জানুয়ারি ৩: ভানুয়াতুর এক বিখ্যাত রাজনীতিক বলেন, ‘আমরা জাপানকে মনে করিয়ে দিতে চাই, যদি জাপান পরমাণু দূষিত পানি নিরাপদ মনে করে, তাহলে জাপান এ পানি টোকিওতে ঢালতে পারে, প্যারিসে পানির পরীক্ষা করতে পারে, ওয়াশিংটনে এ পানি মজুদ করতে পারে। কিন্তু, প্রশান্ত মহাসাগরকে অবশ্যই পরমাণু দূষণ-মুক্ত রাখা উচিত।’ তাঁর এ কথা হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের মানুষের মনের কথা।
দু’বছর আগে এপ্রিল মাসে, জাপান সরকার ঘোষণা করেছিল যে, ২০২৩ সালের বসন্তকাল থেকে তাদের পরমাণু দূষিত পানি সাগরে ঢেলে ফেলা শুরু করবে। পরিকল্পনা অনুসারে সে সময় ঘনিয়ে এসেছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববাসীর বিরোধিতা দিন দিন বাড়ছে। প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের জনগণ এর প্রবল বিরোধিতা করে যাচ্ছে। বিশ্লেষক বলেন, যদি জাপান সত্যিই পরমাণু দূষিত পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলে, মহাসাগর তীরবর্তী দেশগুলো জাপানের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করার অধিকার রাখে।
জাপানের এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে অর্থ বাঁচানো। তারা বেশি অর্থ খরচ করতে চায় না। কিন্তু তাদের পরমাণু দূষণ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। যা অত্যন্ত অবিবেচনা ও স্বার্থপর আচরণ। বিশেষ করে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশসমূহে পরমাণু দূষণের বিষয়ে তাদের বিশেষ বেদনা রয়েছে। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মার্শাল দ্বীপে ৬৭বার পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এতে এখনও স্থানীয় অধিবাসীরা পরমাণু তেজস্ক্রিয়তার নানা দুর্যোগ মোকাবিলা করছে।
ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরমাণু দূষিত পানির পরিমাণ ১৩ লাখ টনেরও বেশি। জাপানের রাজনীতিকরা আগে বলেছিলেন, এই পানি পরিশুদ্ধ করার পর অনেক নিরাপদ হয়েছে। তারা বলেছিলেন, এই পানি পানযোগ্য। তবে, বাস্তবতা ভিন্ন।
জাপানের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রবন্ধে জানায়, এই পানি পরিশোধন করার পর আরো মোট ৬৪টি তেজস্ক্রিয় উপাদান রয়েছে। এ পানি যদি সাগরে ফেলা হয়- সাগরের পরিবেশ তেজস্ক্রিয় দূষণের কবলে পড়বে।
ধারণা করা যায়, এই ১৩ লাখ টন পরমাণু দূষিত পানি সাগরে ফেললে আশেপাশের অঞ্চলের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপদেশের বিখ্যাত পরিবেশ রক্ষা-বিষয়ক এক সংস্থা বলেছে যে, ‘জাপানের এহেন দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জনগণ ও দ্বীপের সঙ্গে পরমাণু যুদ্ধ চালানো- সমান কথা।’
সাগর হচ্ছে মানবজাতির অভিন্ন সম্পদ ও বাসস্থান। জাপানের এমন পরিকল্পনা তাদের নিজেদের একক ব্যাপার নয়। ‘আইএইএ’ এখনও সেসব দূষিত পানি সার্বিকভাবে যাচাই করছে। জাপানের এই আচরণ সব পক্ষের উদ্বেগকে উপেক্ষা করেছে। ইতিহাসে দেখা যায়, জাপান আশেপাশের দেশগুলোর জন্য গুরুতর বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। এখন আরো জঘন্য ইতিহাস তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি? এমন উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব।
(আকাশ/তৌহিদ/ফেইফেই)