এই 'ঐতিহাসিক' চুক্তি যেভাবে বিশ্বের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে
2022-12-22 13:38:09

ডিসেম্বর ২২: গত ১৯ ডিসেম্বর আয়োজিত জাতিসংঘের ‘জীববৈচিত্র্য কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী পক্ষগুলোর পঞ্চদশ সম্মেলন’ (কপ-১৫)-এর দ্বিতীয় পর্যায় কানাডার মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে ‘খুনমিং-মন্ট্রিল বিশ্ব জীববৈচিত্র্য কাঠামো’ গৃহীত হয়। আন্তর্জাতিক সমাজ চার বছর আলোচনার পর কাঠামোটি গড়ে তুলেছে। এতে বিভিন্ন পক্ষের যুক্তিযুক্ত ও বাস্তববাদী ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে।

কপ-১৫-এর চেয়ারম্যান ও চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশ মন্ত্রী ওয়াং রুন ছিউ বলেছেন, চার বছরের যাত্রা শেষ হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরহিস বলেছেন, অবশেষে প্রকৃতির সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতির পটভূমিতে এই ‘কাঠামো’ সাধারণত প্রকৃতি সুরক্ষার ক্ষেত্রে ‘প্যারিস চুক্তি’ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। এতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ও তার পরবর্তী সময়ে  বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য রক্ষার দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কাঠামোতে ২৩টি বাস্তব লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ল্যান্ডমার্ক তাত্পর্যপূর্ণ ইস্যু হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্তত ৩০ শতাংশ ভূমি, অভ্যন্তরীণ জলাভূমিক এবং মহাসাগর রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি। এটি ‘২০৩০ লক্ষ্য’ বলে পরিচিত। কেন ৩০ শতাংশ? কারণ ৩০ শতাংশ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন। বর্তমানে গোটা বিশ্বে সংরক্ষিত ভূমি ও জলাভূমির আয়তন যথাক্রমে মাত্র ১৭ ও ৮ শতাংশ। বিশ্লেষণে বলা হয়, এই লক্ষ্য নির্ধারণ বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য শাসনে দেশগুলোর উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে এবং এটি ব্যবহারিক ও কার্যকর। জার্মান ‘সুদ্দেউটশে জেইটুং’ (Süddeutsche Zeitung) পত্রিকার প্রকাশিত প্রবন্ধে বলা হয়, প্রজাতি ও বাস্তুতন্ত্রের অবক্ষয় বন্ধ করার জন্য পৃথিবীপৃষ্ঠের ৩০ শতাংশ রক্ষা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

তহবিল স্থানান্তর হলো ‘কাঠানো’-’র আরেকটি কেন্দ্রীয় লক্ষ্য। আলোচনার প্রক্রিয়ায় উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে প্রধান মতভেদ এ ইস্যুতেই। উন্নয়নশীল দেশগুলো মনে করে, উন্নত দেশগুলো বিশ্ব জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের জন্য দায়ী।  উন্নত দেশগুলোকে তাই  জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে, আরও সহায়তা প্রদান করতে হবে এবং অতীতের কর্মের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তবে উন্নত দেশগুলো এ দায় বহন করতে নারাজ। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত, জড়িত সমস্ত পক্ষ মতভেদ কমিয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

কাঠামো অনুযায়ী ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কমপক্ষে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল সংগ্রহ করতে হবে, যাতে জাতীয় জীববৈচিত্র্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা যায়। এর মধ্যে উন্নত দেশগুলো ২০২৫ সালের আগে প্রতি বছর উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কমপক্ষে ২০ বিলিয়ান ডলার করে দান করবে এবং ২০২৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কমপক্ষে ৩০ বিলিয়ন ডলার করে দান করবে।  যদি এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করা যায়, তাহলে কার্যকরভাবে অর্থায়নের সমস্যা দূর হবে এবং বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য একটি শক্তিশালী নিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে।

সংকটময় মুহূর্তে চীন, কপ-১৫-এর সভাপতিরাষ্ট্র হিসাবে, ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। চীন সরকার উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষাকাজে সাহায্য করতে ‘খুনমিং জীববৈচিত্র্য তহবিল’ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণা আন্তর্জাতিক সমাজে প্রশংসিত হয়েছে।

চলতি বছর হলো জাতিসংঘের ‘জীববৈচিত্র্য কনভেনশন’ গৃহীত হওয়ার ৩০তম বার্ষিকী। এ সময় বিভিন্ন পক্ষের দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছা প্রকাশের পাশাপাশি বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (ছাই/আলিম)