বিজ্ঞান ও বাস্তবতার আলোকে মহামারি প্রতিরোধ করছে চীন: সিএমজি সম্পাদকীয়
2022-12-28 14:07:32

ডিসেম্বর ২৮: গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে প্রকাশিত এক ঘোষণায় ‘নভেল করোনা ভাইরাস নিউমোনিয়া’র নাম পরিবর্তন করে ‘নভেল করোন ভাইরাস সংক্রমণ’ করেছে চীন।  গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণকে ‘বি’ শ্রেণীর রোগ হিসেবে গণ্য করার কথা ঘোষণা করেছে চীন।

তখন থেকে নভেল করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে নেয়া ও ঘনিষ্ঠ পরিচিতি নির্ধারণ করা যাবে না। উচ্চ এবং নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাও আর চিহ্নিত করা যাবে না এবং প্রবেশকারী কর্মী ও পণ্যের জন্য সংক্রামক রোগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবেনা।

এটি চীনের মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশলের অপ্টিমাইজেশন এবং সমন্বয়। এটি ভাইরাসের পরিবর্তন, মহামারীর পরিস্থিতি এবং এর প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা ব্যাপক মূল্যায়নের পর বৈজ্ঞানিকভাবে এবং বাস্তবতার ভিত্তিতে চীনের নেয়া নতুন পদক্ষেপ।

জনগণ এবং জীবনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি অনুসরণ করে থাকে চীন। বিগত তিন বছরে চীন ধারাবাহিকভাবে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির নয়টি সংস্করণ এবং রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা কর্মসূচি সফলভাবে তৈরি করেছে, যাতে সাফল্যের সঙ্গে তুলনামূলক শক্তিশালী প্যাথোজেনিক মূল স্ট্রেন এবং ডেল্টা রূপের ব্যাপক প্রচলন এড়ানো যায় এবং গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুকে ব্যাপকভাবে কমানো যায়। তা ছাড়া, টিকা ও ওষুধের গবেষণা ও উন্নয়ন এবং চিকিত্সাসহ নানা সম্পদ প্রস্তুত করার মূল্যবান সময় পেয়েছে। চীনে মহামারী এবং মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্বের সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের সমন্বয়ে উল্লেখযোগ্য ফলাফল অর্জিত হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা সাধারণত মনে করেন যে, ওমিক্রন মিউট্যান্ট স্ট্রেনের প্যাথোজেনিসিটি দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং খুব অল্প সংখ্যক রোগীর নিউমোনিয়া সমস্যা দেখা দেয়। তাই চীন ‘করোনা ভাইরাস নিউমোনিয়ার’ নাম পরিবর্তন করে ‘নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ’ করেছে, যা এই রোগের বর্তমান বৈশিষ্ট্য এবং বিপদের সাথে আরও বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। নভেল করোনা ভাইরাসকে বি-ক্যাটাগরির সংক্রামক হিসেবে গণ্য করা বর্তমান মহামারী প্রতিরোধ পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এতে বাস্তবতা এবং বিজ্ঞান থেকে সমাধানের পদ্ধতি খোঁজার মহামারী প্রতিরোধের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, নভেল করোনা ভাইরাসকে বি-ক্যাটাগরির সংক্রামক হিসেবে সুবিন্যাস্ত করা মানেই আর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না,বরং আমাদের কাজের কেন্দ্রীয় অংশ সংক্রমণের প্রতিরোধ থেকে ‘গুরুতর রোগের প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য রক্ষার’ দিকে স্থানান্তর করা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে মহামারীর প্রভাব কমিয়ে আনা।

 

চীনের সর্বশেষ প্রকাশিত নীতিমালায় বি-ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়ার পর ১২টি মোকাবেলা ব্যবস্থা অন্তর্ভূক্ত হয়। সেগুলোর মধ্যে দেশি-বিদেশি জনগণের যাতায়াত সংক্রান্ত নীতির সুবিন্যাস বিদেশি গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যেমন, বাইরে থেকে আগত যাত্রীদের চীনে প্রবেশের সময় কেবল ৪৮ ঘণ্টা মেয়াদের নিউক্লিক অ্যাসিড পরীক্ষার নেতিবাচক ফলাফল প্রদর্শন, চীনে প্রবেশের পরে নিউক্লিক অ্যাসিড পরীক্ষা ও কেন্দ্রীয় কোয়ারেন্টিন বাতিল ইত্যাদি। কাজ ও উৎপাদন পুনরুদ্ধার, ব্যবসা, অধ্যয়ন, পারিবারিক পরিদর্শন ও পুনর্মিলনসহ বিদেশীদের চীনে আসার ব্যবস্থার সুবিন্যাস করে সংশ্লিষ্ট ভিসা সুবিধা প্রদান করবে চীন। পর্যায়ক্রমে নৌ ও স্থলবন্দরে যাত্রীদের প্রবেশ ও প্রস্থান পুনরুদ্ধার করা হবে। আন্তর্জাতিক মহামারী পরিস্থিতি ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরিষেবা নিশ্চয়তা ক্ষমতা অনুসারে, চীনা নাগরিকদের বাইরে ভ্রমণ পুনরুদ্ধার করা হবে। এসব ব্যবস্থা দেশি-বিদেশী বিনিময়কে আরও সুবিধাজনক, নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং দক্ষ করে তুলবে এবং মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে আরও ভাল সমন্বয় করতে সহায়তা করবে।

এটা আশা করা যায় যে, চীনের অপ্টিমাইজ করা মহামারী প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলোর ক্রমাগত বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মহামারী প্রতিরোধ কৌশলের সামঞ্জস্য এবং পরিবর্তনের সময় মসৃণভাবে অতিক্রম করার শর্ত এবং ক্ষমতা চীনের রয়েছে। চীন মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকে সর্বাধিক পরিমাণে রক্ষা করে যাবে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করে যাবে। মন্থর বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এটি স্পষ্টতই সুসংবাদ বলে মনে করে সিএমজি সম্পাদকীয়।

 

লিলি/এনাম/রুবি