)