চীনের উন্মুক্তকরণে ও উন্নয়নের সুযোগ ভাগ করে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রেসিডেন্ট সি
2022-12-25 19:38:58


২০২২ সালে, বিশ্ব যখন মহামারী, সরবরাহ-চেইনে বিঘ্ন, আঞ্চলিক সংঘাত এবং সংরক্ষণবাদের সমস্যায় জর্জরিত, তখন সি চিনপিংয়ের নেতৃত্বে চীন বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা ও উন্মুক্ত অর্থনীতির দৃঢ় প্রবক্তা হিসেবে অটল থেকেছে।

গত এক বছরে, চীনের প্রেসিডেন্ট উচ্চ-মানের উন্মুক্তকরণ এবং এর উল্লেখযোগ্য উন্নয়নকে বিশ্বের সাথে ভাগ করে নিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

অক্টোবরের শেষের দিকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) ২০তম কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর সাংবাদিকদের সাথে দেখা করার সময় তিনি বিশ্ববাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, চীন তার দরজা আরও বিস্তৃত করে খুলবে।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীন সংস্কার এবং উন্মুক্তকরণকে গভীরতর করতে উচ্চমানের উন্নয়ন অনুসরণে অবিচল থাকবে চীন। একটি সমৃদ্ধ চীন বিশ্বের জন্য আরও অনেক সুযোগ তৈরি করবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। 

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত চীনের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্ম সম্মেলনে, বৃহত্তর প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিদেশী পুঁজিকে আকৃষ্ট করা এবং ব্যবহার করাকে দেশের অর্থনৈতিক এজেন্ডার অগ্রাধিকারের একটি হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।


এ বছর বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে, প্রেসিডেন্ট সি চীনের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজারের কথা বলেছেন, যেটিকে তিনি ‘বিশ্বের জন্য বিশাল সুযোগে’ পরিণত করতে চান।

এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (APEC) সিইও সামিটে এমন মনোভাব প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট সি। বলেন, চীনের লক্ষ্য হল আগামী ১৫ বছরে মধ্যম আয়ের জনসংখ্যা ৮০০ মিলিয়নের বেশি করা এবং সুপার-সাইজ মার্কেটের টেকসই বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা। 

চীনের বিশাল বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রমাণ হিসাবে, এ বছরের প্রথম ১১ মাসে, বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা সত্ত্বেও চীনের মূল ভূখণ্ডে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ১২.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

নভেম্বরে, সাংহাইতে প্রেসিডেন্ট সি’র পরিকল্পিত পঞ্চম চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপোতে এক বছরের পণ্য ও পরিষেবা ক্রয়ের জন্য মোট ৭৩.৫২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের চুক্তি হয়।

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য, নিয়ম, প্রবিধান, ব্যবস্থাপনা এবং মানগুলির উপর ভিত্তি করে প্রাতিষ্ঠানিক উন্মুক্তকরণ ক্রমাগতভাবে প্রসারিত করার জন্য চীনের প্রচেষ্টা থেকেও নতুন সুযোগ আসছে।

অক্টোবরে, জ্যেষ্ঠ চীনা আইনপ্রণেতারা ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের একটি স্থায়ী কমিটির অধিবেশনে বিদেশী বিনিয়োগ আইন প্রয়োগের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করতে মিলিত হন, যা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বৈধ অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য ১ জানুয়ারি ২০২০ থেকে কার্যকর হয়েছিল। .

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আইনটি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। এই বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ, চীনে নিবন্ধিত বিদেশী বিনিয়োগকারী উদ্যোগের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৫৫ হাজারে পৌঁছেছে।  

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সমীক্ষা এবং চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (www.gov.cn) ৩ হাজার ১৩০টি বিদেশী ফার্মে দেখা গেছে যে বিদেশী বিনিয়োগ আইনের প্রয়োগ প্রায় ৯০ শতাংশ উত্তরদাতাদের মধ্যে চীনা বাজারে প্রত্যাশা ও আস্থা বাড়িয়েছে।

অক্টোবরে সিপিসির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের একটি প্রতিবেদনে, প্রেসিডেন্ট সি আইন অনুযায়ী বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষা করার এবং একটি বিশ্বমানের ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যা বাজার-ভিত্তিক, আইন-ভিত্তিক এবং আন্তর্জাতিক মানের।

২০২২ সালের প্রথম দিনে, চীন সহ ১৫টি এশিয়া-প্যাসিফিক দেশের স্বাক্ষরিত আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব (RCEP) চুক্তি কার্যকর হয়েছে, যা বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্য ব্লক তৈরি করেছে।

চীনের উন্মুক্তকরণের একটি মাইলফলক, বাণিজ্য চুক্তিটি২০২২ সালের মতো একটি কঠিন বছরে আঞ্চলিক বাণিজ্যের জন্য একটি মূল সহায়তা হিসেবে কাজ করেছে। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত, চীন এবং অন্যান্য ১৪টি আরসিই পি (RCEP) সদস্যদের মধ্যে বাণিজ্য ৮.৩২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১.১৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে ), যা চীনের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ৩০.৫ শতাংশ।

আগস্টের শেষের দিকে, বেল্ট অ্যান্ড রোডের দেশগুলোর সাথে চীনের পণ্যের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

এরই মধ্যে, চীন সক্রিয়ভাবে ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্বের জন্য ব্যাপক এবং প্রগতিশীল চুক্তি এবং ডিজিটাল অর্থনীতি অংশীদারিত্ব চুক্তির মতো উচ্চ-মানের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তিতে যোগ দিতে চাইছে।

চীন সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতা চর্চা করতে, উন্মুক্ততার জন্য আরও ঐকমত্য তৈরি করতে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মুখোমুখি হওয়া অসুবিধা ও চ্যালেঞ্জগুলি যৌথভাবে কাটিয়ে উঠতে এবং উন্মুক্ততার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি বিশ্ব উন্নয়নের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনা নিয়ে আসবে তা নিশ্চিত করতে সব দেশের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত। 

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।