চীনের নির্মিত বেশ কয়েকটি রেলপথ বৈশ্বিক যোগাযোগে অবদান রাখছে
2022-12-30 13:45:14

 

গত ১৬ নভেম্বর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম দ্রুত গতির রেলপথ জাকার্তা-বান্দুং দ্রুত গতির রেলপথ পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ১৪২ কিলোমিটার। রেলপথের নির্মাণকাজে অংশগ্রহণকারী আদি বলেন, তিনি আশা করেন, এর নির্মানকাজ তাড়াতাড়ি শেষ হবে এবং সূদূরে প্রসারিত হবে। রেলপথটি ইন্দোনেশীয়দের জন্য কল্যাণ সৃষ্টির পাশাপাশি আরও দ্রুত ও আরামদায়ক অনুভূতি সৃষ্টি করবে।

এক বছর আগে বা ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীন ও লাওসের যৌথ সহযোগিতায় চীন-লাওস রেলপথ চালু হয়েছে। গত এক বছরে ৮৫ লাখেরও বেশি যাত্রী এ রেলপথের সুবিধা ভোগ করেছেন। তাদের ট্রেনে করে বিদেশ ভ্রমণের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। চীন-লাওস রেলপথের কারণে পাহাড় খ্যাত লাওসের পথ এখন আর অসমতল নয়। দেশটিতে রেলপথের দৈর্ঘ্য ৩.৫ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ১০২২ কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। বিখ্যাত পর্যটন সিটি লাং প্রাবাং থেকে রাজধানী ভিয়েনতিয়েন যেতে আগেকার ৮ ঘণ্টা থেকে কমে মাত্র ২ ঘণ্টায় নেমে এসেছে।

থাইল্যান্ডের ব্লগার থাই-লাও থগেজার 

চীন-লাওস রেলপথের উদ্বোধন দেশটি এবং তার প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে চরম উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। লাওসের গায়ক আথিসাক রাটানাভোং-এর প্রযোজনা ও পরিবেশনায় ‘চীন-লাওস রেলপথ থেকে উড্ডয়ন” শীর্ষক গান থাইল্যান্ডেও খুব জনপ্রিয় হয়েছে। থাইল্যান্ডের ব্লগার থাই-লাও থগেজার তার ইউটিউবে এ গান পোস্ট করে বলেন, ‘থাই-লাওস একক পরিবারে থাকার আশা প্রকাশ করি’। এ ভিডিও’র ভিউ ছিল ৯ লাখেরও বেশি। অনেক নেটিজেন বলেছেন,  ট্রেন করে চীন ও লাওসে যেতে পারবেন বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর, চীন-থাইল্যান্ড রেলপথ প্রকল্প থাইল্যান্ডের আয়ুতথায়াতে উদ্বোধন হয়। বর্তমানে সে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প সার্বিকভাবে নির্মাণাধীন রয়েছে। গত ১৯ নভেম্বর চীন ও থাইল্যান্ডের শীর্ষনেতারা ব্যাংককে বৈঠকের সময় একমত হন যে  চীন-লাওস-থাইল্যান্ড তৃপক্ষীয় রেলপথ সহযোগিতা দ্রুততর করা হবে এবং চীন-লাওস-থাইল্যান্ড উন্নয়নের পরিকল্পনা বেগবান করা হবে। তাতে অবকাঠামোসহ নানা যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরদারের বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে।

থাইল্যান্ডের থামাসাট বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব এশিয়া একাডেমীর গবেষক ছিন্তাওয়াত সিরিরাত বলেছেন, ৬০ শতাংশ থাই পর্যটক লাওস ভ্রমণ করতে চায়। তারা লাওসের  ভ্যান ভিয়েং যায় বা বৌদ্ধ প্রার্থণা করতে লুয়াং প্রবাং যায়। চীন-থাইল্যান্ড রেলপথ ও চীন-লাওস রেলপথ সংযুক্ত হলে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। চীন-থাইল্যান্ড রেলপথের কারণে এ অঞ্চলের জনগণের মন আরও সংযুক্ত হবে।

চীন-লাওস রেলপথ চালু’র এক বছরে মালামাল পরিবহনের পরিমাণ ১১২ লাখ টন ছাড়িয়েছে। চীন-থাইল্যান্ড রেলপথ ও চীন-লাওস রেলপথ সংযুক্ত হওয়ার পর থাইল্যান্ডের ডুরিয়ান চীনে বাজারজাত হলে ৬০ শতাংশ খরচ সাশ্রয়ী হবে।

রেলপথের কারণে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। লাওসের কৃষক প্যালি সিপাসার্থ চীন-লাওস রেলপথের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছেন। তিনি একজন সাধারণ শ্রমিক থেকে ঢালাইকারীতে পরিণত হয়েছেন। তিনি তার জীবনের প্রথম স্মার্ট মোবাইল কিনেছেন এবং ৪জন সন্তানের জন্য আরও সুন্দর ভবিষ্যত সৃষ্টি করেছেন। চীন-লাওস রেলপথে তার মতো ১ লাখ লাওস মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা-বান্দুং রেলপথ বরাবর অঞ্চলের মেয়ে লিন্দা কুরনিয়াসির আইসক্রিম জনপ্রিয় হয়েছে। যার ফলে তার পরিবারের জীবনের মান অনেক উন্নত হয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে দক্ষিণ এশিয়া, এশিয়া থেকে আফ্রিকা, ইউরোপ থেকে ল্যাতিন আমেরিকা পর্যন্ত জাকার্তা-বান্দুং রেলপথ, চীন-লাওস রেলপথ এবং চীন-ইউরোপ রেলপথসহ ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতাভুক্ত নানা প্রকল্পের মাধ্যমে অধিকতর পণ্য চীনের বাজারে প্রবেশ করেছে। আরও বেশি কাঠামো, আর্থ-বাণিজ্য, পর্যটন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও চিকিত্সাসহ নানা সহযোগিতার প্রকল্প শুরু হয়েছে। তাতে প্রকল্পগুলো বরাবর দেশগুলোর নাগরিকগণ উপকৃত হচ্ছেন।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে আরও উন্মুক্ত হবে চীন। তা বিশ্বমুখী বার্তা প্রদান করেছে যে  চীন সরকার সহযোগিতা ও যোগাযোগ জোরদারের মাধ্যমে বিশ্বকে আরও শান্তি ও সমৃদ্ধি উপহার দেবে।

(রুবি/এনাম)