জানুয়ারি ২: আরসিইপি আসিয়ানের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদস্যদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আসিয়ানভুক্ত দশটি দেশ এবং চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। আরসিইপি হলো বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অবাধ চুক্তি।
আরসিইপি কার্যকর হওয়ার পর গত এক বছরে ১৫টি স্বাক্ষরকারী দেশের মধ্যে ১৩টিতে তা কার্যকর হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির বিশ্বায়নের বিরোধিতা ও দুর্বল পুনরুদ্ধারের মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এ সময় আরসিইপি ‘কুয়াশায় আলোর রশ্মি’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
চীন আরসিইপি-তে যোগদানের মাধ্যমে উচ্চমানের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণের সংকল্প দেখায়। এটি হলো চীনের বৈদেশিক উন্মুক্তরণের আরেকটি মাইলফলক।
আরসিইপি’র জন্য চীনের যোগদান ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ ও দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তা হিসেবে আরসিইপি-তে চীনের অর্থনীতির হার প্রায় ৬০ শতাংশ। চীন অব্যাহতভাবে নিজের নতুন উন্নয়ন দিয়ে বিশ্বের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চীনা অর্থনীতি আঞ্চলিক ও বিশ্বের অর্থনীতিতে শক্তিশালী জীবনীশক্তি যুগিয়ে চলেছে।
মালয়েশিয়ার ডুরিয়ান, থাই ল্যাটেক্স বালিশ ও ভিয়েতনামী কফি ব্যাপকভাবে চীনে রপ্তানি হচ্ছে। গত মার্চ মাসে কুয়াংসিচুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী নাননিংয়ে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের কনসাল জেনারেলরা ‘ক্যারিয়ার অ্যাঙ্কর’-এ পরিণত হন। তাঁরা ই-কর্মাস প্ল্যাটফর্মে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পণ্য বিক্রয় করেন। আরসিইপি’র মাধ্যমে শুল্ক ও করের সুবিধাজনক ব্যবস্থা অন্তঃদেশীয় ই-কমার্সের জন্য নতুন ব্যবসা ও পদ্ধতি সৃষ্টি করেছে।
সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান অনুসারে, আরসিইপি অন্তঃদেশীয় ই-কমার্স আমদানির সূচক স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি বাণিজ্যের আকার, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, বাজারের চাহিদা, ভোক্তাদের অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে সৃষ্ট।
২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিক থেকে ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত এ সূচক ১.৯৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত চীন এবং আসিয়ান একে অপরের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়।
আসিয়ান হলো আরসিইপি’র প্রধান সত্তা। চীন ও আসিয়ান বাজারের ভূমিকা পালন করলে বিরাট শক্তি সৃষ্টি হবে। এক বছরে চীন ও আসিয়ানের মধ্যে পণ্যবাণিজ্যের ৯০ শতাংশই ধীরে ধীরে শুল্কমুক্ত হয়েছে।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চীন ও আরসিইপি’র সদস্যদেশগুলোর মধ্যে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১১.৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭.৯ শতাংশ বেশি। মার্কিন পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্সের অনুমান অনুযায়ী, আরসিইপি-র সদস্যদেশগুলোর মধ্যে ৫১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিট রপ্তানি বেড়েছে।
এ ছাড়াও, আরসিইপি এমন একটি চুক্তি যার আওতায় চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া আছে। এটি পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এর ফলে কার্যকরভাবে তিন দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক বিনিময় বেড়েছে ও বাড়ছে।
গত নভেম্বরে আয়োজিত পঞ্চম চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় আরসিইপি’র সকল সদস্যদেশ অংশ নেয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিগত এক বছরে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও বিভিন্ন সদস্যদেশের মধ্যে পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা আরও বাড়বে এবং আঞ্চলিক ও বিশ্বের অর্থনীতির উন্নয়নে এটি আরও বেশি অবদান রাখবে। (ছাই/আলিম)