দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গ্রন্থাগার রয়েছে- যার প্রবেশদ্বারে চীনা ভাষায় লেখা আছে ‘সত্য চেতনা অনুসন্ধান এবং আলোর অনুসরণ’। সামনের একটি টেবিলে রাখা আছে চীনের জাতীয় চিহ্ন অঙ্কিত বইয়ের তালিকা। বিভিন্ন বই সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
২০১৪ সালের ৪ জুলাই দক্ষিণ কোরিয়া সফরকালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সিউল বিশ্ববিদ্যালয় সফর করেন। তিনি “চীন-দক্ষিণ কোরিয়া সহযোগিতার ভবিষ্যত সৃষ্টি এবং এশিয়ার পুনরুদ্ধার ও সমৃদ্ধি লাভ’ শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ একটি ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে তিনি সিউল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি উপহার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি চীনের অবস্থা সম্পর্কিত ১০ হাজার বই ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এসেছি। এসব আমি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে শিক্ষাদান ও গবেষণার জন্য উপহার দিতে চাই।’
এক বছর পর সি চিন পিং’র গ্রন্থাগার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। এটি সিউল বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র গ্রন্থাগার- যার নামকরণ করা হয়েছে বিদেশী শীর্ষনেতার নামে। এ গ্রন্থাগারকে মজা করে সি চিন পিং’র বইয়ের দোকান বলে ডাকে দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম।
প্রেসিডেন্ট সি’র এ উপহারের ভিত্তিতে সিউল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চীন সম্পর্কিত অনেক বই সংগ্রহ করেছে। তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়টি চীনের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা শুরু করেছে। সি চিন পিং’র গ্রন্থাগারকে চীন-দক্ষিণ কোরিয়া সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছে সিউল বিশ্ববিদ্যালয়।
এ গ্রন্থাগার চালু হওয়ার ৮ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক তরুণ-তরুণী এর মাধ্যমে প্রকৃত চীনকে চিনতে পেরেছেন। তারা জানতে পারছেন যে চীন একটি শান্তিপ্রিয় ও সহযোগী প্রতিবেশী দেশ।
সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ভুল ঝোঝাবুঝি দূর এবং মনের সংযুক্তিকে জোরদার করে। সিউল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেওয়ার সময় সি চিন পিং আরও ঘোষণা করেন, চীন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ জন শিক্ষার্থীকে ২০১৫ সালে চীনে ‘চীনা ভাষা প্রতিযোগিতা’র গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানায়।’
২০১৫ সালে “চায়নিজ ব্রিজ’ নামক চীনা ভাষা প্রতিযোগিতায় চীনা দর্শকদের ওপর খুব ছাপ ফেলেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার এক মেয়ে। তার চীনা নাম শেন সু ইউয়ান। তিনি চীনা ভাষায় গান গাইতে পারেন এবং অপেরাসহ চীনের বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি পরিবেশন করতে পারেন। তিনি বিশ্বজুড়ে “চায়নিজ ব্রিজ’ নামক চীনা ভাষা প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ কোরিয়ার শাখার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তিনি বলেন, চীনা ভাষা ও চীন একটি হালকা বায়ুর মতো নরমভাবে আমাকে উত্তোলন করে দূরে ও উঁচুতে নিয়ে গেছে।
চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে রয়েছে বিরল সুবিধা। দু’দেশের মানুষ ও সংস্কৃতিরও অনেক মিল রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক তারকা ক্যারিয়ার উন্নয়ন করতে চীনে আসেন। চীনের অপেরা এবং সিল্ক রোড সংস্কৃতি মাসসহ নানা অনুষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ায় জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, দু’দেশের মধ্যে বার্ষিক বিনিময়কারীর সংখ্যা কোটিরও বেশি। দু’দেশ একে অপরের বিদেশী শিক্ষার্থীদের বৃহত্তম উত্স।
গত তিন বছরে করোনা মহামারিতে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ব্যাহত হয়নি। ২০২০ সালে সিউলে চীনের সংস্কৃতি কেন্দ্র অনলাইন ও অফলাইনে ৪০টিরও বেশি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দু’দেশ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। তাতে নির্ধারিত হয় যে ৫ বছরের মধ্যে ৫০টিরও বেশি ক্লাসিক বই অনুবাদ করা হবে।
২০২২ সাল হলো চীন-দক্ষিণ কোরিয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকী এবং চীন-দক্ষিণ কোরিয়া সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বর্ষ। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে “চায়নিজ ব্রিজ’ ক্লাবের সিউল স্টেশন উদ্বোধন হয়, যা দক্ষিণ কোরিয়ার আরও বেশি তরুণদের জন্য চীনা ভাষা শেখার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এক সময় টাই চি’র মাধ্যমে দু’দেশের বিনিময় ব্যাখ্যা করেছেন।তিনি বলেন, “যদি রাজনীতি, অর্থনীতি ও নিরাপত্তামূলক সহযোগিতা দেশের সম্পর্কোন্নয়নের শক্ত শক্তি হয়, তাহলে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান জনগণের অনুভূতি ও মনের সংযুক্তি জোরদারের নরম শক্তি। এদুটি শক্তির সংমিশ্রণে বিভিন্ন দেশের আন্তরিক সহাবস্থান সৃষ্টি করা হবে।’