একটি মহান প্রস্তাবের জন্মের সাক্ষী দুটি রাষ্ট্রীয় উপহার
2022-12-23 16:32:19


 

চীনের কেন্দ্রীয় উপহার ও পুরাকীর্তি প্রশাসন কেন্দ্রে  কাজাখস্তানের একটি জাতীয় পোশাক এবং  ইন্দোনেশিয়ার একটি নাচের ভাস্কর্য একই প্রদর্শনী ক্যাবিনে প্রদর্শিত হচ্ছে। এ দুটি রাষ্ট্রীয় উপহার হাজার হাজার মাইল দূরের দুটি দেশ থেকে এসেছে। তবে, একটি মহান উদ্যোগের কারণে তাদের নাম ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছে। 

২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কাজাখস্তানের নাজারবায়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলায়তনে ৩০০ প্রতিনিধির উদ্দেশে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, “আমরা উদ্ভাবনশীল সহযোগিতার পদ্ধতিতে সিল্ক রোডের অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা করতে পারি”।

 

কাজাখস্তানের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নাজারবায়েভ তাত্ক্ষণিক জবাব দিয়ে বলেন, “চীনের জন্য ভালো হলে কাজাখস্তানের জন্যও তা ভালো হবে। চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্রুত গতির গাড়িতে করে চীনের সঙ্গে নিজস্ব উন্নয়নের পাশাপাশি অভিন্ন উন্নয়ন চায় কাজাখস্তান।”

তখন থেকে কাজাখস্তান একটি নতুন পরিচয়পত্র পায়। আর তা হলো ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের জন্মস্থান। সেবারের সফরে সি চিন পিং কাজাখস্তানের একটি জাতীয় পোশাক উপহার পেয়েছিলেন। কাজাখস্তানে জাতীয় পোশাক উপহার দেওয়া হলো সর্বোচ্চ মর্যাদাদান। যার মানে উপহার গ্রহীতা হলেন তাদের পরিবারের মতো আপন। সি চিন পিং’র পাওয়া সে পোশাকের কলারে ও তার উভয় পাশে চমৎকার সোনার সূচিকর্ম রয়েছে, যা কাজাখ জনগণের অনন্য শৈল্পিক আকর্ষণকে প্রকাশ করে। তাতে দু’দেশের যৌথভাবে উন্নয়ন সাধনের “পোশাকের বন্ধুত্ব” দেখা যায়। চীনে “পোশাকের বন্ধুত্ব” মানে রক্তাক্ত যুদ্ধে গঠিত বন্ধুত্ব।

 

হাজার মাইল দূরের ইন্দোনেশিয়া সফরকালে  চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর সেদেশের সংসদে একটি ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে সি চিন পিং বলেন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অতীত থেকে ‘সামুদ্রিক রেশম পথের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র’। চীন আসিয়ানের দেশগুলোর সঙ্গে সামুদ্রিক সহযোগিতা জোরদার করতে, ভালোভাবে চীন সরকারের স্থাপিত চীন-আসিয়ান সামুদ্রিক সহযোগিতামূলক তহবিল ব্যবহার করতে, সামুদ্রিক সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্কের উন্নয়ন করতে এবং যৌথভাবে একবিংশ শতকে সামুদ্রিক রেশম পথ প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছুক। প্রেসিডেন্ট সি’র এ ভাষণ ব্যাপক করতালি কুড়িয়েছিল। ভাষণের প্রশংসা  করে সেদেশের  জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষের তত্কালীন স্পিকার মারজুকি আলিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট সি ‘এক অঞ্চল এক পথ’ স্বপ্নের প্রতিষ্ঠাতা। ইন্দোনেশিয়া সফরকালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একটি জাতিগত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উপহার পেয়েছেন; সেটি হলো ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নাচের ভাস্কর্য। ভাস্কর্যে টিন লাগানো রয়েছে এবং এটি চীনামাটি দিয়ে তৈরি। নৃত্যশিল্পী অতিথিকে সংবর্ধনা জানাতে নৃত্য করেন। খুব মজার ব্যাপার হলো টিন লাগানো এবং চীনামাটি দিয়ে তৈরির কৌশল চীনা ঐতিহ্য। অতীতকালে সামুদ্রিক রেশম পথের মাধ্যমে তা ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশ করেছে।

গত ৯ বছরে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’র যৌথ নির্মাণের ফলে কাজাখস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার অনেক স্থানে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। আগে কাজাখস্তানে নৌবন্দর ছিল না। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে যোগ দেওয়ার পর দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নৌবন্দরের সঙ্গে যুক্ত হয়। অনেক কাজাখ পণ্য চীন-ইউরোপ রেলপথের মাধ্যমে চীনের লিয়ান ইয়ুন কাং থেকে সামুদ্রিক পথে অন্যান্য দেশে বিক্রি হয়েছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেকের পণ্য সেই রেলপথের মাধ্যমে কাজাখস্তান হয়ে মধ্য এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে বিক্রি হতে পেরেছে। তাতে পরিবহন ব্যয় অনেক কমেছে।

ইন্দোনেশিয়ায় দ্রুত গতির ট্রেন বহন করছে প্রযুক্তিগত কর্মচারী রান্ডি রামদানির আশা-আকাঙ্খাকে।  চীনের বিনিয়োগে জাকার্তা-বান্দুং দ্রুত গতির রেলপথ তার জন্মস্থানে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটানোর পাশাপাশি তার জীবনের আশার আলো জ্বালিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় এ রেলপথ নির্মাণকারীদের মধ্যে স্থানীয় কর্মচারীর সংখ্যা ১০হাজার জন ছাড়িয়েছে। চীনা প্রতিষ্ঠানের পরিচর্চায়  তাতে রামদানির মতো ২০০০ জন প্রযুক্তিগত কর্মচারী রয়েছে।

চীন ও কাজাখস্তানের লিয়ান ইয়ুন কাং লজিস্টিক সহযোগিতার কেন্দ্র ও জাকার্তা-বান্দুং রেলপথের মতো ‘এক অঞ্চল, এক পথ’র আওতায় অনেক দৃষ্টান্তমূলক প্রকল্প বিশ্বের উন্নয়নে নিজস্ব অবদান রাখছে।