দেহঘড়ি পর্ব-১০২
2022-12-30 18:08:49

দেহঘড়ি পর্ব-১০২

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় নিয়ে আলোচনা ‘ভালো থাকার আছে উপায়’, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং খাদ্যের পুষ্টিগুণ নিয়ে আলোচনা ‘কী খাবো, কী খাবো না’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

একজিমার চিকিৎসায় টিসিএম

একজিমা খুব সাধারণ একটি রোগ। সাধারণত প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়। একজিমার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুসকুড়ি ও ফুলে যাওয়া ত্বক যেখানে প্রবল চুলকানি হয়। এর পার্শ্ব উপসর্গগুলোর মধ্যে থাকে ক্লান্তি, মানসিক চাপ ও অনিদ্রা।

একজিমা কেন হয়?

কেন মানুষের ত্বকে একজিমা হয় সেটা এখনও সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। তবে বংশগত বা পরিবেশগত কারণ এর জন্য দায়ী হতে পারে বলে মনে করা হয়। একটি তত্ত্ব হলো যে, কোনও কোনও অ্যালার্জেন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যার ফলে প্রদাহ হয়। এই প্রদাহই একজিমার অনাকাঙ্ক্ষিত উপসর্গের দিকে নিয়ে যায়।

টিসিএমের দৃষ্টিকোণ থেকে একজিমা

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি বা টিসিএমে মনে করা হয়, ত্বক সরাসরি ফুসফুসের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের ত্বক আমাদের ফুসফুসের সঙ্গে এতটাই অবিচ্ছেদ্য যে টিসিএমে এটিকে প্রায়শই তৃতীয় ফুসফুস হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ত্বকের ছিদ্রগুলোকে ছোট দরজা হিসাবে কল্পনা করা যেতে পারে, যার মাধ্যমে আমাদের অত্যাবশ্যকীয় শক্তি বা ‘ছি’ প্রবাহিত হয়। এসব দরজা অত্যাবশ্যকীয় শক্তিকে আমাদের শরীরের মধ্যে প্রবাহিত করে এবং এবং শরীর থেকে বের করে দিয়ে এটিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এ প্রক্রিয়া বোঝার একটি সহজ উপায় হলো এটা উপলব্ধি করা যে, কীভাবে ঘাম আমাদের ত্বকের ছিদ্র দিয়ে আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে যায় এবং অপ্রয়োজনীয় লবণ বের করে দেওয়ার মাধ্যমে শরীরকে শীতল করে।

একজিমার চিকিৎসায় চাইনিজ মেডিসিন

একজিমার চিকিৎসায় বিস্ময়করভাবে কাজ করে টিসিএম। এর পক্ষে বহু প্রমাণ রয়েছে। টিসিএম একজিমা দূর করতে সাহায্য করে এবং এই রোগ থেকে দীর্ঘস্থায়ী পরিত্রাণ দেয়।

মস্কিবাস্টন হলো একজিমার জন্য একটি চীনা ভেষজ চিকিৎসা। এ চিকিৎসায় ত্বকে ভেষজ প্রয়োগ করা হয়। যখন এ ভেষজ যখন গরম করা হয়, তখন এমন উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে যা শরীরকে শিথিল করে এবং শরীরে পুষ্টি যোগায়। একজিমার জন্য এই চীনা ভেষজ ওষুধটি ত্বকের জ্বালা ও চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মক্সিবাস্টন একজিমা একটি একটি শক্তিশালী চিকিৎসা।

একজিমার জন্য আকুপাংচার আরেকটি খুব সহায়ক চিকিৎসা। এই টিসিএম চিকিৎসা শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ বের করতে খুব কার্যকর। আকুপাংচার চিকিৎসায় ফুসফুসের ভাল কার্যকারিতার জন্য জীবাণুমুক্ত স্টেইনলেস স্টিলের সূঁচ ব্যবহার করা হয়। রোগীর হাত, পা ও পিঠ বরাবর সূঁচ ঢোকানো হয়; তবে ত্বকের চুলকানির জায়গায় সূঁচ ব্যবহার করা হয় না। এ চিকিৎসা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কার্যকর।

একজিমার জন্য চাইনিজ ভেষজ ওষুধ

অ্যানিমারহেনা রাইজোম, যা চীনা ভাষায় চি মু নামে পরিচিত, একজিমার সবচেয়ে কার্যকর চীনা ভেষজগুলোর একটি। এটি শরীরে ভিতরের তাপ দূর করতে সাহায্য করে। এ রোগের চিকিৎসায় চিয়াও ফেং সানও নেওয়া যেতে পারে। এ ভেষজও শরীর থেকে তাপ বের করে দেয়। একজিমার অন্যান্য চীনা ভেষজ চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে তুং ছুই, ষষ্টি মধু ইত্যাদি। - রহমান

 

# আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি নরমাল ডেলিভারি বা অস্ত্রপচার না করে সন্তান প্রসবের জন্য সহায়ক অবকাঠামো বাংলাদেশে আছে কী না তা নিয়ে। সরকারি হিসাব বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে নরমাল ডেলিভারির হার ৬৯ শতাংশ এবং সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনের হার ৩১ শতাংশ। নরমাল ডেলিভারির হার গ্রামাঞ্চলে বেশি শহরের তুলনায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শহরাঞ্চলে সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার বেশি হওয়ার কারণ এক শ্রেণীর হাসপাতাল ও চিকিৎসকের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি। তাদের মতে, অস্ত্রপচার ছাড়াই যেসব মায়ের সন্তান প্রসব সম্ভব, হাসপাতাল ও চিকিৎসকের কারণে তাদেরকেও অনেক সময় সিজারিয়ান সেকশনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন স্ত্রী ও প্রসূতিরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সুমাইয়া আখতার। তিনি কর্মরত ওজিএসবি হাসপাতালে, কনসালট্যান্ট হিসাবে। সাক্ষাৎকার নিয়েছে হাবিবুর রহমান অভি।

 

#কী_খাবো_কী_খাবো_না

যে কারণে আদা খাবেন শীতে

আদায় থাকে জিঞ্জেরল নামের কার্যকরী এক উপাদান যা আপনার শরীরকে উষ্ণ রাখবে সবসময়। দেবে নানা রকম স্বাস্থ্য সুবিধা। এই জিঞ্জেরল মূলত শরীরকে তরতাজা রেখে দূরে রাখে সাধারণ সর্দি-কাশি। তাই  ঠান্ডা এবং কাশির লক্ষণগুলো কমাতে দারুণ কার্যকর প্রকৃতির এই উপহার- আদা। এবং এই কারণেই এই শীতে আদা হতে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর অন্যতম উপাদান।

শীতে বাইরের প্রকৃতিই যে কেবল রূপ পরিবর্তন করে তা কিন্তু নয়। শীতের তীব্রতার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পোশাক, খাবার এবং চারপাশের পৃথিবীও বদলাতে শুরু করে। শীতের খাবারের তালিকায় গাজরের হালুয়া, সর্ষে শাক, খেজুর গুড়ের পিঠা-পায়েস তো থাকেই, সেইসঙ্গে একটি উপাদান আমাদের প্রতিদিনের খাবারে রাখা জরুরি। খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, আমাদের স্যুপ, চা, সবজি, মাংসের কারি সবকিছুতেই বাড়তি স্বাদ ও গন্ধ যোগ করে আদা। শীতকালে সর্দি-কাশি থেকে বাঁচতে খাবারে আদার ব্যবহার করা জরুরি। কারণ এটি আমাদের ঠান্ডাজনিত অসুখ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। জেনে নিন শীতে আদা খাওয়ার উপকারিতা-

কফ দূর করে করে আদা

পুষ্টিবিদদের মতে, বুকে আটকে থাকা কফ পরিষ্কার করার জন্য আদা ভীষণ কার্যকর পরিচিত। যে কারণে এ সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আদা খাওয়ার পরামর্শ দেন তারা।

সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে লড়াই করে আদা

আদায় থাকে প্রচুর ভোলাটাইল অয়েল। এই তেলের আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য। এই উপাদান আদাকে সর্দি-কাশি ও ফ্লু নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই শীতের মৌসুমে খাবারের তালিকায় আদা যোগ করা ভীষণ জরুরি।

আদা রোধ করে প্রদাহ

আদা খেলে তা আমাদের শরীরে প্রদাহের প্রভাব কমাতে কাজ করে। ফলে সংক্রমণের মাত্রা খারাপ হওয়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। এমনকী এটি হজমেও সাহায্য করে। সেইসঙ্গে পেট ফাঁপা, বমি বমি ভাব নিয়ন্ত্রণে কাজ করে আদা।

আদা কিভাবে খেতে পারেন শীতে

শীতের মৌসুমে স্যুপ খুব আরামদায়ক একটি খাবার। বাড়িতে থাই স্যুপ, কর্ন স্যুপ বা যেকোনো ধরনের স্যুপই তৈরি করুন না কেন, তার সঙ্গে আদা যোগ করতে ভুলবেন না। তাতে স্বাদের পাশাপাশি সুস্বাস্থ্যও নিশ্চিত করা সহজ হবে। শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই আমাদের প্রয়োজন পড়ে চায়ের। শীতের সময়ে এটি আরও বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। এই মৌসুমে চায়ের সঙ্গে যোগ করুন আদা। আদা চা খেলে তা আপনাকে সুস্থ রাখতে নানাভাবে কাজ করবে। এছাড়াও আদা দিয়ে অন্যান্য পানীয় তৈরি করে পান করতে পারেন।

অভি/ - অভি/রহমান

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।