ডিসেম্বর ২৯: চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে প্রকাশিত এক ঘোষণায় নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের নীতির গুরুত্বপূর্ণ বিন্যাস করেছে। ঘোষণা অনুযায়ী, ‘নভেল করোনা ভাইরাস নিউমোনিয়া’র নাম পরিবর্তন করে ‘নভেল করোন ভাইরাস সংক্রমণ’ এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণকে ‘বি’ শ্রেণীর রোগ হিসেবে গণ্য করা হয়। ‘বি’ শ্রেণীতে নামিয়ে আনার পর কীভাবে ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে? এরপর চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের মহামারি প্রতিরোধ বিভাগ ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণকে ‘বি’ শ্রেণীতে গণ্য করার সামষ্টিক পরিকল্পনা এবং এর সঙ্গে জড়িত ৫টি দলিল প্রকাশ করেছে। তাতে মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কাজ পুনর্বন্টন করা হয়। এখন থেকে চীনে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
বর্তমানে নভেল ভাইরাসটির মিউটেশনের সাধারণ দিক হলো কম প্যাথোজেনিক, উপরের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের প্রবণতা এবং স্বল্প ইনকিউবেশন পিরিয়ড। ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য, মহামারী পরিস্থিতি, টিকাদান, চিকিৎসা সম্পদ ও প্রস্তুতি এবং প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতাসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে চীন নভেল করোনভাইরাস সংক্রমণকে ‘বি’ শ্রেণীতে চিহ্নিত করেছে, যা বাস্তব শৃঙ্খলার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, স্বাভাবিক উৎপাদন ও জীবন এবং চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের চাহিদা নিশ্চিত করতে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে সক্ষম।
মহামারির শুরুতে এক অজানা ভাইরাসের মুখোমুখি হয়ে ‘এ’ শ্রেণী হিসেবে এর প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সর্বাধিক মাত্রায় জনগণের স্বাস্থ্যকে রক্ষা করেছে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে তিনবছরব্যাপী লড়াই করার পর ‘বি’ শ্রেণীতে সুবিন্যাস্ত করা মানেই আমাদের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের চিন্তা ধারা ও পরিচালনা ব্যবস্থা সার্বিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কল্পনা করা যায় যে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ করার শুরুতে সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ার কারণে কিছু এলাকায় ওষুধের অপর্যাপ্ত সরবরাহ এবং চিকিৎসা সম্পদের ঘাটতি থাকতে পারে।
চিকিত্সা সম্পদ নিশ্চিত করা,গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যু হ্রাস করা, মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নে সমন্বয় করার নতুন চ্যালেঞ্জ ও কর্তব্যের সামনে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন বিভাগ সক্রিয় রয়েছে।
বর্তমানে মহামারি প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ কাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘স্বাস্থ্য রক্ষা করা এবং গুরুতর রোগের প্রতিরোধ করা’। সব সময়ই জনগণ এবং জীবনকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত্। আগের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ ভালোভাবে করা উচিত্, বিশেষ করে চিকিত্সা সম্পদে বরাদ্দ বাড়ানো, সংশ্লিষ্ট ওষুধের অ্যাক্সেসযোগ্যতা উন্নত করা এবং রোগের নির্ণয় ও চিকিত্সার ওপর গুরুত্বারোপ করা উচিত্। যেমন,শাংহাই শহরের সকল কমিউনিটি’র স্বাস্থ্য পরিবেষেবা কেন্দ্র ও শাখা কেন্দ্রের জ্বর বিভাগ সপ্তাহের ৭ দিন খোলা থাকে। জনগণকে সুবিধাজনক সেবা প্রদান করতে নানচিং শহরে ১৬টি ভ্রাম্যমান চিকিত্সা যানবাহন চলছে।
অন্যদিকে, গুরুতর অসুস্থতার প্রতিরোধ ও চিকিত্সা করা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং ইনপেশেন্ট ওয়ার্ড ভর্তির মধ্যে ‘সবুজ চ্যানেল’ সুষ্ঠু করে তোলা উচিত্। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য যারা জরুরি বিভাগে পর্যবেক্ষণে রয়েছে, তাদের অবশ্যই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইনপেশেন্ট ওয়ার্ডে ভর্তি করতে হবে। বেইজিং ইতোমধ্যে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রক্তের অক্সিজেন ক্লিপ বিতরণ করা শুরু করেছে।
তা ছাড়া, গ্রামীণ এলাকায় মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সম্পদ তুলনামূলকভাবে অপর্যাপ্ত। গ্রামীণ অঞ্চলে ওষুধ পৌঁছে দিতে এবং গ্রামীণ ক্লিনিকগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিত্সার ক্ষমতাসম্পন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো যেতে পারে।
লোকজনের জন্য নিউক্লিক অ্যাসিড পরীক্ষা আর করা হবে না। চীনে প্রবেশের পর নিউক্লিক অ্যাসিড পরীক্ষা এবং কেন্দ্রীভূত কোয়ারেন্টিন বাতিল, চীনা নাগরিকদের জন্য বহির্গামী ভ্রমণ সুশৃঙ্খলভাবে পুনরায় শুরু সংক্রান্ত নতুন ব্যবস্থা জারি করার পর জনগণের চাকরি, জীবন, লেখাপড়া ও যাতায়াতে নতুন পরিবর্তন আসবে।
বর্তমানে নভেল করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে এবং ভাইরাসের রূপান্তরে অনেক অনিশ্চিয়তা রয়েছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে মনে রাখা উচিত্ যে, প্রত্যেককেই নিজের স্বাস্থ্যের জন্য দায়িত্বশীল হতে হবে। মাস্ক পরা এবং ঘন ঘন হাত ধোয়াসহ ভাল অভ্যাসগুলো মেনে চলা, সময়মত টিকাদান ও বর্ধিত টিকাদান সম্পন্ন করা এবং নিজের ও আশেপাশের মানুষের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা রক্ষা করা উচিত্। লিলি/এনাম/রুবি