সি আনে পরিবেশনা উপভোগ করছেন পর্যটকরা
গতকাল (রোববার) ছিল ২০২৩ সালের প্রথম দিন। নববর্ষ উদযাপনে কেনাকাটা না করলে কি চলে? করোনা আক্রান্ত হয়ে আমি প্রায় একমাস ধরে ঘরে আছি। সুস্থ হওয়ার পর এবার প্রথম বের হলাম। তাও সুপারমার্কেটে কেনাকাটা করতে। সুপারমার্কেটগুলো ছিল নানা পণ্যে জমজমাট। মানুষের এত ভিড় যে আমি পা ফেলতে পারছিলাম না, সত্যি বলতে, এ দৃশ্য আমাকে অবাক করে দিয়েছে। বিশেষ করে অনলাইনে এমন দৃশ্য সবার নজর কেড়েছে। রেস্তোরাঁয় আবারও লাইন ধরে খাওয়ার জন্য অপেক্ষা শুরু হয়েছে। শপিংমলে আবার গভীর রাত পর্যন্ত আলো জ্বলছে। অফিসে যাওয়া ও বাসায় ফিরে আসার সময় আবারও ট্র্যাফিক জ্যামের দেখা মিলছে। চীনের পর্যটকরা এবং বিদেশে থাকা ব্যবসায়ীরা আবারও ব্যস্ত জীবন শুরু করেছেন। সর্বত্র হৈ চৈ চোখে পড়েছে। এসব দৃশ্য দেখে আমাদের মনে হয় যে, একটি প্রাণচঞ্চল চীন ফিরে এসেছে। এ থেকে বোঝা যায় যে ২০২৩ সালে চীনের অর্থনীতি উষ্ণ হয়ে উঠবে, যা বিশ্ব অর্থনীতি চাঙ্গা করার গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হবে।
আটশবাজির ছবি তুলছেন পর্যটকরা
এটি আসলে শুধু আমাদের নিজের অনুভূতির কথা নয়। চীনের করোনা প্রতিরোধক নীতি সুবিন্যস্ত হওয়ার পর চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজারের উষ্ণতার আলো দেখতে পেয়েছে। চীনের চে চিয়াং প্রদেশের ই উ ও থোং সিয়াংসহ নানা অঞ্চলে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশী অর্ডার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। শাং তো প্রদেশের আন্তর্জাতিক মালামাল পরিবহনে লিপ্ত মাও সিয়াও পেই বলেন, এখন আমাদের অর্ডারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্ডারগুলো বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছে। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত নিয়ে আমরা আস্থাবান। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজ চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও চীনা বাজারের সম্ভাবনায় আস্থা প্রকাশ করেছে। ইউবিএস এক প্রতিবেদনে বলেছে, অনেক বহুজাতিক কোম্পানি চীনে উৎপাদন ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করছে। মার্কিন রোডিয়াম কনসাল্টিং কোম্পানি সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চীনে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এমন বড় কোম্পানিগুলো এখনও তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা অব্যাহত রেখেছে। জার্মান অটোমেকার ভক্সওয়াগেন গ্রুপ সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে চীনে তারা দুটি যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানিতে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।
রেস্তোরায় লাইন ধরছে
তাদের আস্থা কোথা থেকে এসেছে? এর জবাব হয়তো দিতে পারে গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং’র নববর্ষের ভাষণ। ভাষণে সি চিন পিং বলেন, গত বছর চীন অব্যাহতভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তার অবস্থান ধরে রেখেছে। বছর শেষে চীনের জিডিপি’র পরিমাণ ১২০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। দারিদ্র্যমুক্তির সাফল্য ধরে রাখা এবং সার্বিকভাবে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন হয়েছে। চীনের মহাকাশ স্টেশন সার্বিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। "ফুচিয়ান" নামের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী চালু হয়েছে। নিজের নির্মিত প্রথম বড় বিমান সি-৯১৯ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। পাই হ্য থান জল বিদ্যুত্ কেন্দ্র চালু হয়েছে। ২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাবস্থার মধ্যে চীনের অর্জিত সাফল্য প্রমাণ করেছে যে চীনের অর্থনীতি বলিষ্ঠ, সম্ভাবনাময় এবং প্রাণচঞ্চল। চীন এখনও বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বৃহত্তম চালিকাশক্তি।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চীনের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্মসভায় আন্তর্জাতিক সমাজের আস্থা আরও বেড়েছে। অর্থনৈতিক কর্মসভায় বলা হয়, ২০২৩ সালে চীন ছ’য়টি দিক থেকে তার অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাবে। তাতে জোর দিয়ে বলা হয় যে করোনা মহামারি এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সমন্বয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অনুমান করা যায় যে নতুন বছরে চীনের অর্থনীতি ও সমাজ দ্রুত সুশৃংখল হবে এবং চীনাদের জীবন দ্রুত স্বাভাবিক হবে।
সিএনএন’র খবর থেকে জানা গেছে, চীনের করোনা প্রতিরোধ নীতি সুবিন্যাস্ত এবং অর্থনীতি চাঙ্গার ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে গোল্ডম্যান সাচ, সোসাইটি জেনারেলে এবং মর্গান স্ট্যানলিসহ অন্যান্য অনেক আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে চীনের অর্থনীতি ২০২৩ সালে স্থিরভাবে পুনরুদ্ধার করবে।
২০২৩ সাল হবে চীনের সার্বিকভাবে সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের চেতনা বাস্তবায়ন এবং সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ গঠনের নতুন অগ্রযাত্রার প্রথম বছর। একটি প্রাণচঞ্চল চীন ২০২৩ সালে বিশ্বের জন্য আরও সুযোগ ও আশার আলো সৃষ্টি করবে বলে আশা করা যায়। ঠিক যেমন সিঙ্গাপুরের ‘লিয়ান হ্য চাও পাও’ পত্রিকা বলেছে, চীনের অর্থনীতি বিশ্ব সমৃদ্ধির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। করোনা মহামারি প্রাদুর্ভাবের প্রথম বছরে চীন সরকার কার্যকর প্রশাসনের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর চেইন রোধ করতে এবং জনগণের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে চীন সরকার একই ধরনের নমনীয় এবং বাস্তববাদী চেতনা এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞায় প্রাণচঞ্চল অর্থনীতি ও সমাজ পুনরুদ্ধার করতে পারবে।
(রুবি/এনাম)