খ্রিস্টিয় নতুন বছর ২০২৩ উপলক্ষ্যে শনিবার চীনের জনগণ ও বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি’র বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং ইন্টারনেটে তার এ বক্তব্য সম্প্রচার করা হয়। ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হবার পর এটি নতুন বছরে সি’র দশম শুভেচ্ছা বার্তা। নানা বিবেচনায় প্রেসিডেন্ট সির এ শুভেচ্ছা বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ।
বক্তব্যের শুরুতে প্রেসিডেন্ট সি সফলভাবে ২০তম জাতীয় কংগ্রেস আয়োজনের কথা উল্লেখ করে বলেন, তারা সার্বিক সমাজতান্ত্রিক আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে পরিকল্পনা নিয়েছেন। চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিক চীনা জাতির মহান পুনরুজ্জীবনের কথাও জোর দিয়ে বলেন প্রেসিডেন্ট সি।
সিপিসি শত বছরের সাহস ও পরিশ্রমে চীনের সুন্দর ভবিষ্যত্ গড়ে তুলেছে। আগামীতে চীন পরিশ্রমের মাধ্যমে অবশ্যই বিস্ময় সৃষ্টি করবে। চীনের প্রাচীন বিখ্যাত কবি সু শিকে উদ্ধৃত করে সি বলেন, সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ সমাধান করতে হবে এবং সবচেয়ে মহান লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হবে। কেবলমাত্র দীর্ঘ পথেই গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। চীন সে পথেই নতুন যাত্রা করেছে।
কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধে চীনের সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বর্তমানে করোনার সংক্রমণের নতুন একটা পর্যায় দেখা দিয়েছে। সবাই মিলে আবারও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একে প্রতিরোধ করতে হবে বলেও জানান তিনি।
ইতিহাসের দীর্ঘ নদীর ঢেউয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চীনা মানুষের অব্যাহত পরিশ্রমের হাত ধরে বর্তমান চীন গড়ে উঠেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন সি চিনপিং।
তিনি বলেন, আজকের চীন ধারাবাহিক স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে। বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস ও প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমস সফলভাবে আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন তিনি বার্তায়। বলেন, খেলোয়াড়রা গর্ব করার মতো সাফল্য অর্জন করেছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট সি বলনে, শেনচৌ ১৩, ১৪, ১৫ মহাকাশযান মহাকাশে বিরাট চীনা মহাকাশ স্টেশন নির্মাণ করেছে। আমাদের মহাকাশের বাসস্থান গড়ে তোলা হয়েছে।
এ বছর চীনা মুক্তি ফৌজের ৯৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী চালু, প্রথম সি-৯১৯ বড় বিমান হস্তান্তর, পাই হ্য থান জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সর্বোচ্চ উৎপাদন শুরু করার মতো বেশ কিছু মাইলফলক অর্জনের কথাও উল্লেখ করেন সি।
আজকের চীন প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ চীন উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বিভিন্ন অবাধ বাণিজ্যিক পরীক্ষামূলক এলাকা এবং হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দর নির্মিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকা আলাদাভাবে উন্নত হচ্ছে। পশ্চিম-মধ্যাঞ্চলে উন্নয়ন দ্রুততর হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পুনরুজ্জীবন শুরু হয়েছে। সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবন আরো সমৃদ্ধ হয়েছে।
এ বছর তার হংকং সফরের কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, হংকংয়ের সমৃদ্ধ পরিবর্তন দেখে তিনি গভীর আনন্দিত। দৃঢ়ভাবে ‘এক দেশ, দুই সামাজিক ব্যবস্থা’বাস্তবায়ন করলে হংকং ও ম্যাকাওয়ে অবশ্যই স্থায়ী সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা আসবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সি চিন পিং।
তাইওয়ান প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, দু’তীরের বাসিন্দারা একই পরিবারের সদস্য। তিনি আন্তরিকভাবে আশা করেন, দু’তীরের স্বদেশীরা একসঙ্গে চীনা জাতির স্থায়ী সুখ গড়ে তুলবেন।
এ বছর সংঘটিত ভূমিকম্প, বন্যা, খরা, পাহাড়ে আগুনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কিছু দুর্ঘটনার দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, দুর্যোগে চীনাদের মধ্যে জাতীয় চেতনা বলিষ্ঠ হয় এবং দেশবাসীকে বাঁচানোর জন্য তারা নিজের জীবন বিসর্জন দিতে কুণ্ঠিত হয় না।
বিহঃবিশ্বের সঙ্গে আজকের চীনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথা তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীন বন্ধু ও অংশীদারদের মূল্যায়ন করে এবং দৃঢ়ভাবে ইতিহাসের সঠিক পথে ও মানবসভ্যতার অগ্রগতির দিকে থাকে। মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়নের জন্য চীন বুদ্ধি ও চীনা পরিকল্পনার যোগান দেয় বলে মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট সি।
যখন নতুন বছর আসে, তখনই চীনা জাতির হাজার বছরের উত্তরাধিকারের চেতনা মনে পড়ে জানিয়ে প্রেসিডেন্ট সি বলেন এটি সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেয়।
সব কিছু মিলিয়ে বলা যায়, প্রেসিডেন্ট সির এ শুভেচ্ছা বার্তা গতানুগতিক কোনো শুভেচ্ছা বার্তা নয়। এর মধ্যে দিয়ে তিনি চীনের বর্তমান সাফল্য এবং ভবিষ্যৎ নতুন যাত্রার রূপরেখা তুলে ধরেছেন। এ কারণে প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।