জাতিসংঘের ‘সেরা পর্যটন গ্রাম’ দাজাই
2022-12-26 12:52:09

গত ২০ ডিসেম্বর বেইজিং সময় সন্ধ্যায় জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২২ সালের “সেরা পর্যটন গ্রামের” তালিকা প্রকাশ করেছে। চীনের  কুয়াংসি চুয়াং জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কুইলিন শহরের লোংচি থানার দাজাই গ্রাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় গ্রামবাসীরা “লাঙ্গল বহন করে ক্ষেত চাষ করা, লোকগান গেয়ে পর্যটন উন্নয়ন করা”সব্যসাচী কৃষকে পরিণত হন।

 

দাজাই গ্রাম লোংচি সিড়ির ধাপের মত থাককাটা মাঠ দর্শনীয় স্থানের কেন্দ্রে অবস্থিত। লোংচি থাককাটা মাঠের নির্মাণ ইউয়ান রাজবংশের সময় শুরু হয়েছিল এবং এর ৬৫০ বছরের বেশি পুরনো ইতিহাস আছে। তাই এটি “বিশ্ব গুরুত্বপূর্ণ কৃষি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার তালিকায়” অন্তর্ভুক্ত হয়।

 

দাজাই গ্রামের উঁচু জায়গা থেকে দেখতে গ্রামটিকে অনেক সুন্দর লাগে। থাককাটা মাঠের মধ্যে পাহাড় বরাবরে নির্মিত ইয়াও জাতির স্টাইলের ঐতিহ্যবাহী বসতবাড়ি, একটি সরু পাথরের রাস্তা থাককাটা মাঠ ও গ্রামকে সংযুক্ত করেছে। কৃষি পরিবার থাককাটা মাঠে কাজ করে।

 

পর্যটন উন্নয়নের আগে পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত হবার কারণে দাজাই গ্রামবাসীরা চরম দরিদ্র ছিল। অর্ধেক লোহার প্যান অর্ধেক ঘর, অর্ধেক বিছানা অর্ধেক বাসা ছিল তখনকার গ্রামবাসীদের দরিদ্র জীবনের বাস্তবতা।

 

প্রায় ৬০ বছর বয়সী গ্রামবাসী পান কুয়াংইং স্মরণ করেন যে তার ছোটবেলায় অনেক গ্রামবাসী ক্ষুধা মেটানোর জন্য শস্য ধার করত। শুধু নতুন বছর আসার সময় মাংস খেতে পারত। লোংশেং জেলায় যেতে তাদেরকে শুধু দু’টো পায়ের উপর নির্ভর করতে হতো। যাওয়ার সময় সূর্য উঠতো না, কিন্তু ফিরে আসার সময় রাত হয়ে যেতো। পান কুয়াংইং বলেন, দশ-বারো বছরবয়সে তিনি প্রথমবারের মতো দাজাই গ্রাম থেকে লোংশেং জেলায় গেছেন।

 

২০০৩ সালে দাজাই গ্রামে রাজপথ নির্মিত হয়। চিনখেং দাজাই ইয়াও জাতির থাককাটা মাঠ দর্শনীয় স্থান আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয়। কৃষি টেরেস ও হোংইয়াও বসতবাড়িসহ বৈশিষ্ট্যময় দৃশ্য বহু দেশি-বিদেশিদের আকর্ষণ করছে।

 

“পর্যটন উন্নয়ন করার পর গ্রামবাসীদের জীবনযাপন পৃথিবী কাঁপানো পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে প্রত্যেক গ্রামীণ পরিবার “পর্যটন ভাত” খাচ্ছে। সারা গ্রামে ২৩০টির বেশি অতিথিশালা ও খামারবাড়ি আছে।” দাজাই গ্রামের কর্মী ইয়ু ছিয়োংথোং বলেন, দাজাই গ্রাম পর্যটন উন্নয়নের আগে বাসিন্দাদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৭শ ইউয়ান ছিল। আর ২০১৯ সালে মাথাপিছু বার্ষিক আয়  ৩৪ হাজার ইউয়ান হয়।

 

পর্যটন শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে দাজাই গ্রাম পর্যটন শিল্প পুনরুজ্জীবনের পথে চলে আসছে। আগে বাইরে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজ করা গ্রামবাসীরা এখন জন্মস্থানে ফিরে দর্শনীয় স্থানে কৃষি হোটেল ব্যবস্থাপনা, হস্তশিল্পজাত দ্রব্য বিক্রি বা লোকগান ও নৃত্য পরিবেশন করছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে দাজাই গ্রাম ৬ লক্ষাধিক পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানিয়ে আয় করেছে মোট ৫২.৮ কোটি ইউয়ান।

 

“আমাদের কোম্পানি দাজাই গ্রামের সঙ্গে পর্যটন চুক্তি স্বাক্ষর করে। গ্রামবাসীরা ধান চাষ এবং টেরেস দৃশ্য বহাল রাখার দায়িত্ব পালন করে। কোম্পানি প্রতি বছর টিকিট বিক্রির আয়ের কিছু অংশ গ্রামকে দেয়।” কুইলিন লোংচি পর্যটন কোম্পানির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার লি ছিয়ান বলেন, কোম্পানিটি দর্শনীয় স্থানের অবকাঠামো নির্মাণ, ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে। কৃষি পরিবার ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে টেরেস বহাল রাখে ও চাষ করে। ফলে তারা টেরেস বহাল রাখার ফী, চাষ ভর্তুকি ও লভ্যাংশ অর্জন করতে পারে।

 

জানা গেছে, কোভিড মহামারীর আগে ২০১৯ সালে দাজাই গ্রাম টেরেসের শেয়ারহোল্ডার হওয়া, পর্যটন টিকিট ও পর্যটন রজ্জুপথ আয়ের মাধ্যমে ৭২ লাখ ইউয়ান লাভ করেছে।

 

আগের “খালি গ্রাম”বর্তমানে স্থায়ী বিখ্যাত “পর্যটন সমৃদ্ধ গ্রামে” পরিণত হয়েছে। গ্রামটি পরপর “চীনের ক্লাসিক গ্রামীণ ল্যান্ডস্কেপ” ও “জাতীয় ইকো-গ্রাম”সহ বিভিন্ন সুনাম অর্জন করেছে। গ্রামের দারিদ্র্য হ্রাস অভিজ্ঞতা বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালে দাজাই গ্রামের প্রতিনিধি লাওসে গিয়ে “মৈত্রী গ্রামে” বিনিময় ও সফর করে পর্যটন দারিদ্র্য বিমোচন সহযোগিতা করেছে। (প্রেমা/এনাম)