ডিসেম্বর ২৩: কোভিড-১৯ মহামারী এখনো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে রুশ-ইউক্রেন সংঘর্ষও চলছে। যুদ্ধ ও সংঘাত মানুষকে সীমাহীন যন্ত্রণার মধ্যে ফেলেছে এবং সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ঘড়িকেও ধীর করে দিয়েছে।
আমরা জানি, রাশিয়া ও ইউক্রেন খাদ্যশস্য উত্পাদক ও রপ্তানিকারক দেশ। দু’দেশের সংঘর্ষ শুরুর পর বিশ্বে খাদ্যশস্যের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়াও, মহামারী ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে এ বছর ২০০৮ সালের পর সবচেয়ে গুরুতর বৈশ্বিক খাদ্যসংকট দেখা যাচ্ছে। ৩৪.৫ কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির সম্মুখীন। সংঘর্ষ এখনো ঘটছে, খাদ্যশস্যের সংকটও বাড়ছে।
এদিকে বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসম্পদের সংকটও তীব্রতর হচ্ছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে সংযুক্ত ‘নর্ড স্ট্রিম ওয়ান’ (Nord Stream 1) ও ‘নর্ড স্ট্রিম টু’ প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন পৃথক পৃথকভাবে বিস্ফোরিত হয়। কারা এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতা? গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন অনুমান করছে। তবে ফলাফল স্পষ্ট। ইউরোপীয়রা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ শীতের মুখোমুখী হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাবে কোন কোন ইউরোপীয় দেশে বিদ্যুতের দাম ১০ গুণ বেড়েছে। জ্বালানিসম্পদের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি উত্পাদন-ব্যয়ও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কমেছে। সম্প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকখো বলেছেন, ইউরোপের সচ্ছলতার যুগ শেষ।
এ ক্রমবর্ধমান সংকটের মুখে আমাদের কী করতে হবে? অবশ্যই ইস্যুগুলোর মূল সমস্যা সমাধান করতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এভাবে করে না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্টোনি ব্লিকেন বলেন, এ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট জন বাইডেন সরকার ইউক্রেনকে ২১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো অসংখ্য অস্ত্র রুশ-ইউক্রেন সংঘর্ষে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি দু’দেশের সংঘর্ষকে তীব্রতর করেছে। এদিকে মার্কিন ব্যাপারীরা প্রচুর মুনাফা অর্জন করেছে।
এদিকে গত অগাষ্টে মার্কিন রাজনীতিবিদ ন্যান্সি পেলোসি দেশী-বিদেশী বিরোধিতা বিবেচনা না করে, চীনের তাইওয়ানে তথাকথিত সফর করেছেন। তিনি পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চান। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার তথাকথিত জোট ‘আউকুস’ (AUKUS) পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন পূর্ব এশিয়ার শান্ত সমুদ্রে আনতে চায়। নিজের উচ্চ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’র সুবিধা বজায় রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ‘চিপ আইন’ করেছে, যার লক্ষ্য চীন। এমনকি, দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ও অন্যান্য বিশ্ব চিপ নির্মাতাদের তাদের চিপ ব্যবসার মূল ডেটা হস্তান্তর করতে বাধ্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু চীন ও বিশ্বের অধিকাংশ শান্তিপ্রিয় দেশ সহযোগিতা ও অভিন্ন কল্যাণের পথ বাছাই করেছে। গত পয়লা জানুয়ারি আরসিআপি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। এটি হলো বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল। আসিয়ানের দশটি সদস্যদেশ, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে এর ফলে বাণিজ্য আরও বাড়বে। চীন জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অবাধ বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। জাপানের গাড়ীর যন্ত্রাংশসহ বেশিরভাগ শিল্পপণ্য অচিরেই চীনে শূন্যশুল্ক সুবিধা পাবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফল ও সিফুড একদিনের মধ্যে চীনের মূল ভূভাগের নাগরিকদের কাছে এখন পৌঁছে যায়।
বস্তুত, উন্মুক্তকরণ, সহযোগিতা ও ইনক্লুসিভনেস হলো নতুন যুগের অপরিবর্তিত প্রবণতা। মানবজাতির ভাগ্যের অভিন্ন কমিউনিটি হলো গোটা বিশ্বের অভিন্ন আকাঙ্খা। (ছাই/আলিম)