ডিসেম্বর ২৬: ৯ বছর আগে চীন ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ প্রস্তাব করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। এ উদ্যোগের আওতায় ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গপথ বা টানেল, ক্রোয়েশিয়ায় পেলজেসাক সেতু, পাকিস্তানের করোট জলবিদ্যুৎকেন্দ্র, মিসরের নতুন প্রসাশনিক রাজধানী কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক এলাকাসহ ধারাবাহিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এসব প্রকল্প স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নে অবদান রেখেছে।
নয় বছর ধরে ১৪৯টি দেশ ও ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা চীনের সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় ২ শতাধিক সহযোগিতাচুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এতে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ দেশ এবং এক-তৃতীয়াংশ আন্তর্জাতিক সংস্থা অন্তর্ভুক্ত আছে। গত অগাষ্ট পর্যন্ত চীন-ইউরোপ রেলপথে ট্রেন চলেছে ৬০ হাজারটির বেশি এবং এই পথে পণ্য পরিবাহিত হয়েছে প্রায় ৩০০ বিলিয়ান মার্কিন ডলার মূল্যের। রেলপথে ৮২টি লাইন চালু হয়েছে। ইউরোপের ২৪টি দেশের ২০০টি শহর রেলপথের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েছে।
গত জুন মাস পর্যন্ত ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চীনের পণ্যবাণিজ্য হয়েছে মোট ১২ ট্রিলিয়ান মার্কিন ডলারের। চীন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে ব্যাংকিং খাত ছাড়া বিনিয়োগ করেছে ১৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশের কর্ণফুলী নদীর সুড়ঙ্গপথের মোট দৈর্ঘ্য ৯.৩ কিলোমিটার। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় নির্মিত প্রথম নদীর নিচের সুড়ঙ্গ এবং চীনা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশে নির্মিত প্রথম বড় ব্যাসের আন্ডার ওয়াটার শিল্ড সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গটি নির্মাণের পর ব্যাপকভাবে চট্টগ্রামের পরিবহনব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছে এবং স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। এ ছাড়া, এটি এশিয়ার সড়ক নেট উন্নয়ন ও বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশীদের যোগাযোগ ত্বরান্বিত করবে।
মিসরের নতুন প্রশাসনিক রাজধানী কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক এলাকা নির্মাণ প্রকল্প বর্তমান রাজধানী কায়রো’র ৫০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। প্রকল্পের আয়তন প্রায় ৫.০৫ লাখ বর্গমিটার। প্রকল্পের আওতায় ২০টি উচ্চ ভবন নির্মিত হবে। এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক এলাকায় ২০টি ভবনের প্রধান কাঠামোর পরিকল্পনা সম্পন্ন হয়েছে।
হাঙ্গেরি-সার্বিয়া রেলপথ পুনর্গঠন প্রকল্প চীন ও মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার একটি যুগান্তকারী প্রকল্প এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যের সাথে চীনা রেলপথ প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের আন্তঃসংযোগস্বরূপ। হাঙ্গেরি-সার্বিয়া রেলপথ মোট ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই রেলপথে ট্রেনের গতি ২০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। রেলপথটি গত ১৯ মার্চ চালু হয়েছে।
মোম্বাসা-নাইরোবি রেলপথ চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের জোহানেসবার্গ সামিটে নির্ধারিত ‘দশ সহযোগিতা পরিকল্পনা’-র একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। রেলপথটি পূর্ব আফ্রিকার বৃহত্তম বন্দর মোম্বাসা ও কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিকে সংযুক্ত করেছে। রেলপথটি মোট ৪৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ পর্যন্ত রেলপথটি যাত্রী পরিবহন করেছে ৮ কোটি ৭৮ লাখ এবং পণ্য পরিবহন করেছে ২.২৬৯ কোটি টন।
২০১৪ সালের জুলাই মাসে চীন আর্জেন্টিনার সঙ্গে ‘কিস’ জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করে। এটি হলো আর্জেন্টিনার ইতিহাসের বৃহত্তম জলবিদ্যুত্ কেন্দ্র প্রকল্প। জলবিদ্যুত্ কেন্দ্রটির বার্ষিক বিদ্যুত্ উত্পাদনক্ষমতা ৪.৯৫ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘন্টা। অনুমান অনুযায়ী, এটি ১৫ লাখ পরিবারের দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে এবং প্রতি বছর আর্জেন্টিনার ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তেল ও গ্যাসের খরচ সাশ্রয় করবে।
বন্ধুরা, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের সঙ্গে সংযুক্ত দেশের সংখ্যা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ উদ্যোগের আওতায় সহযোগিতার মান দিন দিন উন্নত হচ্ছে এবং উন্নয়নের সম্ভাবনাও উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উগ্যোগ একটি জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। এ উদ্যোগের আওতায় ইতোমধ্যেই অসংখ্য সেতু, বন্দর ও সড়ক সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় নির্মিত হয়েছে। স্থানীয় নাগরিকদের জীবনমান এতে উন্নত হয়েছে ও হচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ উন্নয়নের প্রতীক। (ছাই/আলিম)